শিশু গেমসে আসক্ত হলে করণীয়
ইট, কাঠ আর কংক্রিটের শহরে আটকা পড়ে বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও হয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক। কিন্তু শিশু বয়সের স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা কি আটকে রাখা যায়? শিশুরা তাই খেলাধুলার আনন্দ খুঁজে ফিরছে মাউসের বাটন টিপে, কম্পিউটারের পর্দায়। অনেক সময় এ গেমসের প্রতি তাদের আকর্ষণটা চলে যাচ্ছে আসক্তির পর্যায়ে। শিশুরা গেম খেলবেই। কিন্তু লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সেটা মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। অতিরিক্ত ভিডিও গেমসে আসক্ত থাকা শিশুর মানসিক ও শারীরিক উভয় ধরনের বিকাশের জন্য ক্ষতিকর।
আসক্তির কারণ
* শিশুর স্কুলসহ বাড়িতে খেলার জায়গা থাকে না। তাই বিনোদন হিসেবে গেমস খেলে।
* শিশু বেশির ভাগ সময় কাজের লোকের কাছে বড় হয়। কাজের লোক শিশুকে ম্যানেজ করার সহজ মাধ্যম হিসেবে কম্পিউটারের সামনে তাকে বসিয়ে রাখে।
* স্কুলসহ বাড়িতে পড়ার চাপের কারণে শিশুর খেলার সময় কমে গেছে। তাই অল্প সময়ে খেলতে কম্পিউটার বেছে নেয়।
* যানজট, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদির কারণে মা-বাবা শিশুকে খেলতে নিয়ে যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তাই শিশু কম্পিউটারে গেমস খেলে সময় কাটায়।
* অলস সময় কাটালে শিশু টিভিতে বা গেমসে আসক্ত হয়।
* গেমস খেলা দুটোই যেহেতু এক পাক্ষিক, অর্থাৎ এখানে অন্য পক্ষের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান হয় না, ফলে বাধাগ্রস্ত হয় শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশ।
ক্ষতিকর দিক
* অতিরিক্ত কার্টুন দেখা বা কম্পিউটারে বসে থাকা শিশুর চোখের জন্য ক্ষতিকর।
* ভিডিও গেমসের অধিকাংশই মারামারি ও সহিংসতাপূর্ণ। এগুলো থেকে শিশু সহিংস হয়ে ওঠে। অনেক সময় মারামারি শেখে এবং খুব সহজেই আক্রমণাত্মক হয়।
* অনেক সময় শিশু শুধু কার্টুনের চরিত্রের নেতিবাচক দিকগুলোই শেখে।
* শিশুর পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়; স্কুলের প্রতিও তৈরি হয় অনীহা।
কী করবেন
* শিক্ষণীয় বা বুদ্ধি বৃদ্ধিতে সহায়ক এমন গেমস নির্বাচন করুন। কার্টুন নির্বাচনেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন
* শিশুকে সমবয়সী অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিন।
* মা-বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা শিশুকে সময় দিন, যাতে সে নিঃসঙ্গ না থাকে।
* বাড়িসহ স্কুলের পরিবেশে খোলা জায়গায় খেলার পরিবেশ করে দিন।
* শিশুর খেলা ও পড়ার রুটিন করে দিন। যাতে তার পড়ার চাপ না পড়ে আর খেলাধুলার পর্যাপ্ত সময় পায়।
* শিশুকে মাঝে মধ্যে বেড়াতে নিয়ে যান। এতে তার মানসিক বিকাশ ঘটবে।
* শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে বইপড়া, সাইকেল কিনে দেয়া, রঙ করা ইত্যাদিতে ব্যস্ত রাখুন।
* আধুনিক যুগে শিশুকে কম্পিউটার থেকে দূরে রাখা যাবে না, উচিতও নয়। বরং শিশুকে ইন্টারনেট জগতের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
* সর্বোপরি সব ব্যাপারে মা-বাবাকে শিশুর সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে হবে।
এইচএন/পিআর