টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ০৪
সকাল তখন দশটা; যখন পাশা বাড়ি থেকে বের হয়। তিন্নী জন্য অনেকদিন কিছু কেনা হয় না। আর তিন্নীও ঘর থেকে বের হতে তেমন চায় না। তাই আজ পাশা ভাবে, মেসি শপিং সেন্টার থেকে তিন্নীর জন্য কিছু কিনে আনবে। পাশা যখন গায়ে জামা পরছে, তিন্নী তখন তাকে জিজ্ঞেস করে সে কোথায় যাচ্ছে। পাশা তখন বলল, ‘তোমার জন্য কিছু আনতে মেসিতে যাচ্ছি। বেশিক্ষণ লাগবে না।’ কিন্তু এখন বেলা তিনটা বাজে। পাশা ইয়োলো ক্যাবের পিছুপিছু তার গাড়ি চালাচ্ছে।
তিন্নী আবার ফোন করল। এবার পাশা তার ফোন রিসিভ করল।
‘কী হলো, তুমি ফোন ধরছো না যে। আমি তো চিন্তায় অস্থির। রাস্তাঘাটে কত বিপদ। একটু ফোন রিসিভ করলেও পারতে।’ তিন্নী মেজাজ গরম করে বলল।
‘ফোন কিভাবে রিসিভ করি? ম্যানহাটনের হাইওয়েতে জ্যামে বসে আছি। আমার রাস্তায় একটি বড় দুর্ঘটনা হয়েছে। আমার সামনে পেছনে পুলিশ, তাই ভয়ে ফোন ধরিনি। চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি। আশা করি আগামী ত্রিশ মিনিটের মধ্যে বাড়িতে আসতে পারব।’ পাশা তিন্নীকে বোঝাল।
‘ঠিক আছে। সাবধানে আসো।’ তিন্নী বলল।
পাশা মনে মনে বলল, ‘কতদূর থাকে মেয়েটি? তিন্নীকে বলেছি বাড়িতে পৌঁছতে ত্রিশ মিনিটের মত লাগবে। আর আমি এখনো এই ক্যাবের পেছন পেছন চলছি।’
এভাবে আরও দশ মাইল পেরিয়ে ওয়েচেস্টারের কোল্ড স্প্রিং নামক এক জায়গায় আসে। আগে কখনো এ এলাকায় পাশা আসেনি। মেয়েটির ক্যাব হাইওয়ে থেকে নেমে স্থানীয় রাস্তায় চালাতে থাকে। পাশা ভাবল, ‘মেয়েটির বাড়ি আর বেশি দূরে নয়।’
কিছুক্ষণের মধ্যে ইয়োলো ক্যাবটি মেয়েটিকে একটি বাড়ির সামনে নামিয়ে দিলো। পাশা তার গাড়িটি থামাল। দেখে মেয়েটি একটি ছোট্ট বাড়িতে প্রবেশ করে। পাশা সে বাড়িটির ঠিকানা ছোট্ট একটি কাগজে লিখে নেয়। এরপর পাশা ভাবে, ‘যাক, অবশেষে মেয়েটির ঠিকানা পেলাম। এখন তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে। তিন্নী আমার জন্য অনেক চিন্তা করছে।’
পাশা তার গাড়ি আবার চালু করে। দ্রুত গাড়ি চালিয়ে সে কুইন্সে পৌঁছায়। তার বাড়ি জ্যাকসন হাইটসে পৌঁছতে আর পাঁচ মিনিট সময় লাগতে পারে। হঠাৎ করে পাশা তার গাড়ির ভেতর তাকায়। কিন্তু তিন্নীর জন্য কোন পোশাক দেখে না। বাড়ি থেকে সকালে পাশা বের হয় তিন্নীর জন্য কিছু আনবে বলে। কিন্তু এখন কিছু না নিয়ে বাড়িতে গেলে তাকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। পাশা চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। সে এখন কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর রাস্তার পাশে একটি স্বর্ণের দোকান দেখতে পায়।
পাশা তার গাড়ি থামায়। পাশা স্বর্ণের দোকান থেকে তিন্নীর জন্য একটি গলার হার কেনে। এরপর বাড়ির দিকে রওনা হয়।
বাড়ি পৌঁছে সে তিন্নীকে গলার হারটি দেয়। হারটি পেয়ে তিন্নী খুব খুশি হয়। ‘তুমি না বললে মেসি শপিং সেন্টারে গিয়েছ? এ হার তো মেসির না।’ তিন্নী বলল। পাশা হঠাৎ বিব্রত হয়। কী বলবে বুঝতে পারছে না সে।
‘মেসিতে গিয়েছি ঠিক। কিন্তু তোমার জন্য কোন কিছু দেখে ভালো লাগেনি। তাই পাশের একটি স্বর্ণের দোকানে গেছি। হারটি দেখে আমার অনেক পছন্দ হয়। হারটিতে তোমাকে খুব মানাবে দেখে কিছু চিন্তা না করেই কিনেছি। গলার হারটি তোমার পছন্দ হয়েছে?’ পাশা বলল।
