বিষক্রিয়া থেকে বাঁচতে খাবার নিরাপদ রাখবেন যেভাবে
আপনি যে খাবারগুলো খাচ্ছেন, সেগুলো আদৌ নিরাপদ কি না সে বিষয়ে হয়তো অনেকেরই নিশ্চিত ধারণা নেই। আসলে নিয়মিত বাজার থেকে নানা ধরনের খাবার, শাক-সবজি কিংবা ফলমূল কিনে আনার পর তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ কিংবা পরিষ্কারের অভাবে বিপত্তি ঘটতে পারে। আর এ কারণেই ভুগতে হয় ফুড পয়জনিংসহ নানা সমস্যায়।
অনেকেই খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়ে অবগত নন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে কীভাবে খাদ্যের নিরাপত্তা বজায় রাখা যায়।
আরও পড়ুন: খাবার খাওয়ার সময় মাথায় রাখুন ৯ বিষয়
এজন্য ৩টি উপায় অনুসরণ করার পরামর্শে দেওয়া হয়। যেমন- খাবার পরিষ্কার ও আলাদা করা, রান্না ও সংরক্ষণ এগুলোর মাধ্যমে পরিবারকে ফুড পয়জনিং থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
পরিষ্কার ও পৃথক করুন
বিভিন্ন ফল-মূল কিংবা শাক-সবজি কিনে আনার পরপরই তা চলমান পানির নিচে রেখে ধুয়ে নিন। খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণু অনেক জায়গায় বেঁচে থাকতে পারে। এমনকি আপনার রান্নাঘরের চারপাশেও ছড়াতে পারে।
খাবার তৈরির আগে, খাওয়ার আগে ও পরে সাবান পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য হাত ধুয়ে নিন। গরম সাবান পানি দিয়ে বাসনপত্র, কাটিং বোর্ডসহ চুলা, বেসিন ইত্যাদি ধুয়ে ফেলুন।
আরও পড়ুন: মাংস খাওয়ার পরপরই যে খাবার ভুলেও খাবেন না!
কাঁচা মাংস, মুরগি, সামুদ্রিক খাবার ও ডিম সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে অন্যান্য খাবারে জীবাণু ছড়াতে পারে। এজন্য এসব খাবারের আলাদা কাটিং বোর্ড ও প্লেট ব্যবহার করুন।
মুদি পণ্য কেনাকাটার সময় কাঁচা মাংস, মুরগি, সামুদ্রিক মাছ ও ডিমের সঙ্গে অন্যান্য জিনিস একত্রে রাখবেন না। এসব কাঁচা খাবার রেফ্রিজারেটরে অন্যান্য খাবার থেকে আলাদা রাখুন।
সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করুন
খাবার যদি সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করা হয়, তাহলে এর অভ্যন্তরীণ জীবাণু দ্রুত ধ্বংস হয়ে যায়। আপনার খাবার নিরাপদে রান্না করা হয়েছে কি না তা জানার একমাত্র উপায় হলো একটি খাদ্য থার্মোমিটার ব্যবহার করা।
আরও পড়ুন: আম খাওয়ার পর যে ৫ খাবার খেলে হতে পারে বিপদ
খাবারটি সঠিক উপায়ে রান্না হয়েছে কি না কিংবা নিরাপদ কি না তা খাবারের রং ও টেক্সচার দেখে কখনো পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই খাদ্য থার্মোমিটার ব্যবহার করুন। কোন খাবার কতটুকু তাপমাত্রায় রান্না করবেন জেনে নিন-
>> গরুর মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের লাল মাংস ১৬০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করতে হবে। রান্নার পর অন্তত ৩ মিনিট অপেক্ষা করে খেতে হবে।
>> পাখনাসহ মাছ ১৪৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে ও
>> চিকেন ও টার্কি ১৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রান্না করতে হবে।
আরও পড়ুন: গলায় খাবার আটকে গেলে দ্রুত করণীয়
খাবার সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম
রান্নার পর বিভিন্ন ধরনের খাবার ঘরের তাপমাত্রায় ৪০-১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে রেখে দিলে দ্রুত এমন খাবারে ব্যাকটেরিয়া বাড়ে।
পচনশীল খাবার কখনো ২ ঘণ্টার বেশি বাইরে রাখা যাবে না। আর ঘরের তাপমাত্রা যদি ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়, তাহলে বাইরে একঘণ্টার বেশি এমন খাবার রাখা যাবে না।
তাই পচনশীল খাবার ২ ঘণ্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজে রাখা খাবার সঠিক উপায়ে সংরক্ষণের পর বের করে ঠান্ডা পানিতে বা মাইক্রোওয়েভে নিরাপদে গরম করতে পারেন। তবে ঘরের তাপমাত্রা রেখে কখনো খাবার গলাবেন না। এর ফলে ওই খাবারে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: শিশুর ৬ মাস হলে যেসব খাবার খাওয়ানো জরুরি
আজ বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস। প্রতিবছর ৭ জুন পালিত হয় দিবসটি। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা দিবস জাতিসংঘ কর্তৃক খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এফএও এর সগযোগিতায় প্রতিবছর পালিত হয় দিবসটি। জানলে অবাক হবেন, বছরে আনুমানিক ৬০০ মিলিয়ন খাদ্যজনিত অসুস্থতা রেকর্ড করা হয়। তাই এ বিষয় নিয়ে সবারই সতর্ক হওয়া জরুরি।
সূত্র: সিডিসি
জেএমএস/এএসএম