ভিডিও EN
  1. Home/
  2. লাইফস্টাইল

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

ডা. হিমেল ঘোষ | প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ১৮ মে ২০২৪

হাঁপানি, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও অন্যান্য শ্বাসনালির সংক্রমণজনিত রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে নেবুলাইজার ব্যবহার করা হয়। রোগী যখন ইনহেলারের মাধ্যমে ওষুধ নিতে ব্যর্থ হন তখন নেবুলাইজারের সাহায্যে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।

অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা আছে যে, নেবুলাইজার বা ইনহেলার হলো বিশেষ ধরনের ওষুধ। তবে প্রকৃতপক্ষে নেবুলাইজার কিংবা ইনহেলার কোনো ওষুধ নয়, এগুলো ওষুধ প্রয়োগের বিশেষ যন্ত্র।

নেবুলাইজারের সাহায্যে সালবিউটামল, ইপ্রাট্রোপিয়াম, স্টেরয়েড প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। তবে নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের পদ্ধতি ও ব্যবহারবিধি ইনহেলারের থেকে ভিন্ন। সঠিক নিয়মে নেবুলাইজার ব্যবহার করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

সাধারণত তিন ধরনের নেবুলাইজার ব্যবহৃত হয়- আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজার, মেশ নেবুলাইজার ও জেট নেবুলাইজার। আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে ওষুধের তরল উপাদানকে অ্যারোসলে রূপান্তরিত করে শ্বাসনালিতে পাঠানো হয় আল্ট্রাসনিক নেবুলাইজারে।

আর মেশ নেবুলাইজারে মেশ বা জালের সাহায্যে তরল ওষুধ অ্যারোসলে পরিণত করে শ্বাসনালিতে পাঠানো হয়। তবে সহজলভ্য ও পরিচালনা পদ্ধতি সহজ বলে আমাদের দেশে জেট নেবুলাইজার বেশি ব্যবহৃত হয় ও জরুরি প্রয়োজনে তা বাসা-বাড়িতেও ব্যবহার করা যায়।

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

আমরা যে নেবুলাইজার ব্যবহার করি তা আসলে জেট নেবুলাইজার। নেবুলাইজার ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ অপরিহার্য।

জেট নেবুলাইজারের বেশ কয়েকটি অংশ থাকে। নেবুলাইজারে কমপ্রেসরের মাধ্যমে চাপযুক্ত বাতাস প্রয়োগ করা হয়। টিউবটি হয় প্লাস্টিকের তৈরি, যা কমপ্রেসরকে নেবুলাইজারের ওষুধ চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত করে। আর নেবুলাইজারে ওষুধ চেম্বারের তরল ওষুধটি অ্যারোসল বা স্প্রেতে রূপান্তরিত হয়।

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

নেবুলাইজারের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগের জন্য প্রথমে রোগীকে আরামদায়কভাবে আধশোয়া বা বসা অবস্থায় রাখতে হবে। এবার নির্দেশনা অনুযায়ী নেবুলাইজারের অংশগুলো জোড়া দিয়ে নেবুলাইজারকে কার্যক্ষম করতে হবে।

প্রতি স্প্রেতে ২৩ মিলি পানি, সঙ্গে বয়স ও ওজন অনুসারে ১ থেকে ৫ মি.লি. সালবিউটামল সলিউশন ও প্রয়োজনে ইপ্রাট্রোপিয়াম দ্রবণ (৫ মিলি) নিতে হয়। সাধারণত ৩-৬ মিলি তরল ওষুধের মিশ্রণ ৫-১০ মিনিট যাবত নেবুলাইজ করা হয়। এক্ষেত্রে কমপ্রেসরটিতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে সুইচ অন করতে হবে। এতে বাতাস দ্রুত প্রবাহিত হবে।

এরপর ওষুধের অ্যারোসল মাউথপিস (টিপিস) বা মাস্ক দিয়ে রোগীর মুখে নিঃশ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে দিতে হয়। মাউথপিস ব্যবহার করলে রোগীকে এটি দাঁতের ফাঁকে রেখে ঠোঁট বন্ধ করে রাখতে হবে। নেবুলাইজ করার সময় রোগীকে ধীরে ধীরে ও লম্বা শ্বাস নিতে হবে।

একবার ব্যবহারের পর কিছু পরামর্শ মেনে নেবুলাইজার পরিষ্কার করা উচিত। নেবুলাইজার মেশিনটি সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকঘটিত সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নেবুলাইজার কেন ব্যবহার করা হয়?

এজন্য ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবুলাইজারের কমপ্রেসর, টিউব, মাউথপিস বা মাস্ক ও নেবুলাইজার আলাদা করে ফেলে মাউথপিস বা মাস্ক ও নেবুলাইজার গরম পানিতে ৩০ সেকেন্ড রেখে ধুয়ে নিয়ে বাতাসে এগুলো শুকিয়ে নিতে হবে।

এক্ষেত্রে সিরকা ও পানির মিশ্রণও ব্যবহার করা যেতে পারে। কমপ্রেসর, টিউব সাধারণত গরম পানি দিয়ে ধোয়া যায় না। টিউবের বাইরের দিকটা শুধু পরিষ্কার করা যায়। মাউথপিস বা মাস্ক ছয় মাস পর পর বদলানো উচিত।

নেবুলাইজার হাঁপানি ও সিওপিডি আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ এটি কোনো দীর্ঘমেয়াদি কোনো চিকিৎসাপদ্ধতি নয়। এতে রোগীর শ্বাসকষ্টের সাময়িক উপশম হয় মাত্র। একবার বা দুইবার নেবুলাইজ করার পরও শ্বাসকষ্ট না কমলে রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া উচিত।

কখনো কখনো নেবুলাইজ করার শুরুতে রোগীর শ্বাসনালি তাৎক্ষণিকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ে, তখন রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজনও পড়তে পারে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটি জীবনরক্ষাকারী একটি ডিভাইসে পরিণত হয়।

লেখক: সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন), খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা।

জেমেএস/জেআইএম

আরও পড়ুন