‘হারটি আমার দারুণ পছন্দ হয়েছে। তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। তবে তোমার পছন্দের গুণগান না করলেই যে নয়। তোমার আর যা-ই হোক, পছন্দ আছে।’ তিন্নী হেসে হেসে বলল।
‘পছন্দ হবে না? তোমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছি।’ পাশা তিন্নীর সাথে ঠাট্টা করল। এরপর পাশা হাত-মুখ ধুয়ে কিছু খেয়ে ঘুমাতে যায়।
নাইট শিফটে পাশাকে আজ ইয়োলো ক্যাব চালাতে হবে। রাত প্রায় আটটা বাজে। পাশা ঘুম থেকে ওঠে। ঘুম থেকে উঠতে আজ দেরি হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি হাত-মুখ ধুয়ে তার ইয়োলো ক্যাব নিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্যাব নিয়ে ম্যানহাটনে পৌঁছায়। ইয়োলো ক্যাবের ব্যবসা মূলত ম্যানহাটনেই হয়। পাশা যাত্রী খুঁজতে এদিক-ওদিক চালাচ্ছে। কিন্তু তার মন যেন আজ আর কর্মক্ষেত্রে নেই। পাশার শুধু মেয়েটির কথা মনে পড়ছে। আর প্ল্যান করছে কী করা যায়? কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক গাড়ি চালিয়ে পাশা ভাবে, সে এখন মেয়েটির বাড়িতে যাবে।
রাত তখন প্রায় দশটা। পাশা সেলিনার মত দেখতে মেয়েটির বাড়ির উদ্দেশে তার ইয়োলো ট্যাক্সি নিয়ে রওনা হলো। ম্যানহাটন পেরিয়ে ব্রঙ্কসে পৌঁছার পর পাশা গাড়ির ভেতর মেয়েটির ঠিকানা খুঁজতে থাকে। কিন্তু মেয়েটির ঠিকানা কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছে না। রাস্তার একপাশে তার গাড়ি থামায়। তারপর পুরো গাড়িটি তন্নতন্ন করে খোঁজে। কিন্তু মেয়েটির ঠিকানা যে কাগজে লিখে রাখে, সেটি সে খুঁজে পাচ্ছে না। পাশা একেবারে হতাশ হয়ে পড়ে। গাড়ির ভেতর মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে। রাগে-দুঃখে চিৎকার করতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর পাশার গাড়ির পেছনে পুলিশের গাড়ি এসে থামল। পুলিশের গাড়ির লাইট দেখে পাশা ভয় পেয়ে যায়। এমনিতে সে মেয়েটির ঠিকানা লেখা কাগজটি খুঁজে পাচ্ছে না। তার ওপর পুলিশের ঝামেলা। পুলিশ যদি কোন কারণে জেল-জরিমানা করে। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
‘আর ইউ ওকে? হোয়াট আর ইউ ডুয়িং হিয়ার? লেট মি সি ইউর ড্রাইভিং লাইসেন্স।’ এক পুলিশ অফিসার পাশার গাড়ির সামনে এসে জিজ্ঞেস করে। পাশা তার মানিব্যাগ খুলে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গেলে মানিব্যাগের ভেতরে একটি কাগজের টুকরা দেখতে পায়। কাগজের টুকরাটি পাশা খুলে দেখে। তার নিজের চোখ দুটিকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওই কাগজের টুকরায় মেয়েটির বাড়ির ঠিকানা লেখা আছে।
পাশা তার ড্রাইভিং লাইসেন্স আর ইন্স্যুরেন্সের কার্ড পুলিশ অফিসারকে দিয়ে বলল, ‘অফিসার, আই অ্যাম সরি। মাই কার ইজ ওভারহিটিং দেটস হোয়াই আই স্টপড ফর লিটল বিট। ট্রায়িং টু কুল মাই কার ডাউন।’ পাশার বুদ্ধিদীপ্ত কথা পুলিশ অফিসার বিশ্বাস করে। অফিসার বলে, ‘ইউ আর নট সাফোজটু স্টপ হিয়ার, বাট আই আন্ডারস্ট্যান্ড নাউ। ইজ দেয়ার এ ওয়ে আই ক্যান হেলপ ইউ?’
