ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কি-না বুঝবেন যেভাবে

লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ২০ জুন ২০২১

ডা. ইসমাইল আজহারি

সিজোফ্রেনিয়া মূলত একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা। এই রোগের ৫টি সাধারণ উপসর্গ আছে। এর মধ্য থেকে প্রথম ৩টি উপসর্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কি-না তা বুঝতে হলে কয়েকটি উপসর্গ মিলিয়ে নিতে হবে।

৫ উপসর্গের মধ্যে দেইয়ের বেশি লক্ষণ থাকলেই বুছতে হবে আপনি জটিল এই মানসিক রোগে আক্রান্ত। প্রথম ৩টি উপসর্গের যে কোনো একটি থাকতে হবে এবং ব্যাপ্তিকাল হতে হবে ১ মাসের অধিক। জেনে নিন উপসর্গগুলো সম্পর্কে-

jagonews24

১. ডিলিউসন: এটি হচ্ছে এক প্রকার মিথ্যা বিশ্বাস। যার বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। যেমন- কেউ এমন বিশ্বাস করে, যে তিনি প্রধানমন্ত্রী কিংবা কোনো নায়িকা কিংবা কোনো হিরো তাকে ফলো করে। একে প্রিসিকিউটরি ডিলিউশন বলে। কিংবা সে বিশ্বাস করে তার চিন্তা অন্যজন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। একে বলে ডিলিউশন অব কন্ট্রোল।

এ ছাড়াও সে বিশ্বাস করে, তিনি দেশের একজন বিশেষ কিছু। সবাই তার ভক্ত। সে নিজকে নেতা বা তারকা হিসেবে বিশ্বাস করেন। একে বলা হয় ডিলিউশন অব গ্রান্ডিওস। সে মনে করে, কেউ এসে তাকে লন্ডন নিয়ে যাবে। তার জন্য বিমান পাঠাবে কিংবা অন্য দেশের কেউ তার প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করে।

২. হ্যালুসিনেশন: এক্ষেত্রে রোগীর মধ্যে অস্বাভাবিক সেন্স কিংবা উপলব্ধি তৈরি হয়। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন- সে নিজের কানে অনেক কিছু শুনতে পাবে। অথচ বাস্তবে কেউ কথা বলছে না। আবার সে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাবে। সে এসব শব্দে সাড়া দিবে কিংবা অদৃশ্য বস্ত দেখবে। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।

jagonews24

৩. ডিসঅরিয়েন্টেড স্পিচ: এর অসংলগ্ন কথাবার্তা। সে তার স্বাভাবিক কথাবার্তা বলার প্যাটার্ন হারিয়ে ফেলবে। কখন কাকে কি বলতে হবে তা বুঝবে না। একেক সময় একক কথা বলবে। এই ধরুন, সে ১০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে।

সে তার বন্ধুদের কিংবা অন্যদের বলবে আগামী মাসে সে ১০ তলা বাড়ি বানাবে। কিংবা অমুক নায়িকাকে বিয়ে করবে। এমপি ইলেকশন করবে ইত্যাদি এবং সব কথায় সে সিরিয়াসনেস দেখাবে। সিজোফ্রেনিয়া হতে হলে উপরের এই ৩টি থেকে যেকোনো একটা উপসর্গ থাকতে হবে।

jagonews24

৪. অসংলগ্ন আচরণ: এগ্রেসিভ বিহেভিয়ার তথা আক্রমণাত্মক আচরণ। এমন ব্যক্তিরা শুধু যে অন্যের সঙ্গেই এমন আচরণ করেন তা কিন্তু নয় নিজের সঙ্গে কিংবা পরিবেশের সঙ্গে এমনটি করে থাকেন।

যেমন- কেউ হয়তো নিজেকে আঘাত করে আর গাছপালা-পশু-পাখিকে কষ্ট দেয় কিংবা ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে থাকেন। স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করেন না। যেমন ধরুন, রোগী খাবার খেতে বসেছেন। কিছু নিজে খাচ্ছেন, আর কিছু অন্যত্র সরিয়ে রাখছেন অন্যের জন্য (যার কোনো ভিত্তিই নেই) ইত্যাদি।

৫. নেগেটিভ আচরণ: রোগীর মধ্যে নেগেটিভ উপসর্গ তৈরি হয়। উদাহরণস্বরুপ, সে কোনো আবেগ দেখাতে পারবে না, তার মধ্যে আবেগ অনুভতি, আনন্দ প্রকাশ, এই বিষয়গুলো হারিয়ে যাবে। মনে করুন, তার কোনো আত্মীয় মারা গেলো এটা তার মাঝে প্রভাব বিস্তার করবে না এমনকি তাকে ব্যথিতও করবে না।

jagonews24

অথবা কোনো ভালো খবর শুনলে অন্যের যেমন প্রতিক্রিয়া ঘটে, তার মধ্যে তেমন উচ্ছিআস থাকবে না। ঘুম কমে যাবে, সব কিছুতে আগ্রহ হারাবে, যৌন চাহিদা কমবে, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে পছন্দ করবে কিংবা সবসময় শান্ত হয়ে বসে থাকবে ও কথাবার্তা কমিয়ে দিবে।

এই উপসর্গসমূহ দেখা দেওয়ার পর অনেকেই বুঝতে পারেন, তার মানসিক কিছু সমস্যা হচ্ছে এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার। যদি রোগী নিজের সমস্যা বুঝতে পারেন; তাহলে তাকে নিউরোসিস বলা হয়। তার চিকিৎসার ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়।

আবার অনেকেই আছে, যারা নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারেন না। কেউ যদি তাকে বুঝাতে চায়, তখন সে আরও রেগে বসেন। একে সাইকোসিস বলে। অর্থাৎ নিজের মানসিক সমস্যা টের পেয়েও তারা তা বিশ্বাস করেন না, কিংবা বুঝতে পারেন না।

সিজোফ্রেনিয়া বয়ঃসন্ধিকালের পর যে কোনো বয়সেই হতে পারে। স্টুডেন্টদেরও হতে পারে। পরিবারের অন্য কারো না থাকলেও এটা হতে পারে। অনেক ভার্সিটি পড়ুয়া মেধাবী ছেলেমেয়েও সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে তারা নিজেদের সমস্যা বুঝতে পারেন। কিন্তু অন্যরা তাকে পাগল ভাববে, এ কারণে মুখ লুকিয়ে নেন।

jagonews24

যখন দেখবেন আপনার আপন কেউ হঠাৎ নীরব হয়ে গেছেন বা হঠাৎ তার আচরণ পরিবর্তন হতে শুরু করেছে; তখন তার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলুন। সন্তানের সঙ্গে জান চান, তার কী হয়েছে! মাথায় হাত বুলান, তাকে সাহস দিন। তার ভালো লাগা জানতে চেষ্টা করুন।

অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব তাকে একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করার পর সিজোফ্রেনিয়া রোগী ৬ মাসের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন। অন্যথায় পূর্ণাঙ্গ মানসিক রোগী কিংবা আত্মহত্যার দিকে চলে যেতে পারে।

লেখক: চিকিৎসক এবং মনোসামাজিক গবেষক, পরিচালক, সেন্টার ফর সাইকোট্রমাটোলজি অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ।

জেএমএস/জিকেএস