ভূমিকম্প মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে
ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের সব আতঙ্ক আর ভয়ের সীমা যেন বাঁধা পড়ে থাকে প্রতিটি ভূমিকম্প হওয়ার দিন দুয়েকের মধ্যেই। প্রতিবার ভূমিকম্প এসে একটু করে কাঁপিয়ে দিয়ে যায় তিলোত্তমা এই নগরী। হঠাৎ করে মহাবিপর্যয় হিসেবে ভূমিকম্প যদি তার ধ্বংসাত্মক ছাপ রেখে যায় তাহলে সেই বিপর্যয় মোকাবেলায় আমাদের করণীয় নিয়েই এখন ভাবতে হবে সবার আগে। প্রয়োজন কিছু প্রস্তুতি-
১. আপনি যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় থাকেন তবে খোঁজ নিন আপনার ভবনটিতে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা আছে কি না, থাকলে তা কী মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। যদি না থাকে তকে রেট্রোফিটিং এর ব্যবস্থা নিন। কম ঝুঁকিপূর্ণ একলাকায় পুরনো ভবনেও রেট্রোফিটিং-এর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। জাপানে ভূমিকম্প একটি নৈমত্তিক ঘটনা। কিন্তু তাদের ভবনগুলোতে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকায় তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় অতি সামান্য।
২. পরিবারের সবার সঙ্গে বসে এ অবস্থায় কী করতে হবে, কোথায় আশ্রয় নিতে হবে- মোট কথা আপনার পরিবারের ইমার্জেন্সি প্লান কী সেটা ঠিক করে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। ভূমিকম্পের সময় হাতে খুব সামান্যই সময় পাওয়া যাবে। তাই এসময় কী করবেন তা সবাইকে নিয়ে আগেই ঠিক করে রাখুন।
৩. বড় বড় এবং লম্বা ফার্নিচারকে যেমন শেলফ, শোকেস ইত্যাদি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখুন যেন ভূমিকম্পের সময় গায়ের ওপরে না পড়ে। আর টিভি, ক্যাসেট ইত্যাদি ভারি বস্তু নিচে নামিয়ে রাখুন।
৪. বিছানার পাশে সবসময় টর্চলাইট ও ব্যাটারি রাখুন।
৫. প্রয়োজন না হলে ঘরের ভেতরের দরজাগুলো বন্ধ করবেননা।
৬. ভূমিকম্প টের পেলে সাথে সাথে ঘরের সদর দরজা খুলে দিন, অন্যান্য দরজা বন্ধ থাকলে সেগুলোও যত বেশী সম্ভব খুলে দিন।
৭. আমাদের দেশে বারান্দা বা জানালা টাইপের এক্সিটগুলো সাধারনত গ্রিল দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়, নিরাপত্তার জন্য। এটা ভূমিকম্পবান্ধব না, কিন্তু কিছু করার নেই। এজন্য, সম্ভব হলে বাসার সবচেয়ে বড় বারান্দাটির গ্রিলের এক কোনায় গ্রিল কাটার ঝুলিয়ে রাখুন।
৮. ভূমিকম্প শরীরের যে প্রত্যঙ্গটির জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক, তা হলো মাথা। এটাকে বাঁচাতে পারলে জীবন বাচার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। এজন্য বাসার সব সদস্যর বিছানার পাশে হাতের কাছাকাছি কোথাও একটি করে হেলমেট রাখার ব্যবস্থা করুন।
৯. অনেক সময়েই ভূমিকম্পে ভবনধ্বসে যা ক্ষয়ক্ষতি হয় তার চেয়েও বেশী ক্ষয়ক্ষতি হয় পরবর্তীতে আগুন লেগে। সবচেয়ে বেশী আগুন লাগে গ্যাস লিকেজের কারণে। এজন্য অবশ্যই রান্না শেষ হলে গ্যাসের মূল সুইচ বন্ধ করার অনুশীলন করুন। শুধু নিজেরা করলে হবেনা, একই বাড়ীর অন্যান্য প্রতিবেশী/ভাড়াটিয়াদেরকেও এই ব্যাপারে সচেতন করুন। তানাহলে নিজের বাড়ীতে আগুন না লাগলেও অন্যের বাড়ীর আগুন আপনার ঘর পোড়াবে।
১০. মোবাইল ফোন চার্জ দেয়ার জায়গাটিকেও ডাইনিং টেবিল থেকে কাছাকাছি কোথাও রাখুন। মোবাইল ফোনে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর ফোন নম্বর অবশ্যই রেকর্ড করে রাখুন।
১১. বছরে একবার হলেও পরিবারের সবাই মিলে ভূমিকম্পের সময় কী করবেন তার ট্রায়াল দিন।
এইচএন/এমএস