সুভাষ সরকারের তিনটি কবিতা

হিয়া-ডাক
আমরা কি রাতের সর্বস্ব কেউ কোনদিন কুড়িয়ে পেয়েছি?
যে রমণী সারারাত ঘুমিয়ে কাটালো, যার চোখে
অন্ধকার চিরকাল কালো,
সে কি নৈশচরাচরে অনুভব করে রাজবিষাদের
শুদ্ধতম আলো?
তবু,
অসহ বেদনা বুকে আঁধার-আলাপে শুধু হিয়া-ডাক শুনি
নিখিলের বাতাসে জড়ানো।
****
বিনির্মাণ
আমার শরীর সেই কবে পুড়ে ছাই হয়ে
গঙ্গাপাড়ে জমেছে কোথাও।
এতদিনে মাটি।
যে-কাঠামো বয়ে নিয়ে এখনো মানুষ,
এ-হৃদয় বাসযোগ্য নয় তার। এ-হৃদয় খাঁটি।
মহামৃত্যুকালে দুফোঁটা চোখের জলে বসন্ত সাজিও তুমি,
শব্দে নয়, উচ্চারণে না, স্মরণে তা হোক পরিপাটি।
****
অণুকথার আলাপ
১.
আকাশের অনেক উপরে আরেক আকাশ। তার কিছু রহস্য-আভাস
খুঁজে পায় যাঁরা, তাঁরাই সন্ধানী। ওই মহাকাশে
মৃত বিরহীরা সব হাত ধরাধরি করে হাঁটে। একমাত্র
আত্মঘাতী যারা, তারাই একক গায়
বিষাদের গান।
অতি তুচ্ছ সাধারণ আমি। তবুও নদীর মতো
সমুদ্রের প্রেমাকাঙ্ক্ষী হয়ে নাসারন্ধ্রে পাই মোহনার ঘ্রাণ।
২.
যেদিন অনেক বলি, শুনি কম, সেইদিন ভ্রমণের ইচ্ছেগুলো বাড়ে
আপনার হাতে গড়া দ্বীপের প্রান্তরে।
যেইদিন আপনি বলেন আর আমি শুনি, সেইদিন স্বেচ্ছাধীন
নীরবতা খুঁজি
অমৃতের সন্ধানে। অণুপরমাণু সব
আলাপে ও বিস্তারে।
৩.
আজ নয়, কাল না, কোনদিনও যা হবার নয়,
তাকে নিয়ে মিথ্যে ভাবি, হৃদি ছাড়খাড়।
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও যার
ব্যতিক্রম নন।
এই সত্য মিথ্যে হয় জলবিম্ব হয়ে যদি জলেতেই
অনন্ত ভ্রমণ।
এসইউ/এমএস