ডেঙ্গু পরবর্তী সময়ে যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু নামক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ হলো ডেঙ্গু। বিশ্বের অন্যান্য ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলগুলোর মতো বাংলাদেশও ঘনবসতিপূর্ণ দেশের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বিগত কয়েক যুগ ধরেই বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গু রোগী অপ্রত্যাশিতভাবে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি বছরে ৭১ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হিসাবে নথিবদ্ধ হয়েছেন।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত থাকাকালীন সময় যেমন রোগীর শরীরে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, তেমনই ডেঙ্গু রোগ থেকে সেরে ওঠার পরও দেখা দেয় নানা সমস্যা। যেমন-
>> দীর্ঘদিন দূর্বলতা
>> ক্লান্তি
>> অবসাদ
>> মাথাব্যথা
>> শরীরের বিভিন্ন গিড়ায় ব্যথা
>> মনোযোগহীনতা
>> খাবারে অরুচি
>> মাথা ঘোরানো
>> নিদ্রাহীনতা
>> কখনো বা অতিনিদ্রা ইত্যাদি।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা’ হিসেবে বর্ণনা করা যায়। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অতিসক্রিয়তা এতে কিছুটা ভূমিকা রাখে।
এছাড়া বয়স, পরিবেশ, পারিবারিক ইতিহাস, মানসিক চাপ ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডেঙ্গুর পর যে কেউই ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে নারী, শিশু ও বয়স্করা এতে বেশি আক্রান্ত হয়।
এছাড়া ডেঙ্গু পরবর্তী সময়ে ক্ষুধামন্দা ও পুষ্টির ঘাটতি থাকার কারণে অনেকের চুল পড়ে যাওয়া শুরু করে। ত্বকও বেশ শুষ্ক হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানির ঘাটতির জন্য ও ঠিকমতো খাবার না খাওয়ার জন্য শরীর দূর্বল হয়ে পড়ে। অনেকের ওজনও কমে যায় বেশ কিছুটা।
ডেঙ্গু রোগের জটিলতা হিসেবে রোগাক্রান্ত অবস্থায় অনেকের ফুসফুসে পানি জমা, পেটে পানি জমা, পিত্তথলি ও মস্তিষ্কে প্রদাহ ইত্যাদি হতে পারে। এর ফলস্বরূপ অনেকের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, খিঁচুনি, পক্ষাঘাতগ্রস্থতা, নিউমোনিয়া, সুপার ইনফেকশন প্রভৃতির রেশ থেকে যেতে পারে।
আরও পড়ুন
ডেঙ্গু পরবর্তী জটিলতা কাটাতে কী করবেন?
ডেঙ্গু-পরবর্তী অবসাদগ্রস্ততা সাধারণত কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। যদি দিন দিন অবস্থার উন্নতি না হয়ে অবনতি হয় অথবা খিঁচুনি, পক্ষাঘাতগ্রস্থতার মতো জটিলতা স্থায়ী হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। একই সঙ্গে ডেঙ্গু পরবর্তী অবসাদগ্রস্থতার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মেনে চললে সুফল মিলবে। যেমন-
>> সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।
>> পরিমিত পরিমাণ তরল ও তরলজাতীয় খাবার পান ইত্যাদি।
>> আমিষ জাতীয় খাবার, যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, স্যুপজাতীয় খাবার গ্রহণ করা।
>> খাবারগুলো অবশ্যই আঁশযুক্ত, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ হতে হবে।
>> পাশাপাশি ফল ও ফলের রস গ্রহণ করুন।
>> ফাস্টফুড, ভাজা-পোড়া খাবার, অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাদার খাবার পরিহার করুন।
>> প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ভিটামিন-ডি ইত্যাদি সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
>> এছাড়া রোগ থেকে উঠেই অতিরিক্ত পরিশ্রম শুরু না করাই ভালো।
>> প্রাথমিকভাবে ২-৩ সপ্তাহ বিশ্রাম নিলে সামগ্রিক শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়।
>> পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও দরকার।
>> দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। বিভিন্ন ধরনের রিলাক্সেশন থেরাপি এক্ষেত্রে উপকার করতে পারে।
>> অনেক সময় মাংস বা গিড়ার ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে শুরু করে সেরে ওঠার পরও বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় ভুগতে হয় রোগীকে। এজন্য সর্বোপরি ডেঙ্গু ও এর বিভিন্ন জটিলতা থেকে বাঁচতে সামাজিক সচেতনতার পাশপাশি মশক নিধন কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই। কারণ ডেঙ্গু চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে রিপোর্ট করা হয়েছিল, যা তখন ‘ঢাকা জ্বর’ নামে পরিচিতি ছিল। দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের রেকর্ডকৃত সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব ঘটে ২০১৯ সালে। সে সময় লক্ষাধিকেরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণে।
জেএমএস/জেআইএম