কচি বাঁশ খাবেন কেন?
বাঁশের গোড়ার কচি অংশকে বলে কোঁড়ল। স্বাস্থ্যকর একটি খাবার এই বাঁশকোঁড়ল। যদিও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যেই এই বাঁশকোঁড়ল খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, তবে বর্তমানে অনেকেই বাঁশকোঁড়লের তৈরি পদের খাবার খেতে পছন্দ করেন। অনেকেই বাঁশকোঁড়ল খাওয়ার বিষয়টিকে বাঁশ খাওয়া হিসেবে নেতিবাচকভাবে নেন। তবে সত্যিই কিন্তু বাঁশকোঁড়ল খাওয়ার আছে অনেক উপকারিতা।
জানলে অবাক হবেন, কচি বাঁশে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ। যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। একাধিক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করে বাঁশকোঁড়ল। আধা কাপ কচি বাঁশের টুকরোতে থাকে- ক্যালোরি ২০ গ্রাম, চর্বি- ০, প্রোটিন ২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৪ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম, চিনি ২ গ্রাম ও সোডিয়াম ৩ মিলিগ্রাম।
এছাড়া বাঁশকোঁড়ল বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস, যার মধ্যে আছে- পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, ক্রোমিয়াম, তামা, আয়রন, থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ৬ ও ভিটামিন ই।
কী কী কারণে খাবেন কচি বাঁশ?
খারাপ কোলেস্টেরল কমে
উচ্চ মাত্রার ফাইবার ও খুব কম ক্যালোরি থাকে কচি বাঁশে। যা শরীরের ‘খারাপ’ এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই নিয়মিত কচি বাঁশ খেলে কমে হৃদরোগের ঝুঁকি।
ক্ষুধা বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
হজমজনিত ব্যাধি থেকে শুরু করে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যায় কাজ করে কচি বাঁশ।কচি বাঁশের হালকা মিষ্টি স্বাদ ও এর সেলুলোজের উচ্চ ঘনত্ব ক্ষুধা বাড়ায়। অন্যদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এমনকি হজমশক্তি বাড়ে।
একটি লো-কার্ব ডায়েট সমর্থন করে
কম কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়। কচি বাঁশে কম কার্বোহাইড্রেট থাকে সঙ্গে প্রচুর পুষ্টি সরবরাহ করে। যারা লো-কার্ব ডায়েট করেন তাদের জন্যও কচি বাঁশ খুব উপকারী।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে
কচি বাঁশের অঙ্কুরে থাকে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ও খনিজ। যা একটি পুষ্টির পাওয়ার হাউস। কচি বাঁশে খুব কম চর্বি ও চিনি থাকে, ফলে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হতে পারে একটি আদর্শ খাবার। এছাড়া কচি বাঁশে থাকে নিউট্রাসিউটিক্যালস নামক ফাইবার, যা অন্ত্রের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
অ্যান্টি-ক্যানসার, অ্যান্টি বায়োটিক ও অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য আছে
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে কচি বাঁশে। এতে থাকা ফেনোলিক যৌগগুলি ফ্রি র্যাডিক্যালগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। কচি বাঁশে আরও আছে অ্যান্টি-ক্যানসার, অ্যান্টি বায়োটিক ও অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কচি বাঁশে থাকা ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। ফলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে দূরে থাকতে বর্ষা ও শীতের শুরুতে কচি বাঁশ খেলে উপকার মিলবে। এছাড়া কচি বাঁশে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় ও নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করে।
অ্যান্টি ভেনোমাস
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কচি বাঁশের অঙ্কুর থেকে আহরিত রস সাপ, বিচ্ছু ও অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণীর কামড়ের ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে, বাঁশের অঙ্কুরের রস পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যা শরীর থেকে বিষ বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে।
জরায়ু সংকোচন প্ররোচিত করে
