সঙ্গী পরকীয়ায় জড়িয়েছেন কি না বুঝবেন যেভাবে
মামুন রাফী
সম্পর্কের ঘরবাড়ি এমন যে, কখন যে তাতে নোনা ধরে বলা কঠিন। আচমকাই দেখা যায় খসে পড়ছে পলেস্তার। তখন অনেক মেরামতির চেষ্টা করেও আর কিছু করা যায় না। ফলে অবধারিত ভাঙন। বিচ্ছেদ ও যন্ত্রণা।
তবে কোনো কি উপায় নেই, যা দেখে আপনি আগেভাগেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পারবেন? হয়তো প্রাত্যহিকতার অভ্যাসে নিজেদের সম্পর্কের দিকে ভালো করে না তাকানোর ফলেই এই দুরবস্থা ঘটে। তাই গোড়াতেই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।
আরও পড়ুন: সঙ্গী পরকীয়ায় জড়ায় কেন?
এদিকে ব্যস্ত কর্পোরেট দুনিয়ায় পরকীয়ার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। পুলিশের দ্বারস্থ হওয়াই যায় এ বিষয়ে, কিন্তু তাতে তো কাচের গায়ে ফাটলের দাগ মোছা যায় না।
তাই সম্পর্ক বাঁচাতে হলে আগে তার ভাঙনের লক্ষণগুলোও জেনে রাখা উচিত। তা কী কী লক্ষণ দেখে বুঝবেন যে আপনার সঙ্গী পরকীয়ায় লিপ্ত? তার কয়েকটি তুলে ধরা হল এখানে. . .
আকস্মিক ব্যবহারে পরিবর্তন
খুব চেনা কাছের মানুষটির ব্যবহারে যদি আকস্মিক কোনো পরিবর্তন আসে তবে সন্দেহের কারণ আছে। ধরা যাক, যিনি পারিবারিক ব্যাপারে বরবারই ইনভলভড, তিনি যদি উল্টোটি করেন তাহলে বুঝতে হবে কোনো আকস্মিক কোনো নতুন ঘটনা ঘটছে তার জীবনে।
আরও পড়ুন: ব্রেকআপের কষ্ট ভুলতে করণীয় কী?
আর পরিবারের প্রতি উদাসীন লোকও যদি আচমকা আগ্রহী হয়ে ওঠেন তাহলেও সন্দেহের অবকাশ আছে। সঠিক পর্যবেক্ষণই এই ব্যবহারিক পরিবর্তন গোচরে আসতে পারে।
কম সময় কাটানো
মূলত হতাশা, একাকিত্ব, একঘেয়েমি বা যৌনতায় অপূর্ণতাবোধ থেকেই মানুষ সম্পর্কে থাকাকালীনও নতুন সম্পর্কের দিকে ঝোঁকেন।
তাই কেউ যদি সঙ্গীর সঙ্গে কম সময় কাটান তাহলে বুঝতে হবে এই সমস্যাগুলোর কোনো একটিতে তিনি ভুগছেন। সেখান থেকেই নতুন সম্পর্কের অঙ্কুরের সম্ভাবনা দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ডিপ্রেশনের লক্ষণ কী কী?
