ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

নিরাপদ মাতৃত্ব প্রতিটি নারীর অধিকার

প্রকাশিত: ০৭:১৩ এএম, ২৮ মে ২০১৫

মাতৃত্ব। নারীজীবনের পূর্ণতা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে গিয়েই অশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে মৃত্যু হচ্ছে অনেক মায়ের। নিরাপদ মাতৃত্ব প্রতিটি নারীর অধিকার। এই অধিকারকে প্রতিটি প্রতিটি নারীর ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজ ২৮ মে। বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে মা হওয়ার আগেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা, গর্ভকালীন প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া ও অদক্ষ দাইয়ের হাতে বাচ্চা প্রসব করানোর ফলে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার খুব বেশি। বর্তমানে শতকরা ১৫ ভাগ প্রসব বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে হয়ে থাকে। বাকি ৮৫ ভাগ প্রসব বাড়িতে অদক্ষ দাই অথবা নিকট আত্মীয়দের দ্বারা হয়। ফলে অনেক সময় গর্ভকালীন বা গর্ভপরবর্তী জটিলতায় অনেক মায়ের অকালমৃত্যু হয়।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠী হচ্ছে বৃহত্তম প্রজননক্ষম অংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে এ অংশের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। এ বয়সী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন কারণে প্রজননস্বাস্থ্যের সমস্যা হয়। জরিপে দেখা গেছে, শিশু জন্ম দেয়ার সময় প্রতি লাখে ৩২০ জন মায়ের মৃত্যু হয়। এদের বেশির ভাগেরই বয়স ১২ থেকে ১৯-এর মধ্যে। আর এই মৃত্যুর মূল কারণ প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা। বাংলাদেশের মাত্র ১৩ শতাংশ নারী প্রসবকালে দক্ষ ধাত্রীর সেবা পান। প্রাক-প্রসবকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গর্ভবতী নারীকে এখনও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নেয়া হয় না।

গর্ভবতী নারীদের ১৪ শতাংশ গর্ভাবস্থায় স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন, যা তাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হাজার প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে শৈশব থেকে নারী স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। ছেলেশিশুর তুলনায় মেয়ে শিশু এখনও ১৫-২০ শতাংশ কম পুষ্টি পায়। জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতায় আক্রান্ত মোট নারীর মাত্র ৫ শতাংশ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পান। স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন পৌর এলাকাতে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো সমস্যার জন্য হাসপাতালে যেতে পারছে না অনেক নারী। হাসপাতালে পৌঁছালেও ডাক্তার না থাকার কারণে মিলছে না চিকিৎসাসেবা। আবার অনেকে পুরুষ ডাক্তারের হাতে প্রসব করাতেও রাজি হয় না। এমনকি তারা মেয়েদের হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যাপারেও বাধা প্রদান করে।

গ্রামীণ জনপদ ও চরাঞ্চলের অবস্থা আরো খারাপ। এসব জায়গায় নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। থাকলেও সেখানে ডাক্তাররা থাকতে চান না। কেউ অসুস্থ হলে স্থানীয় ওঝা, ফকির বা হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। এসব এলাকার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীরা থাকেন পৌর এলাকায়। এনজিওগুলোও শহর এলাকায় কাজ করে। ওষুধ দোকানদারই এখানে ডাক্তার নামে পরিচিত। নেই কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা। ফলে ঘটছে জনবিস্ফোরণ, বাড়ছে মা ও শিশুর মৃত্যু।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিশেষজ্ঞ আফরোজা খানম বলেন, নিরাপদে বাচ্চা প্রসব করাকে নিরাপদ মাতৃত্ব বলা হয়। এ ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়া থেকে শুরু করে প্রসব হওয়া পর্যন্ত গর্ভবতী মাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাবার, নিয়মিত ঘুমাতে হবে। এমনকি বাচ্চা প্রসব হওয়ার পরবর্তী সময় ভারী কাজ করা থেকে প্রসূতি মাকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিন ১ ঘণ্টা বিশ্রাম নিতে হবে, অতিরিক্ত খাবার খেতে হবে, মাসে ১ বার চেকআপে যেতে হবে, পরবর্তী ৪, ৬, ৮ ও ৯ মাসে চেকআপে যেতে হবে। মাতৃত্বকালীন অপুষ্টির কারণে রোগাক্রান্ত মায়েদের স্বাস্থ্যহানি ঘটায় অনেক সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে।

বাল্যবিবাহ, গর্ভসঞ্চার, অপরিকল্পিত গর্ভধারণ, কিশোরী মায়ের পুষ্টিহীনতা, রক্তস্বল্পতা, গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ, সুচিকিৎসার অভাব প্রভৃতি কারণে নারীর নিরাপদে মা হওয়ার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। সুতরাং নবজাতক ও মাতৃমৃত্যুরোধ করতে হলে গর্ভধারণের আগে থেকেই প্রসূতি মায়ের প্রত্যয় যত্নশীল হওয়া উচিত। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য যে সব পুষ্টি উপাদান সন্তানসম্ভবা মাকে সরবরাহ করা উচিত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রোটিন স্নেহপদার্থ, ক্যালসিয়াম, লোহা, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন-সি, ফলিক অ্যাসিড প্রভৃতি।

মাতৃত্বকালে উপযুক্ত শক্তির চাহিদা পূরণ না করলে, একদিকে যেমন নারীর স্বাস্থ্য ভাঙ্গতে শুরু করে, অন্যদিকে দেহের ভ্রুণ বা শিশুর ওপরেও তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব পড়ে। ভ্রুণ অবস্থাতেই যদি মায়ের স্বাস্থ্য ভাঙ্গতে শুরু করে তাহলে জন্মের পরে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে তার প্রতিফলন হয়। তাই গর্ভাবস্থার শুরু থেকে শিশুর জন্মদান এবং তার পরবর্তী সময়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে প্রসূতি মায়ের। নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব।

এইচএন/পিআর