ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

সখী ভালবাসা কারে কয়...

প্রকাশিত: ০১:০৯ পিএম, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

প্রতিদিনের মত আগামীকাল শনিবার প্রভাতেও সূর্য আলোর নাচন তুলে চোখ মেলবে। কিন্তু দক্ষিণা হাওয়া কাল (শনিবার) হৃদয়ে বুনে দেবে ভ্রমরও গুঞ্জন। অমরাবতীর তীর ছুঁয়ে স্বর্ণরেণু পলকে মেখে ভেসে আসবে বর্ণিল প্রজাপতি ও ভ্রমরের ঝাঁক। কারণ আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন ডে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘আমার জীবনে তুমি বাঁচো ওগো বাঁচো/ তোমার কামনা আমার চিত্ত দিয়ে যাঁচো...’ অথবা ‘তোমরা যে বল ভালবাসা ভালবাসা/সখী ভালবাসা কারে কয়...’।

কবির বাঁচা মরার এবং চিত্র দিয়ে ভালবাসা বোঝাবোঝির চিরন্তন বোধ শনিবার হয়তো একটু বেশিই অনুভূত হবে গোলাপ বিনিময় ও শরীরী ভাষায়। বসন্ত বাতাসে হৃদয়ের মিথস্ক্রিয়ায় সারা বিশ্বের প্রেমপিয়াসী যুগলরা বছরের এ দিনটিকেই বেছে নেয় মনের গহিনের কথকতার কলি ফোটাতে।

চন্ডিদাসের অনাদিকালের সেই সুর ‘দুহঁ করে দুহঁ কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ আধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/ সখী কেমনে বাঁধিব হিয়া...’। এ আবেদনও শনিবার বাজবে কারও কারও হৃদয়ে।

প্রেমদেব কিউপিড এদিন প্রেমশর বাগিয়ে হৃদয় কন্দরে ঘুরে বেড়াবেন। সে অনুরাগে প্রেমপাগল প্রেমিক-প্রেমিকারা পরাণ তাড়িত হয়ে বিদ্ধ হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। তাঁদের মনে লাগবে দোলা, ভালবাসার রঙে রাঙাবে হৃদয়। ভালবাসা উৎসবে মুখর হবে জনপদ। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কাল পালিত হবে দিবসটি।

ডিজিটালের যুগে তরুণ-তরুণীরাই বেশি ক্রেজি হয়ে উঠবে দিনটি পালনে। প্রযুক্তির কল্যাণে হাইটেক ডিজিটালের যুগে মুঠোফোনের ক্ষুদ্র বার্তা, ই-মেইল অথবা ফেসবুকে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় পল্লবিত হয়ে উঠবে শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর থেকেই।

পশ্চিমা দুনিয়ায় ভ্যালেন্টাইন ডে বা প্রেম উৎসব তারুণ্যের মাঝে এক অদেখা ভুবনের উত্তেজনা ছড়ায়। এদিন চকোলেট, পার্ফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলের এসএমএস প্রেমবার্তা, হিরার আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা মার্জার, বইয়ের ভেতরে রাখা গোলাপের ইশারা ইত্যাদি বিনিময় হয়ে উঠে তরুণ-তরুণীদের প্রথম অনুসঙ্গ।

আমাদের দেশে ১৯৯৪ সাল থেকে দিবসটি বেশ ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। এদিন শুধু প্রেম বিনিময় নয়, প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে গোপনে বিয়ের হিড়িকও পড়ে।

আবার দিনটি যে শুধু তরুণ-তরুণীদের তা নয়, পিতামাতা-সন্তানদেরও ভালবাসার বড়মাত্রায় উদ্ভাসিত করে। বিজ্ঞরা বলেন, প্রেমের কোন দিন থাকে না, ভালবাসলেই ভ্যালেন্টাইন, সেলিব্রেট করলেই ভ্যালেন্টাইন ডে।

ভালবাসার এই দিনটির ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে অনেক ধরণের কাহিনীর কথা জানা গেছে। প্রধান যে কাহিনী প্রচলিত আছে তা এক রোমান ক্যাথলিক পাদ্রি বা সন্তের কাহিনী। তাঁর নাম ছিল সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসক ও পাদ্রি। তখন রোমানদের দেবদেবীর পূজোর বিষয়টি ছিল মূখ্য। তাঁরা বিশ্বাসী ছিলেন না খৃস্টান ধর্মে। কিন্তু খৃস্টান ধর্ম প্রচারের অপরাধে ২০৭ খ্রিষ্টাব্দে সাধু ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় রোমের সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের আদেশে।

তবে তিনি যখন জেলে বন্দী, তখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ভালবাসার কথা জানিয়ে জেলের জানালা দিয়ে তাঁকে ছুড়ে দিত চিরকুট। বন্দী অবস্থাতেই তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে জেলারের অন্ধ মেয়েকে ফিরিয়ে দেন দৃষ্টিশক্তি। অনুমান করা হয় মেয়েটির সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মৃত্যুর আগে মেয়েকে একটি চিঠি লেখেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন বলে।

অনেকের মতে এই সাধু ভ্যলেন্টাইনের নামানুসারে পোপ প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসাবে ঘোষণা করেন।

এছাড়া আরও একটি ভ্যলেন্টাইনের নাম পাওয়া যায় ইতিহাসে। যুদ্ধের জন্য সৈন্য সংগ্রহে ছেলেদের বিয়ে করতে নিষিদ্ধ করেন রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস। কিন্তু যুবক ভ্যালেন্টাইন সেই নিষেধ অমান্য করে বিয়ে করেন। ফলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার নামানুসারেও এ দিনটি চালু হতে পারে, এমন ধারণাও রয়েছে।

আরএস