আঙুল ফুলে যাওয়া কঠিন যে রোগের ইঙ্গিত দেয়
শরীরের টিস্যু বা জয়েন্টে তরল জমলে ফোলাভাবের সৃষ্টি হয়। কখনো কখনো ফোলা স্থানগুলো লালচে হয়ে ওঠে। বিশেষ করে হাতের আঙুল ফুলে গেলে তাতে যদি আংটি পরা থাকে তা খুলতে কষ্ট হয়। আসলে শরীরে তরল জমার অন্যতম এক কারণ হলো নোনতা খাবার বেশি খাওয়া।
তবে সব সময় কিন্তু এই লক্ষণ নোনতা খাবারের জন্য নাও হতে পারে। কঠিন কিছু রোগ আছে, যার কারণে আঙুল ফুলে যেতে পারে। আর এই লক্ষণ অবহেলা করলেই বিপদে পড়বেন।
আরও পড়ুন: পায়ে ব্যথা ও চুলকানি হতে পারে কঠিন যে রোগের লক্ষণ
অতিরিক্ত শরীরচর্চা ও গরম
অতিরিক্ত শরীরচর্চার কারণেও কিন্তু আঙুলে পানি জমতে পারে। যেহেতু শরীরচর্চার সময় হার্ট, ফুসফুস ও পেশীর অক্সিজেনের বেশি প্রয়োজন পরে, তাই এসব স্থানেই বেশি রক্ত সঞ্চালন ঘটে।
অন্যদিকে হাতে রক্ত কম প্রবাহিত হয়। ফলে আঙুল ফুলে যেতে পারে। আবার বেশি গরম আবহাওয়ায় শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আঘাত
লিগামেন্ট ছিঁড়ে বা আঙুল মচকে যাওয়ার কারণে সেখানে ফুলে যেতে পারে। আঘাত খুব খারাপ না হলে, বরফ, বিশ্রাম, ও ওভার-দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি আঙুল সোজা করতে না পারেন, জ্বর হয় বা আপনার খুব ব্যথা হয় তাহলে ডাক্তার দেখান।
আরও পড়ুন: মিনি হার্ট অ্যাটাকে ১০ মিনিটেই হতে পারে মৃত্যু, জানুন লক্ষণ
বিভিন্ন সংক্রমণ
>> হারপেটিক হুইটলো: একটি হারপিস সংক্রমণ যা আঙ্গুলের উপর ছোট, ফোলা, রক্তাক্ত ফোস্কা সৃষ্টি করে।
>> প্যারোনিচিয়া: ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট নখের গোড়ায় সংক্রমণ।
>> ফেলন: আঙুলের ডগায় একটি বেদনাদায়ক পুঁজ-ভরা সংক্রমণ।
আঙুলের সংক্রমণ শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি এর প্রাথমিক চিকিৎসা না করা হয়।
আর্থ্রাইটিস
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) জয়েন্টের আস্তরণকে প্রভাবিত করে। এ কারণে আঙুল ফোলা, ব্যথা ও শক্ত হয়ে যায়। আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ প্রায়শই হাতের জয়েন্টেই বেশি দেখা যায়।
আরএ সাধারণত উভয় হাতকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস এমন ব্যক্তিদের প্রভাবিত করে, যাদের সোরিয়াসিস নামক চর্মরোগ আছে।
আরও পড়ুন: অস্টিওআর্থ্রাইটিসের যে লক্ষণ দেখা দেয় হাতে
এ সমস্যায় হাত-পায়ের আঙুল সসেজের মতো ফুলে ওঠে। উভয় ধরনের আর্থ্রাইটিস গুরুতর। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে জয়েন্টের ক্ষতি ও শরীরের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।
গাউট
একে মূলত ‘ধনী ব্যক্তির রোগ’ বলা হয়। যারা প্রচুর মাংস, সামুদ্রিক খাবার ও অ্যালকোহল গ্রহণ করে তারা এই রোগে বেশি ভোগেন। বর্তমানে গাউট সব স্তরের লোকেদের আঘাত করতে পারে। এটি সাধারণত বুড়ো আঙুলে চরম ব্যথা ও ফোলাভাব সৃষ্টি করে।
এটি ঘটে যখন আপনার রক্তে অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড জয়েন্টে স্ফটিক তৈরি করে। নিয়মিত চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণে গাউটের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
