মা দিবস
মায়ের শরীরে যে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত তাকে ডাক্তার দেখাবেন
বয়স বাড়তেই বাবা-মা সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর সন্তানেরও উচিত এ সময় বাবা-মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হওয়া। বিশেষ করে বয়স বাড়তেই নারীদের শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। আর মায়েরা এসব সমস্যা উপেক্ষা করেই অনেকটা দিন পার করেন।
তাই সন্তান হিসেবে আপনার উচিত মায়ের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখলে অবশ্যই তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া। কারণ সামান্য ক্লান্তি কিংবা মাথাব্যথার উপসর্গও কিন্তু মারণব্যাধি ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই মায়ের শরীরের এই ১০ লক্ষণ কখনো অবহেলা করবেন না-
দুর্বলতা
মুখ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হঠাৎ দুর্বলতা স্ট্রোকের ইঙ্গিত দিতে পারে। একই সঙ্গে হঠাৎ বিভ্রান্তি, কথা বলতে সমস্যা, ঝাপসা দৃষ্টি ও হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে এক্ষেত্রে। পরিবার ও বন্ধুদের পাশাপাশি আপনারও এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
শ্বাসকষ্ট
নারীদের হৃৎপিণ্ডে যখন পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন ভারি কাজকর্ম করার সময় তাদের শ্বাসকষ্ট হয়। তবে বেশিরভাগ নীরব হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও চরম ক্লান্তিসহ বুকে ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়। আবার অ্যানিমিয়া ও ফুসফুসের রোগও হতে পারে নারীদের শ্বাসকষ্টের সাধারণ কারণ। তাই কখনো শ্বাসকষ্টকে অবহেলা করবেন না।
বুকে ব্যথা
আপনার মা যদি প্রায়ই বুকে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, বাহু, কাঁধ বা চোয়ালে ব্যথা অথবা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তাহলে সতর্ক হন ও দ্রুত ডাক্তারের কাছে তাকে নিয়ে যান। কারণ এসব লক্ষণ হার্টের সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
ঝাপসা দৃষ্টি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মায়ের দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, কিন্তু যদি হঠাৎ করেই দেখতে অসুবিধা হয় বা এক বা উভয় চোখেই আপনার মায়ের দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে, তাহলে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
একইভাবে যারা মাইগ্রেনে ভুগছেন তারা ফ্ল্যাশিং লাইট বা রঙিন আলো চোখের সামনে ভাসতে দেখতে পারেন। একই উপসর্গ আবার রেটিনা ছিঁড়ে বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। দ্রুত এর চিকিৎসা করা না হলো আপনি অন্ধও হয়ে যেতে পারেন।
ওজনে পরিবর্তন
যদি হঠাৎ করেই আপনার মায়ের শরীরে ভেঙে পড়ে বা ওজন কমতে শুরু করে তাহলে সতর্ক হন। কারণ এই লক্ষণ থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি, লিভারের রোগ বা ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হতে পারে।
আবার যদি দেখেন ডায়েট বা কার্যকলাপের মাত্রা পরিবর্তন না করেও ওজন বাড়ছে তাহলেও এটি থাইরয়েড, বিষণ্নতাসহ অন্যান্য বিপাকীয় রোগ নির্দেশ করতে পারে।
অস্বাভাবিক স্তন পিণ্ড
স্তনের ত্বকে কোনো আলগা পিণ্ড বা রঙে পরিবর্তন এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না। এই ধরনের পরিবর্তন স্তন ক্যানসারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
নাক ডাকা ও অতিরিক্ত ঘুম
আপনার মা যদি হঠাৎ করেই যেখানে সেখানে গভীর ঘুমিয়ে পড়েন ও নাক ডাকেন তাহলে তা হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ। যদি এর চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা ও ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে। এমনকি এই রোগের কারণে ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস আটকে অনেকে মারাও যান।
অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ জীবনের একটি অংশ। এর মানে এই নয় যে এটি উপেক্ষা করা উচিত। আপনি যদি দেখেন, দিন দিন আপনার মায়ের মধ্যে স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে বা তার দৈনন্দিন কাজকর্মে তা হস্তক্ষেপ করছে তাহলে দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।
ত্বকের পরিবর্তন
আপনার মায়ের ত্বকে যদি কোনো পরিবর্তন দেখেন, তাহলে সতর্ক হন। বিশেষ করে বগলে বা ঘাড়ের পেছনের ত্বকে কালো হয়ে যাওয়া ও ত্বকের একাধিক ট্যাগ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
মাসিকের পরিবর্তন
অনিয়মিত পিরিয়ড বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়। হঠাৎ করেই মাসিকের পরিমাণ, সময়কাল, প্রবাহ ও ব্যথার কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এসব মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা মেনোপজ, পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় বা জরায়ু ফাইব্রয়েডের সঙ্গে জড়িত হতে পারে।
এমনকি পেলভিক সংক্রমণ ও গাইনোকোলজিক্যাল ক্যানসারের মতো গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে মাসিকের সমস্যা। আবার মেনোপজের পরও যদি রক্তপাত দেখা দেয় তাহলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: বোল্ডস্কাই
জেএমএস/জেআইএম