এক আমের খোসায় ১০ রোগের সমাধান!
আম একটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফল। বাজারে সবে কাঁচা আম উঠতে শুরু করেছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই পাকা আমের গন্ধে ভরে উঠবে ফলের বাজার। সাধারণত আমের খোসা ফেলে ভেতরের কাঁচা বা পাকা রসালো অংশ আমরা খেয়ে থাকি।
তবে ফেলে দেওয়া আমের খোসা স্বাস্থ্যের হন্য কতটা উপকারী তা কি জানেন? শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা এমনকি নানা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে আমের খোসায় থাকা পুষ্টিউপাদানসমূহ।
আমের খোসায় থাকে ফেনোলিক যৌগ, ক্যারোটিনয়েড ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগসমূহ। আরও অন্যান্য যৌগগুলোর মধ্যে রয়েছে- রেসভেরাট্রল, ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ও আয়রন।
ম্যাঙ্গিফেরিন, একটি পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমের খোসার প্রধান সক্রিয় যৌগ। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক এক আমের খোসা যেভাবে ১০ রোগের সমাধান করে-
হার্টের জন্য ভালো
গবেষণায় বলা হয়েছে, আমের খোসা ক্যারোটিনয়েড ও ফেনোলিক্সের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। যা হৃদরোগের মতো রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগগুলো শরীরের ফ্রি রেডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এমনকি স্থূলতার সমস্যার সমাধান করে।
ক্যানসার প্রতিরোধক
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমের খোসায় থাকা ফেনোলিক অ্যাসিড ও ফ্ল্যাভোনয়েড ক্যানসার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় আমের খোসা।
এতে থাকা পুষ্টিগুণ ক্যানসার কোষের বিস্তার ও টিউমারের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। আমের খোসার মধ্যে থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার যেমন- কোলন ক্যানসারের বিরুদ্ধেও প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব দেখায়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো
আমের খোসায় থাকে ডায়েটারি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শক্তিশালী অ্যান্টি-ডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী বলে বিবেচিত। আমের খোসা খেলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধি রোধ করা যায়। এমনকি অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতিও রোধ করা যায়। অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে যা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ওজন কমায়
পেকটিন আমের খোসায় পাওয়া একটি অনন্য ফাইবার। পেকটিন স্থূলতার ঝুঁকি কমায়। উচ্চ প্রোটিন খাবারের তুলনায় আমের খোসা খাওয়ার মাধ্যমে ক্যালোরির সংখ্যা কমাতে পারবেন। কারণে আমের খোসায় থাকা পেকটিন ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভালো
আমের খোসা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। একটি আমে ১৮-২৫৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে। যা ইমিউন সিস্টেমের কার্যকারিতার জন্য একটি দুর্দান্ত পুষ্টি। এটি অভিযোজিত ও সহজাত ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কিত বিভিন্ন সেলুলার ফাংশনের উন্নতি ঘটায় ও শরীরে প্রবেশকারী রোগজীবাণু থেকে রক্ষা করে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী
ভিটামিন ই ত্বক ও চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমের খোসা, বিশেষ করে পাকা আম এই ভিটামিনে ভরপুর। এটি ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মির কারণে ত্বকের ক্ষতি কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এই ভিটামিন ত্বকের বার্ধক্য ও প্রদাহকেও ধীর করে দেয়। আমের খোসা খেলে চুল বড় হয় ও মাথার স্ক্যাল্পেও উন্নতি ঘটে।
অ্যালঝাইমারের ঝুঁকি কমায়
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস আলঝেইমারের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। আমের খোসায় থাকা ম্যাঙ্গিফেরিন, একটি সক্রিয় ফাইটোকেমিক্যাল। এটি আলঝাইমার ও অন্যান্য অক্সিডেটিভ-স্ট্রেস সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে
আমের খোসায় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ক্রিয়াকলাপ আছে। যা ইকোলি ও সালমোনেলার মতো ব্যাকটেরিয়া ও অ্যাসপারগিলাস নাইজারের মতো ছত্রাক প্রতিরোধে সহায়তা করে।
অন্ত্র সুস্থ রাখে
আমের খোসায় প্রিবায়োটিকও থাকে। যা অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। শুকনো আমের খোসায় প্রায় ৪০ শতাংশ ফাইবার থাকে। আর তাজা আমের খোসার এর চেয়েও বেশি ফাইবার থাকে।
ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে
আমের খোসায় থাকা ভিটামিন ই ক্ষত নিরাময় করে। পোড়া ও অস্ত্রোপচারের ক্ষত সারাতেও সাহায্য করে। তবে আমের খোসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। এর খোসায় উচ্চ পরিমাণে একটি যৌগিক উরুশিওল থাকে, যা মারাত্মক অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। উরুশিওলের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে চুলকানি, লালভাব, ফোসকা ও ত্বকের ফোলা অন্তর্ভুক্ত।
আমের খোসা প্রসাধনী শিল্পে অ্যান্টি-এজিং পণ্য তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়। রান্নাতেও আমের খোসা ব্যবহার করতে পারেন। তবে যদি কেউ এটি সরাসরি সেবন করেন তবে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন।
এর খোসা ভালোভাবে ধুয়ে সেবন করুন। আমের খোসার গুঁড়া নিয়মিত খেতে পারেন। শারীরিক কোনো জটিলতা থাকলে আমেকর খোসা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
জেএমএস/জিকেএস