অনাহূত আগন্তুক ও অন্যান্য কবিতা
অনাহূত আগন্তুক
তোমার হাতের মুঠোয়
আমার সতেজ রক্তস্নাত হৃৎপিণ্ড দিয়ে বলেছিলাম—
বুকের কোণে একখণ্ড জমি দিও।
তুমি হেসে বলেছিলে—
হাজার বছরের পতিত জমিতে
একটিবার পড়েনি লাঙলের আঁচড়,
অভিমানী মেঘ থেকে
ঝরেনি একবিন্দু জল,
শুষ্ক, রুক্ষ্ম আর খরাময় মাটির বুকে
লাগেনি কোন আগন্তুকের মায়াবী স্পর্শ।
তুমি নিতে পারো—
যদি বৃষ্টিহীন খরার বুকে ফলাতে পারো
সবুজের অভয়ারণ্য!
আমি চোখের নোনা রক্তে ভিজিয়েছিলাম
চৈত্রের খরতাপে চৌচির সেই জমি,
তীব্র দাবদাহে মাথায় কাফন বেঁধে
জুড়েছিলাম লাঙল-জোয়াল,
হৃদয়ের নিড়ানিতে উপড়েছিলাম
অহেতুক আঁকড়ে থাকা দুর্বাঘাস।
রক্তস্নাত হৃৎপিণ্ডের নিশ্বাসে জুগিয়েছিলাম
দক্ষিণা শীতল বাতাস,
চরম বৈরিতায় মৃত্যুকে
আলিঙ্গন করে বপন করেছিলাম
রক্তকণিকা থেকে উৎসারিত বীজ,
তোমার প্রাণহীন বুকে লেগেছিল
চিরসবুজের ঢেউ। তারপর—
আমাকেই ছুঁড়ে ফেলেছো অজানা পথে
তোমার সবুজের সাথে কেবল আগাছার বসবাস।
আর আমি আজ
তোমার জীবনে এক অনাহূত আগন্তুক মাত্র।
ভালোবাসার মহাকাব্য
তোমাকে নিয়ে ভালোবাসার
একটি কবিতা লিখব বলে—
কাটিয়েছি কত সহস্র রাত!
একাকী নিদ্রাহীন;
আজও লেখা হয়নি একটি অক্ষর,
লিখতে চাইলেই অক্ষরগুলো
লজ্জায় আড়ালে মুখ লুকায়,
মেঘের ডানায় চড়ে পালিয়ে বেড়ায়
নীল আকাশের দূর সীমানায়!
ভালোবাসি শব্দটি লিখতে চাইলেই
কলমের বিদ্রোহে নত হয় সব্যসাচী হাত
অবশ ও শক্তিহীন হয় তেজোদীপ্ত আঙুল
বিদ্রুপে মেতে ওঠে প্রাণহীন খাতার পাতা!
ভালোবাসি কথাটি লিখতে চাইতেই
মস্তিষ্কের নিউরনে বাঁধে তালগোল
থমকে যেতে চায় ধমনীর প্রবাহ, আর
শিরা-উপশিরায় বয়ে চলে ঝড়!
ডাগর চোখে কাজলের কথা লিখতে চাইতেই
অবরোধ ডাকতে চায় চিত্রা হরিণের দল!
মুখের কারুকার্যের কথা লিখতে চাইতেই
নশ্বর পৃথিবীতে ফিরতে চায় কবি জীবনানন্দ!
নীল টিপ আর নীল শাড়ির কথা লিখতে চাইতেই
আকাশের নীল পরীরা বসত গড়তে চায় জমিনে!
বুকের জমিনে স্পর্শের কথা লিখতে চাইতেই
পাহাড়-পর্বত নেমে আসতে চায় এই সমতলে!
স্ফূলিঙ্গের মতো কামনার কথা লিখতে চাইতেই
আগ্নেয়গিরির লাভা হতে চায় শীতল বরফ!
