ঘুমের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে যে কারণে
বর্তমানে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ হার্ট অ্যাটাকে মারা যাচ্ছেন। অনেক সময় হৃদরোগ থাকা সত্ত্বেও কিংবা এর লক্ষণ না জানায় হঠাৎ করেই হতে পারে হার্ট অ্যাটাক। তাই হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কিত লক্ষণ সবারই জেনে রাখা জরুরি।
ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে প্রাণ হারান অনেকেই। যদিও ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পেছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো হৃদরোগ সম্পর্কিত লক্ষণ না জানা কিংবা জেনেও জীবনধারা না বদলানো ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ না করা।
হৃদরোগ শনাক্তের পরপরই সবার উচিত সঠিক জীবনধারা বজায় রাখা। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা ও শরীরচর্চা করা। একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে যে কোনো কঠিন ব্যাধি প্রতিরোধ কিংবা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ঘুমের মধ্যে কেন হয় হার্ট অ্যাটাক?
অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
এনসিবিআই এর তথ্য অনুসারে, অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের কারণে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হয় না। স্বাভাবিক হৃদস্পন্দনকে সাইনাস রিদম বলা হয়, প্রতি মিনিটে ৬০-১০০ এর মধ্যে থাকে।
আর শরীরচর্চার সময়, এটি প্রতি মিনিটে ১০০ ও ঘুমের সময় প্রতি মিনিটে ৫০ পর্যন্ত যেতে পারে। অ্যারিথমিয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি বার্ধক্যের কারণেও হতে পারে।
এছাড়া থাইরয়েডের মতো রোগও অ্যারিথমিয়ায় রূপ নিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা হতে পারে। অনেকেই ধারণা করেন, মৃত ব্যক্তিটি হয়তো মধ্যরাতে ঘুমের মধ্যে মারা গেছেন। তবে এক্ষেত্রে ভোর ৩-৪টার মধ্যে মারা যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
কারণ এ সময় স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে হার্টবিট ওঠানামার কারণে তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যার কারণে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
- আরও পড়ুন
- প্রচণ্ড গরমে মাথা ঘোরা ও অজ্ঞানভাব হয় কেন?
- জ্বর-মাথাব্যথাসহ কোন লক্ষণ দেখলে দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করবেন
হার্ট ব্লকেজ
ঘুমের সময় হার্ট অ্যাটাকের আরও একটি বড় কারণ হতে পারে হার্ট ব্লকেজ। আসলে মধ্যরাতের পরে, রক্ত ঘন করার প্রোটিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, ফলে রক্তের প্লাটিলেটগুলো খুব দ্রুত জমাট বাঁধতে শুরু করে।
এছাড়া আপনি যদি উচ্চ কোলেস্টেরলে, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা থাকে তবে জমাট বাঁধা হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া
অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট ফেইলিওরের রোগীরা স্লিপ অ্যাপনিয়ায় বেশি ভোগেন। স্লিপ অ্যাপনিয়াকে বলা হয় ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ডিসঅর্ডার।
রাতে ঘুমানোর সময় আমাদের রক্তচাপের মাত্রা কমে যায়, কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে রক্তচাপ কমে না বরং বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্টের ওপর চাপ পড়ে। এ অবস্থায় হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর
হৃৎপিণ্ড যখন পর্যাপ্ত রক্ত পাম্প করতে পারে না, তখন রক্ত ও ফুসফুসে তরল জমা হতে থাকে। হৃৎপিণ্ডে খুব বেশি চাপ পড়লে এর রক্ত সঞ্চালনের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এ ধরনের পরিস্থিতিতে রোগীর নিয়মিত হৃদরোগের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। এছাড়া আপনার ওজন, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রার দিকেও নজর রাখুন।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়
স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করে সহজেই হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবার খান ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুমানোও স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
রাতে ঘুমানোর সময় ঠিক করুন ও সকালে ঘুম থেকে দ্রুত উঠুন। আপনার দৈনন্দিন রুটিনে যোগব্যায়াম ও ধ্যান অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
সূত্র: ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক/ওয়েবএমডি
জেএমএস/এএসএম