সন্ধ্যার পার্টিতে ব্যাকলেস
পশ্চিমের ফ্যাশানে ব্যাকলেস বেশ জনপ্রিয়। এদেশও সেই ফ্যাশনে গা ডুবিয়েছে। তবে, সূর্যের তীব্র রশ্মি গায়ে মেখে গায়ের ফরসা ত্বককে তামাটে বানিয়ে ফেলার কাজটিকে আমাদের মতো কালোদের কাছে হয়তো বোকামি মনে হতে পারে। এই ফ্যশান শুরু হয়েছিল সেই উনিশ শতকে। ১৯২০ সালে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্যানড স্কিন ট্রেন্ড। স্কিন তো ট্যান হলো কিন্তু তাকে চমৎকারভাবে প্রদর্শনের উপায় কী? এই প্রশ্ন থেকে জন্ম নিলো সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটি ডিজাইন ব্যাকলেস।
বাংলা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় আবরণহীন পিঠ। প্রথম দিকে তেমন একটা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এটি। শরীরের সামনের অংশ পুরোপুরি ঢেকে পিঠ দেখানোর ধারণাটি হজম করতে স্বাভাবিকভাবেই সময় লেগেছে। কিন্তু আস্তে আস্তে, বিশেষ করে ত্রিশের দশক থেকে এটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। সেই থেকে আজ অব্দি শতবর্ষ পেরিয়েও সেটি সদর্পে টিকে আছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন এসেছে ব্যাকলেসের ধারণায়। এটি পরার জন্য এখন আর তামাটে বা স্লিম শরীরের প্রয়োজন নেই। ক্যারি করতে পারলেই হলো! এটি সার্বিক অর্থেই পার্টির পোশাক। সাধারণত সান্ধ্য পার্টি কিংবা বিয়ের বিশেষ পোশাক তৈরিতে এ ধরনের কাট ব্যবহার করা হয়।
ব্যাকলেস পোশাকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, পুরো পিঠ থাকবে ফাঁকা, পেছন থেকে দেখলে মনে হবে সামনের দিকে পোশাকটি শূন্যে ঝুলে আছে। তবে,কতোটুকু পিঠ খোলা থাকবে এটি নির্ভর করে ডিজাইনের ওপর। কিছু পোশাকে পিঠের উপরের এবং মাঝের অংশ খোলা থাকে, যাতে বিউটিবোন দৃশ্যমান হয়; আবার কিছু পোশাক উন্মুক্ত থাকে প্রায় নিতম্ব পর্যন্ত।
আমাদের ফ্যাশনে ব্যাকলেস ব্যবহৃত হয় নানাভাবে। তবে তা কিছুটা পরিবর্তিত এবং অবশ্যই পরিমার্জিত রূপে। বিশেষ করে ব্লাউজ ও কামিজের কাটে এর প্রভাব বেশি। সেই সঙ্গে গাউন তো আছেই। শাড়ি ও ঘাগরার সঙ্গে পরিধেয় এ পোশাকটিতে পিঠ সম্পূর্ণ বা আংশিক খোলা থাকে। তবে সবার জন্য নয় এটি।
এর জন্য দরকার নিখুঁত দেহকাঠামো, সফিস্টিকেশন এবং রুচির প্রয়োগ। নইলে পোশাকটিকে অশ্লীল মনে হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে এই সময়ের নায়িকা বিদ্যা বালানের কথাও বলা যেতে পারে। ইদানীং ব্যাকলেস ব্লাউজ জনপ্রিয় হওয়ার ক্ষেত্রে তার একটি বিশাল ভূমিকা আছে। এ নিয়ে বিদ্যা চমৎকার একটি মন্তব্যও করেছেন। বলেছেন, ‘আমি মনে করি, শাড়িতে নিজেকে সেক্সি করে তোলার কাজে প্রাধান্য থাকে আঁচল ও ব্লাউজের। আমি সব সময় আমার ব্লাউজের কাট লো করে থাকি, যাতে পিঠ খুব ভালোভাবে দেখা যায়।
কারণ, আগাগোড়া ঢাকা এত লম্বা কাপড়ের মধ্যে একটু স্কিন শো ভালই লাগে!’ ব্লাউজে ব্যাকলেসের ট্রেন্ড আসলে অনেকটা সে কারণেই। যদিও আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যাকলেস মানে পুরোপুরি উন্মুক্ত পিঠ দেখানো নয়। পেছনে ডিপ স্কয়ার, রাউন্ড, হার্টশেপ এবং ভি কাটের মাধ্যমে ব্যাকলেস করে তোলা হয় ব্লাউজ কিংবা কামিজটিকে।
লো কাট ব্লাউজের জনপ্রিয়তাই বেশি। এ ধরনের কাটে আংশিক উন্মুক্ত থাকে পিঠ, কখনো-সখনো পুরোপুরিও উন্মুক্ত থাকে ঝুল ফিতার মাধ্যমে। কামিজের ক্ষেত্রে হয়তো পিঠে বড় একটি হার্ট বা পেছনের গলার কাটটি তুলনামূলকভাবে অনেক গভীর করা হয়।
ব্যাক লেস পরার কিছু নিয়মকানুন আছে- কামিজ, চোলি, ব্লাউজ বা গাউন, যা-ই পরা হোক না কেন, তাতে খোলা পিঠের সঙ্গে আবৃত সম্মুখভাগের ভারসাম্য থাকতে হবে। শরীরের সামনের অংশ যেন খুব বেশি জমকালো না হয়। বড় হার কিংবা গর্জিয়াস বড় দুল একেবারেই মানায় না এর সঙ্গে।
শুধু ব্যাকলেস জামা পরেই হয়ে ওঠা যায় দারুণ ফ্যাশনেবল। সঙ্গে এক জোড়া সাধারণ জুতা এবং ছোট্ট একটি পার্স। বেস্ট হেয়ারস্টাইল হতে পারে খোঁপা বা বেণি। অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে খোলা চুলের ক্যাজুয়াল লুকও চলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে চুল সামনে এনে এক পাশে ফেলে রাখলেই ভালো লাগবে। খোলা পিঠই যেখানে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, তা যতোটা প্রদর্শন করা যায় ততোই ভাল।