আরও পড়ুন: যে ভিটামিনের অভাবে জিহ্বায় ফাটল দেখা দেয়
ওষুধ
১. ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথার ওষুধ যেমন- অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এও নেপ্রোক্সেন।
২. স্টেরয়েড
৩. ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের জন্য কিছু ওষুধ
৪. গ্যাবাপেন্টিন এবং প্রিগাবালিনের মতো স্নায়ু ব্যথার ওষুধ
৫. ইস্ট্রোজেন বা টেস্টোস্টেরনসহ হরমোনাল থেরাপি
৬. ওষুধ থেকে ফোলা আঙুল সাধারণত একটি গুরুতর অবস্থা নয়। তবে আপনি চিন্তিত হলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
কিডনি রোগ
কিডনি শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। শরীর থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ছেঁকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয় কিডনি।
আরও পড়ুন: একনাগাড়ে হাঁচি হলে থামাবেন যেভাবে
তবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গে কোনো সমস্যা দেখা দিলে হাত-পায়ের আঙুল ও চোখের চারপাশে ফোলাভাবের সৃষ্টি হয়। এই লক্ষণগুলো দেখলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় আঙুল, গোড়ালি ও পা ফুলতে পারে। তবে হঠাৎ করে ফুলে যাওয়া, বিশেষ করে হাত ও মুখে, প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার লক্ষণ হতে পারে। এটি বিপজ্জনক উচ্চ রক্তচাপ, যা গর্ভাবস্থার দ্বিতীয়ার্ধে ঘটতে পারে।
এই সমস্যা কিডনিতেও প্রভাব ফেলে। আর সে কারণেই শরীর ফুলে যায়। একই সঙ্গে মাথাব্যথা, পেট ব্যথা ও দৃষ্টিতেও সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন: একমাস চিনি না খেলে শরীরে যে পরিবর্তন ঘটে
সিকেল সেল ডিজিজ
সাধারণ লাল রক্ত কণিকা দেখতে ডোনাটের মতো ও নমনীয়। যখন আপনার সিকেল সেল রোগ হয়, তখন কোষগুলো শক্ত ও অর্ধচন্দ্রাকার হয়। এগুলো ছোট রক্তনালীতে আটকে যায় ও রক্ত চলাচলে বাধা দেয়।
ফলে হাত ও পায়ে ফোলাভাব ও যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে আছে সংক্রমণ, রক্তশূন্যতা, স্ট্রোক ও অন্ধত্ব। সিকেল সেল একটি গুরুতর ব্যাধি।
লিম্ফেডেমা
লিম্ফ সিস্টেমের তরল ভালোভাবে নিষ্কাশন না হলে ফোলাভাব ঘটে। এটি কখনো কখনো ক্যানসার চিকিৎসার একটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া।
আরও পড়ুন: সাধারণ কাশি নাকি যক্ষ্মা বুঝে নিন ৯ লক্ষণে
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে ক্যানসার পরীক্ষার জন্য তাদের বগলের লিম্ফ নোড সরিয়ে ফেলা হয়। চিকিৎসার পরে যে কোনো সময় লিম্ফেডেমা হতে পারে। এটি নিরাময় করা যায় না, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
রায়নাউডের রোগ
রায়নাউড ডিজিজ একটি বিরল সমস্যা, যা হাত-পায়ের আঙুলে রক্তনালিকে প্রভাবিত করে। বিশেষ করে যখন আপনি ঠান্ডা বা চাপে থাকেন, তখন রক্তনালিগুলো আরও সংকীর্ণ হয়ে যায়।
ফলে রক্ত প্রবাহের অভাবে আঙুল ফুলে যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। এমনকি আঙুলের রং সাদা বা নীলও হয়ে যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, রক্ত প্রবাহের অভাবে ঘা হতে পারে, এমনকি টিস্যু মেরে ফেলতে পারে।
সূত্র: ওয়েবএমডি
জেএমএস/এএসএম