‘নো অফিসার, আই অ্যাম ফাইন। থ্যাঙ্কস।’ পাশা বলল।
‘ওকে, হ্যাভ এ গুড নাইট।’ বলে অফিসার চলে যায়।
পুলিশের গাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে পাশা মেয়েটির ঠিকানা তার গাড়ির জিপিএসে টিপে গাড়ি চালাতে শুরু করে।
এত রাতে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম। তাই প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে পাশা মেয়েটির বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়। মেয়েটির বাড়ির সামনে গাড়ি থামায়। তারপর বাড়ির চারিদিকে তাকাতে থাকে। কাউকে সে দেখে না। এলাকাটি অনেক নীরব। কোন সাড়া-শব্দ নেই। পাশা এক দৃষ্টিতে মেয়েটির বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। ‘ইস, একবার যদি তাকে দেখতে পেতাম, তাহলে কত ভালো হতো।’ পাশা ভাবল।
কিছুক্ষণ পর পাশা ভাবল, সে বাড়ির আশেপাশের এলাকায় গাড়ি চালিয়ে দেখবে। কোন দিন এখানে পাশা আসেনি। তাই যেই ভাবা, সেই কাজ। মেয়েটির বাড়ির আশেপাশে সে তার গাড়ি চালিয়ে কয়েকবার ঘুরে দেখে। পাশা লক্ষ্য করে নিউইয়র্ক শহরের মত এ এলাকায় কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। মনে মনে সে দারুণ খুশি হয়। তার গাড়ি নিয়ে আবার মেয়েটির বাড়ি থেকে সামান্য দূরে থামায়। পাশার আজ রাতে কাজ করতে ইচ্ছে করছে না। মনে মনে চিন্তা করে সে, মেয়েটিকে আরেকবার না দেখা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যাবে না। বাড়ি যেতে দেরি হলে হবে। ‘আজ রাত না হোক কাল দিনের বেলায় তাকে অবশ্যই দেখা যাবে। এখন গাড়িতে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া ভালো। তাহলে কালকের দিনের বেলায় অত ক্লান্ত লাগবে না।’ পাশা ভাবল। ভেবে গাড়ির ভেতর এসি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোর প্রায় চারটা বাজে। পাশা তার গাড়ির ভেতর ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ পাশা শোনে কেউ একজন তার গাড়ির উপর টোকা দিচ্ছে। পাশা জেগে ওঠে। এরপর চোখ খুলে দেখে সেলিনার মত দেখতে মেয়েটি তার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করছে। পাশা কিছু শুনতে পারছে না। তার গাড়ির জানালা নিচে নামায়।
‘আর ইউ অ্যাভেইলেবল?’ মেয়েটি পাশাকে বলল। পাশা মেয়েটিকে তার সামনে দেখে ভাবছে, হয়তো সে স্বপ্ন দেখছে।
‘হেই! আই নিড টু গো টু ম্যানহাটন। ক্যান ইউ টেইক মি দেয়ার?’ মেয়েটি খানিকটা উচ্চস্বরে বলল। এবার পাশা একটু ভয় পেয়ে যায়। সে এ মেয়ের জন্য কতই না জল্পনা-কল্পনা করেছে। কিন্তু সে যে এত সহজে মেয়েটিকে এত কাছে পেয়ে যাবে, চিন্তা করতে পারেনি।
পাশা তার গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল, ‘সিওর, প্লিজ সিট মিস।’
‘হোয়্যার এক্সাক্টলি ইন ম্যানহাটন, মিস?’ পাশা বলল।
‘ইন ফ্রন্ট অব এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং। আই হ্যাভ টু বি দেয়্যার বাই ফাইভ এএম। ক্যান ইউ ড্রাইভ অ্যাজ ফাস্ট অ্যাজ পসিবল?’ মেয়েটি বলল।