কচি বাঁশে থাকা পুষ্টি উপাদান জরায়ু সংকোচনকে উদ্দীপিত করে। যা গর্ভবতীদের স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে সাহায্য করে। ঐতিহ্যগত চীনা মেডিসিন অনুযায়ী, গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গর্ভবতী নারীদেরকে স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধার্থে অল্প পরিমাণে কচি বাঁশ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হাড় মজবুত করে
কচি বাঁশের অঙ্কুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম ও ফসফরাস। একটি কলার চেয়েও দ্বিগুণ পটাসিয়াম মেলে এক টুকরো বাঁশে। যা দৈনিক প্রয়োজনীয় পটাসিয়ামের প্রায় ১৩ শতাংশ সরবরাহ করে।
পটাসিয়াম কোষ ও শরীরের তরলগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। তাছাড়া সোডিয়ামের প্রভাব মোকাবেলা করে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। পটাসিয়াম ও ফসফরাস সুস্থ হাড় বজায় রাখে ও শরীরকে তার পেশী শক্তি তৈরি করতে সহায়তা করে।
ত্বক ভালো রাখে
কচি বাঁশের অঙ্কুর সিলিকা উপাদান সমৃদ্ধ বলে পরিচিত। জিঙ্ক ও আয়রনের পরে সিলিকা মানবদেহে তৃতীয় সর্বাধিক গুরূত্বপূর্ণ উপাদান। সিলিকা হাইড্রোক্সিপ্রোলিনের টিস্যু মাত্রা বাড়ায়, একটি মূল অ্যামিনো অ্যাসিড, যা কোলাজেন ও ইলাস্টিন সংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয়।
এছাড়া কোলাজেন উৎপাদন ত্বকের হাইড্রেশন, একটি মসৃণ গঠন, উজ্জ্বলতা ও একটি তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে স্কিন কেয়ারের বিভিন্ন প্রসাধনীতে বাঁশের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
ডিটক্সিফিকেশন বৈশিষ্ট্য আছে
কচি বাঁশের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য শরীরের নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। তাজা কচি বাঁশে থাকে অ্যান্টি অ্যালার্জিক, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল, নিউরোপ্রোটেক্টিভ ও অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্য।
কীভাবে রাঁধবেন বাঁশকোঁড়ল চিংড়ি?
উপকরণ
১. মাঝারি আকারের চিংড়ি ১০/১৪টি
২. কচি বাঁশের কুচি ২ কাপ
৩. পেয়াঁজ কুচি ১ কাপ
৪. বেকিং পাউডার
৫. মেথি আধা চা চামচ
৬. কাঁচা মরিচ
৭. ধনে গুঁড়া
৮. জিরা গুঁড়া
৯. লবণ ও
১০. পরিমাণমতো তেল।
পদ্ধতি
প্রথমে কচি বাঁশের টুকরোগুলো পানিতে হালকা ভাপ দিয়ে পানি ঝরিয়ে তুলে রাখুন। এরপরে প্যানে পরিমাণমতো তেল গরম করে চিংড়ি মাছগুলোতে সামান্য হলুদ মেখে ভেজে নিন।
এরপরে ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি আর মেথি ভেজে নিন। তারপর ভাপ দেওয়া কচি বাঁশ বেকিং পাউডারে মেখে ছেড়ে দিন। কিছুক্ষণ ভাজার পর চিংড়ি আর সামান্য ধনে গুঁড়া মিশিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভেজে নিন।
এরপর সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে যখন তেল উপরে উঠে আসবে তখন জিরার গুঁড়া ছড়িয়ে দিন। ঝোল শুকিয়ে মাখো মাখো হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন। গরম ভাতের সঙ্গে খান সুস্বাদু বাঁশকোঁড়ল চিংড়ি।
বাঁশ মূলত ঘাস পরিবারের বৃহত্তম সদস্য। এটি একটি চিরহরিৎ উদ্ভিদ। প্রায় ১৫০ ধরনের বাঁশ আছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। শুধু আসবাবপত্র কিংবা গৃহস্থালি প্রয়োজন ছাড়াও কচি বাঁশ ব্যবহার করা হয় খাদ্যদ্রব্য হিসেবে।
বাঁশ দিবস
আজ আন্তর্জাতিক বাঁশ দিবস। প্রতিবছর ১৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব বাঁশ সংস্থার আয়োজনে বিশ্বব্যাপী বাঁশের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ও দৈনন্দিন পণ্য হিসেবে এর ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশ্ব বাঁশ দিবস পালন করা হয়।
আজকের এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো, বাঁশ শিল্পকে আরও সম্ভাবনাময় জায়গায় নিয়ে যাওয়া। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঁশ চাষের মাধ্যমে এর ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনাও সংস্থাটির আরেকটি লক্ষ্য।
সূত্র: ওয়েবএমডি/নেটমেডস/হেলথলাইন
জেএমএস/এমএমএআর/এএসএম