ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায় জানালেন ব্রিটিশ চিকিৎসক
বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। জীবনযাত্রার অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শরীরচর্চার অভাব এই রোগের মূল কারণ।
টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা নিয়ম মেনে চললেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেন। তাদের ইনসুলিনের প্রয়োজন হয় না।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলো জীবনধারার রোগ। এর জন্য দায়ী হলো ওজন বৃদ্ধি, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। প্রাথমিক অবস্থায় যদি এটি চিকিৎসা করা না হয় তাহলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের এক চিকিৎসকের দাবি, ডায়েটে একটি মাত্র পরিবর্তনের মাধ্যমেই তিনি বিপুল সংখ্যক রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করেছেন। (ইউকে ডেইলি’র রিপোর্ট)
সাউথপোর্টের নরউড সার্জারির চিকিৎসক ডেভিড উনউইন বলেন, ‘২০১২ সালের আগ পর্যন্ত টাইপ ২ ডায়াবেটিস ওষুধ ছাড়া নির্মূল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই পারিনি।’
‘তবে এই রোগ থেকে বাঁচতে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ গ্রহণের বিষয়টি মানতে পারছিলাম না। এরপর আমি ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নির্মূলের বিষয়ে অধ্যায়ন শুরু করি।’
ডা. উনউইনের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দ্রুত কাজ করে। এই উপায়ে ১০০ জনেরও বেশি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগী রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনতে পেরেছি।’
২০১৯ সালে ‘ব্রিটিশ জার্নাল অব জেনারেল প্র্যাকটিস’এ লো-কার্বোহাইড্রেট ডায়েট কীভাবে ওষুধ ছাড়াই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সে বিষয়ে একটি ব্যবহারিক গাইডলাইন সম্পন্ন করেন ডা. উনউইন। তার গবেষণাপত্রটি গাইডলাইনস ইন প্র্যাকটিস সাইটেও প্রকাশিত হয়েছে।
ডা. উনউইনের সমীক্ষা অনুযায়ী, চিনি, শষ্য, মিষ্টিজাতীয় কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিবর্তে প্রতিদিনের ক্যালোরির চাহিদা মেটাতে প্রোটিন ও চর্বিজাতীয় খাবার খেলে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসবে ডায়াবেটিস।
একটি নো-কার্ব ডায়েটে আপনি খুব কম পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট খেতে পারবেন। শুধু সবজি থেকে যতটুকু কার্ব পাওয়া যায় ততটুকুই। কারণ কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করা অর্থাৎ চিনির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে আনলে ডায়াবেটিসও কমে আসবে।
এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন ১৩৫৭ জন। সমীক্ষায় ২৩টি র্যান্ডম ট্রায়ালের ডেটা ব্যবহার করা হয়। অংশগ্রহণকারীদেরকে ৬ থেকে ১২ মাস পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাদের ডায়াবেটিস ও ওজনের পরিমাণ যাচাই করা হয়।
এরপর গবেষকরা দেখেন, যারা ১২ মাস ধরে ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের চার্ট অনুসরণ করেছেন তাদের তুলনায় যারা লো কার্ব খাবার খেয়েছেন তাদের ডায়াবেটিস মাত্র ৬ মাসেই একেবারে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
এমনকি কম কার্ব ডায়েট গ্রহণের ফলে ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন গ্রহণেরও প্রয়োজন হয়নি। টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিহত করার সহজ ৩ উপায়-
>> সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
>> ব্যায়াম
>> অতিরিক্ত ওজন হ্রাস
কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-
রুটি ও শস্য, মিষ্টিজাতীয় শাক-সবজি, পাস্তা, মটরশুটি, মধু, মিষ্টি দই, চিপস, দুধ, ভাত, চিনির ক্যান্ডি, চিনিযুক্ত খাবার, ময়দা, কুকিজ, কনডেন্সড মিল্ক, সিরিয়াল ইত্যাদি।
টাইপ ১ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হোক না কেন চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোনো ডায়েট অনুসরণ করবেন না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/গাইডলাইনস ইন প্র্যাকটিস
জেএমএস/এমএস