পাশা মাত্র ঘুম থেকে ওঠে। তারপর মেয়েটিকে অকস্মাৎ দেখে। মেয়েটি আবার তাকে তাড়াতাড়ি যেতে বলে। সবকিছু মিলে পাশার মাথা কেমন ঘুরছে। পাশা মেয়েটিকে বলে, ‘ওকে মিস, আই উইল টেইক ইউ দেয়্যার অ্যাজ ফাস্ট অ্যাজ আই ক্যান। ক্যান আই আস্ক হোয়াই ইউ আর আস্কিং মি টু ড্রাইভ ফাস্ট, মিস?’ পাশা ভাবল হয়তো মেয়েটিকে জরুরি কোথাও যেতে হবে। তাই সে পাশাকে দ্রুত যেতে বলল। আরও ভাবল, মেয়েটির জরুরি অবস্থা জানা দরকার। তাহলে সে হিসেব করে দ্রুত গন্তব্যস্থানে পৌঁছবে।
‘ইয়েস, ইউ ক্যান কল মি এরিকা। আই অ্যাম এ বিজিনেস ম্যানেজার অ্যাট এ কোম্পানি ইনসাইড অব এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং অ্যান্ড আই হ্যাভ এ ভেরি ইম্পর্টেন্ট মিটিং অ্যাট সিক্স। সো আই হ্যাভ টু গো দেয়্যার আরলি সো আই ক্যান প্রিপেয়ার মাইসেলফ।’ এরিকা বলল।
পাশা বুঝল, মেয়েটি অনেক শিক্ষিত হবে। না হলে কিভাবে একটি বড় কোম্পানির ম্যানেজার হয়। সে এটা শুনে আরও অভিভূত হয়। ‘ওকে এরিকা। সে নো মোর। মাই নেম ইজ পাশা, বাই দ্য ওয়ে।’ পাশা দ্রুত তার গাড়ি চালাতে থাকে। এত ভোরে রাস্তায় তেমন কোন গাড়ি নেই।
‘হোয়ার ইউ ফ্রম, পাশা।’ এরিকা বলল।
‘বাংলাদেশ, মিস। হোয়াট অ্যাবাউট ইউ?’ পাশা এরিকাকে জিজ্ঞেস করে।
‘ও, আই অ্যাম ফ্রম চিলি। আই কেইম হিয়ার অ্যাজ এ চাইল্ড উইথ মাই পেরেন্টস।’ এরিকা বলল। এরিকার কথা শুনে কেন জানি তার মনটি খারাপ হয়ে গেল। সে আগে ভেবেছে মেয়েটি ভেনেজুয়েলার। এখন সে বলছে, মেয়েটির জন্মস্থান চিলি। ছোটবেলায় বাবা-মার সাথে সে আমেরিকায় এসেছে। পাশা ভাবল, সেলিনা তো ভেনেজুয়েলার ছিল। কিন্তু এরিকার চিলিতে জন্ম।
চিলিতে জন্ম হলেও এরিকা দেখতে হুবহু সেলিনার মত। প্রথমে পাশার চিলির কথা শুনে মনটি খারাপ হলেও পরে ভাবে, সে দেখতে সেলিনার মত- এটাই তার জন্য যথেষ্ট। পাশা এরিকাকে চায়। যেমন সে সেলিনাকে মরুভূমির মধ্যে একা পেয়েছে। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব সে ভাবতে থাকে। আর দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। হঠাৎ সে দেখতে পারে তার গাড়ির গ্যাস লাইট জ্বলছে। গাড়ির গ্যাস প্রায় শেষ হয়ে আসছে। ‘আই নিড টু গেট গ্যাস, এরিকা। শুড নট বি টু লং।’ পাশা বলল।
‘ওকে, নো প্রবলেম।’ এরিকা বলল।
কিছুক্ষণ পর পাশা রাস্তার পাশে একটি গ্যাস ফিলিং স্টেশন দেখতে পেল। গ্যাস স্টেশনে গিয়ে পাশা তার গাড়িতে গ্যাস পুরতে শুরু করে। গ্যাসের মেশিনের পেছনে সে একটা ইটের টুকরা দেখতে পায়। পাশা ওই ইটের টুকরা নেবে বলে ভাবছে। ‘কিন্তু এরিকা যদি সেটি নিতে দেখে, তাহলে কী হবে?’ পাশা এরিকার দিকে তাকায়। দেখে এরিকা তার ফোনে কিছু একটা দেখছে। এর ফাঁকে পাশা লুকিয়ে ইটের টুকরাটি তার গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্ক খুলে রেখে দেয়। পাশার গ্যাস নেওয়া শেষ হলে গাড়িটি চালু করে।
পাশা যদিও গ্যাস মেশিনের পেছন থেকে ইটটি নেয়। কিন্তু সে ভাবছে, কিভাবে কী করবে? জীবনে একজন মানুষকে খুন করা দূরের কথা, সে কখনো একটা হাঁস ও মুরগি জবাই করেনি। কিন্তু তার মনের মধ্যে এরিকাকে একাকী নিজের কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল। রাস্তার চারিদিকে কেমন নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে রাস্তার দু’পাশে হরিণগুলোকে ঘাস খেতে দেখা যায়। আবার গাড়ির লাইট তাদের চোখে পড়লে দৌড়ায়। গাড়ি কিছুক্ষণ চালাতে চালাতে হঠাৎ গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে আসে। পাশা তার গাড়ি রাস্তার পাশে থামায়।