কাব্যের নান্দনিকতায় সাজাতে চেয়েছিলাম
মনের অব্যক্ত পঙক্তিমালা;
আজও লেখা হয়নি প্রণয়ের সেই কাব্য!
আমি ক্লান্ত হয়ে অবশেষে বুঝেছি
আমাদের ভালোবাসা ধারণের ক্ষমতা
এই বিশ্বের কারোরই নেই!
যদি কখনো তোমার সাথে ফের দেখা হয়
পথে-প্রান্তরে, হাট-বাজারে, মসজিদ-মন্দিরে,
জলে কিংবা আকাশে-
বুকের বাঁ-পাশে সজোরে জড়িয়ে
অকপটে ধ্বনিত হবে যে শব্দটি
তাতেই রচিত হবে
ভালোবাসার সেই অমর মহাকাব্য!
শুধু চেয়েছিলাম
আমি কখনোই তোমার কাছে একটি নিষিদ্ধ রাত চাইনি।
চাঁদের মতো কপালে চুমু খাওয়ার ইচ্ছাও ছিল না,
চুল সরিয়ে কানের কাছে হাত বোলানোর
মানসিকতা জন্মায়নি একবারও—
শুধু চেয়েছিলাম তোমার সিঁদুরের লাল রঙের সাথে নির্মল বন্ধুত্ব!
যে রঙের কাছে অনায়াসে নত হবে ধর্মের বেরঙ।
আমি কখনোই তোমার উষ্ণ ঠোঁটের আর্দ্রতা হতে চাইনি।
চাইনি জিহ্বার আলিঙ্গনে নিমিষেই নিঃশেষ হোক
আজন্মের লালিত অহংকার,
ফুটন্ত পদ্মের প্রতি ছিল না অযাচিত আদরের অপচেষ্টা—
শুধু তোমার শাড়ির সোনালি সেফটিপিন হতে চেয়েছিলাম!
যে সেফটিপিনে আমৃত্যু আটকে থাকবে ভালোবাসার পবিত্র বন্ধন।
আমি কখনোই তোমার শরীরের ভাঁজে আনন্দের উপলক্ষ হতে চাইনি।
চাইনি হাতের স্পর্শে কলঙ্কিত হোক কোনো শিরা-উপশিরা,
শুধু তোমার কোলে মাথা রেখে কাটাতে চেয়েছিলাম একটি পূর্ণিমা রাত!
যে রাতের কাছে বিলীন হবে হাজারও রাতের আঁধারের দীর্ঘশ্বাস।
তখন ভালোবাসবে তো আমায়
তোমাকে ফুল দিয়ে বলেছিলাম, ভালোবাসি।
যদি ভালোবাসো তবে—
একটা সাজানো গোছানো ছোট সংসার হবে
ছোট টিনের চৌচালায় গড়ব প্রেমের সাম্রাজ্য
চড়ুই পাখির কানাকানিতে হিংসে ছড়িয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী
এক কাপ চায়ের আধাআধি চুমুকে কাটবে সারাটি জীবন
শীতের ভোরের শিশিরে আলতো পা ভিজিয়ে
কান পেতে শুনব সমুদ্রের গর্জন।
আমাদের টানাপড়েনের সংসারে আসবে পৃথিবীর অবাক বিস্ময়!
যদি ফুলের ভালোবাসা ফিরিয়ে দাও
আর আমার যদি কখনো পকেট ভারি হয়—
তাজমহল দেখাতে নিয়ে যাব
ডলার-পাউন্ড ছড়িয়ে প্রেমের বিজ্ঞাপনে আলোড়িত করব মহাবিশ্ব
গ্রে-বিচের নীল জল আর সাদা বালিতে স্নান করাতে নিয়ে যাব
আরমানির বেলকনিতে বসে পান করব ব্ল্যাক আইভোরি
তখন ভালোবাসবে তো আমায়?
বিএ/এসইউ/এমকেএইচ