গোপনীয়তা
প্রত্যাশিতভাবেই কেউই তার পরকীয়ার খবরটি পরিবারের সামনে আনতে চান না। তাই যদি দেখা যায় কেউ নানা সাধারণ বিষয়ও কাছের মানুষের থেকে লুকাচ্ছেন, তাহলে বুঝবেন তার পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
এছাড়া এক সম্পর্কে থাকাকালীন অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার অপরাধবোধও কোনো ব্যক্তির অবচেতনে থাকে। এর থেকেও আসে গোপনীয়তা বা যে কোনও কিছু লুকিয়ে যাওয়ার প্রবণতা।
সন্দেহজনক ফোন
সাধারণত সঙ্গী ফোনে কী ধরনের কথা বলেন বা কোন স্বরে কথা বলেন তা কারও অজানা নয়। তবে আচমকা যদি এতে পরিবর্তন আসে তবে সন্দেহ জাগা অমূলক নয়।
আরও পড়ুন: স্বামী আপনাকে ভালোবাসেন বুঝবেন যে লক্ষণে
যদি বিশেষ বিশেষ কোনো ফোন কলের ক্ষেত্রে সঙ্গী নিচু স্বরে কথা বলেন, যাতে অন্য কেউ তা জানতে না পারেন এরকম স্বর বজায় রাখেন, তবে পরকীয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
রাত করে ফেরা বা ঘনঘন ট্রিপ
কোনো পরিকল্পনা নেই। আগে থেকে জানানোও নেই। অথচ বিশেষ দরকারে সঙ্গী বাইরে যাচ্ছেন। হয়তো অফিসের কাজের কথা বলেই। এ জিনিস যদি বারবার ঘটতে থাকে তবে সন্দেহ হতেই পারে।
সাধারণত কাজের সময় অনুযায়ী বাড়ি ফেরার সময়ও মোটামুটি নির্ধারিত থাকে। দু-একদিন তার ব্যতিক্রম থাকে। কিন্তু ক্রমাগত যদি এ নিয়ম ভাঙতে থাকে, তবে পরকীয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
আরও পড়ুন: জীবনসঙ্গী হিসেবে যে কারণে সেরা হন বইপ্রেমীরা
অকারণ ব্যাখ্যা দেওয়া
কোনও কিছু না জিজ্ঞেস করতেই ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা যদি দেখা যায় সঙ্গীর আচরণে, তবে সন্দেহের অবকাশ আছে।
আসলে অপরাধবোধ থেকে বা তিনি যে কোনো খারাপ কাজ করছেন না, তা প্রতিপন্ন করতেই এ কাজ করে থাকেন পরকীয়ায় লিপ্ত মানুষরা। তাই এ বিষয়ে আগেই সতর্ক থাকা উচিত।
নিজের প্রতি বিশেষ নজর
নিজের খেয়াল রাখা খারাপ কিছু নয়। তবে প্রতিটি মানুষ কতটা নিজের খেয়াল রাখেন তা তার কাছের মানুষ জানেন। এতে আচমকা পরিবর্তন এলে ভাবনার বিষয় আছে।
যদি দেখেন সঙ্গীর অভ্যাস বা পোশাকে দ্রুত বদল আসছে, তাহলে বুঝতে হবে তার মধ্যে বড় পরিবর্তন এসেছে। তিনি অন্য কারও পছন্দ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন!
আরও পড়ুন: স্ত্রীর চোখে স্বামী হিসেবে সেরা যেসব পুরুষ
বিরক্তি-খিটখিটে মেজাজ
সংসারের দৈনন্দিনতায় আক্রান্ত হয়ে মেজাজ খারাপ কারও হতেই পারে। সে সমস্যা প্রতি সম্পর্কে দেখা দেয়। আমার সম্পর্কে থাকা মনুষরা তা নিজেদের মতো করে মিটিয়েও নেন।
তবে এর অন্যথা হলে ভাবনা আছে। যদি সঙ্গী আপনার উপর ক্রমাগত খিটখিটে ব্যবহার করেন, মেজাজ হারান বা বিরক্তি প্রকাশ করেন তাহলে বুঝতে হবে অন্য কোনও সম্পর্কে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন।
অর্থাৎ মূলত ব্যবহারিক পরিবর্তনটাই মুখ্য। আচার-আচারণ, রুচি, ব্যবহার, যৌনতায় যদি স্বাভাবিকের থেকে বেশি ও দ্রুতহারে পরিবর্তন আসে তবে পরকীয়ায় লিপ্ত থাকার সম্ভাবনা জোরদার।
প্রতিটি সম্পর্কে সঙ্গী এক অপরকে যে মাত্রায় চেনেন, সেভাবে অন্য কেউ চেনেন না। আর তাই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিবশতই একজন বুঝতে পারেন, তার সঙ্গী কতটা তার আছেন আর কতটা নেই।।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
জেএমএস/জিকেএস