আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত কি না বুঝবেন যেভাবে
মোঃ বিল্লাল হোসেন
মানসিক অবসাদ বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক সমস্যা। পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ মানুষই এখন নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। তবে বেশিরভাগ মানুষ নিজেরা বুঝতেই পারেন না যে তারা আসলেই মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
ফলে তারা আরও বেশি মানসিক অবসাদে পড়েন। এমনকি আত্মহত্যাও করে বসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেশি। কারণ বিভিন্ন কারণে তাদের বেশিরভাগই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলে একজন ব্যক্তির মধ্যে নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তার মধ্যে যেসব লক্ষণগুলো খুব বেশি দেখা যায় সেগুলো হলো-
>> আপনার যদি নিয়মিত বিরতিতে মাথাব্যাথা হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল না। বলা চলে মাথাব্যাথা মানসিক অবসাদগ্রস্ততার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।
>> এমনকি প্রায় সময়ই যদি আপনার ঘাঁড় ও কাঁধে ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।
>> আবার কেউ যদি নিয়মিত বিরতিতে ব্যাক পেইনের সমস্যায় ভোগেন তাহলে ধরে নিবেন আপনি মানসিক অবসাদগ্রস্ত। যদিও অন্য বিভিন্ন কারনে ব্যাক পেইন হতে পারে।
>> আপনার যদি খাবারে অরুচি থাকে ও ক্ষুদা একদম কমে যায় তাহলে বুঝবেন মানসিক আপনি সমস্যার মধ্যে আছেন।
>> খাবার খেলে যদি ঠিকভাবে তা হজম না হয় তাহলেও তা অবসাদগ্রস্ততার উপসর্গ হিসেবে প্রকাশ পায়।
>> গলায় থলির মত কিছু জমে আছে বলে মনে হওয়ার সমস্যাও কিন্তু মানসিক সমস্যার জানান দেয়। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় এমনটি হয়।
>> প্রায় সময়ই বুক ভারি হয়ে থাকার লক্ষণও কিন্তু ভালো নয়। এটিও হতে পারে মানসিক অবসাদের লক্ষণ।
>> মানসিক অবসাদ বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মাংসপেশি অনেক বেশি দৃঢ় হয়ে যায় ফলে স্বাভাবিক নড়াচলা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
কীভাবে মুক্ত হবেন এই মানসিক অবসাদগ্রস্ততা থেকে?
>> প্রতিদিন সুষম খাবার খেতে হবে যাতে করে সঠিক পরিমানে পুষ্টি নিশ্চিত হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবারে বৈচিত্র্য থাকে ও খাবারগুলো ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ হয়।
>> রিফাইন্ড সুগার বা পরিশোধিত চিনি খাওয়ার পরিমান কমিয়ে দিতে হবে।
>> আদর্শ ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে ও নিয়মিত শরীরচর্চা (কার্ডিওভাস্কুলার, স্ট্রেংথ ট্রেইনিং ও স্ট্রেচিং) করতে হবে।
>> প্রতিদিন সঠিক সময়ে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
>> কাজের ফাঁকে বিরতি নিতে হবে মনকে প্রফুল্ল রাখার জন্য।
>> নিজেকে ভালবাসতে হবে ও নিজের জন্য সময় বরাদ্দ রাখতে হবে।
>> বিনোদনমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে।
>> অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
>> নিজের সাফল্য অনুযায়ী নিজেকেই পুরস্কৃত করুন।
>> প্রতিদিন প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ুন। কেননা মানসিক অবসাদ কমানোর অন্যতম একটি হাতিয়ার হলো প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো।
>> মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হবে ও অন্যকে সহায়তা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে।
>> নেতিবাচক চিন্তাধারা পরিহার করতে হবে। ইতিবাচক চিন্তাধারাকে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
>> নিজের সীমাবদ্ধতাগুলো চিহ্নিত করতে হবে ও সেগুলো দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> যে কোনো নিদ্ধান্ত নিন ভেবেচিন্তে।
>> নিজের প্রতি আস্থাশীল থাকুন।
>> সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
জেএমএস/জিকেএস