এরিকাকে পাশা বলল, ‘মিস, সামথিং রং উইথ মাই কার। আই অ্যাম সিওর ইটস নট সিরিয়াস। লেট মি চেক ইট আউট।’
‘ও, ওকে।’ এরিকা হতাশার সুরে বলল।
পাশা গাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ির ইঞ্জিনের সবকিছু দেখার চেষ্টা করে। পাশা চারিদিকে তাকায়। এত ভোরে রাস্তায় তেমন কোন গাড়ি নেই। পাশার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। সে ভাবছে, এরিকাকে পুরোপুরি তার নিজের করতে এটাই প্রকৃত সময়। আজ যেন প্রকৃতি চিৎকার করে পাশাকে বলছে, ‘পাশা, নে তোর মনবাসনা পূর্ণ করে নে।’ পাশা জীবনে বহু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কখনো সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিশ্চিত ছিল, আবার কখনো ছিল না। কিন্তু আজ এরিকাকে নিজের মত করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার ব্যাপারে সে শতভাগ নিশ্চিত। গাড়ির ইঞ্জিনে একটি তার বিচ্ছিন্ন ছিল। পাশা সেটা লাগানোর পর গাড়ি ঠিক হয়ে যায়। পাশা কিন্তু এরিকাকে সেটা বলেনি। পাশা তার গাড়ির ট্র্যাঙ্ক উঠিয়ে ইটটি নেয়। ইটটি হাতের কাছে রেখে পাশা তার গাড়ির ইঞ্জিনের সামনে বসে। এমন ভাব করে যে, পাশা এখনো গাড়ি ঠিক করার চেষ্টা করছে। পাশা মনে মনে ঠিক করে, এরিকা গাড়ি থেকে বের হলেই ইট দিয়ে এরিকার মাথায় আঘাত করবে।
গাড়ির পেছনের সিটে বসে এরিকা তার মুঠোফোনের ঘড়ির দিকে বারবার তাকাচ্ছে। আর গাড়ির বাইরের দিকে দেখার চেষ্টা করছে। এরিকার আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে। দেরি করা যাবে না। মিটিংয়ে যেতে দেরি হলে তার বিরাট সমস্যা হবে। কিছুক্ষণ পরে এরিকা গাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশার সামনে আসে। এই সেই মুহূর্ত, যার জন্য পাশা এতক্ষণ অপেক্ষা করছে।
‘আর ইউ ডান রিপেয়ারিং দ্যা কার? আই হ্যাভটু গো। আই উইল বি লেইট টু মাই মিটিং টুডে।’ এরিকা বলল। পাশা ইটটি তার হাত দিয়ে স্পর্শ করে। তার মনে শুধু এরিকাকে নিয়ে স্বপ্ন খেলা করছে। তাই এতক্ষণ এরিকা যা যা বলল পাশা তার কিছুই শোনেনি। এবার এরিকা জোরগলায় বলল, ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড? টেল মি সামথিং!’
পাশা ইটটি হাতের উপর নিয়ে আবার মাটির উপর আস্তে করে রাখে। ‘ও সরি, প্লিজ গিভ মি ফাইভ মোর মিনিটস মিস। ইট সুড বি কমপ্লিট বাই দেন।’ পাশা বলল।
‘আ… ওকে।’ এরিকা হনহন করে গাড়ির ভেতর আবার বসে। এদিকে পাশার নিজের প্রতি বিরক্ত আসে। এত কাছে পেয়েও সে এরিকাকে নিজের মত করতে পারেনি। কেন, কী হচ্ছে, সে কিছুই বুঝতে পারছে না। এরিকার জন্য সে কতই না প্ল্যান করে। কিন্তু শেষ অবধি বুঝি আর কিছুই হবে না। মনে মনে সে হতাশ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গাড়িটি অনেক আগেই ঠিক হয়ে আছে। এখনো সে গাড়ি মেরামত করার ভান করে ইঞ্জিনের সামনে বসে আছে। আর ভাবছে, ‘আহা... আর বুঝি হলো না।’
চলবে...
এসইউ/এমএস