চিকিৎসকের পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে কি?
গর্ভাবস্থায় নারীর বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়। তার খাবার ও বিশ্রামের ওপর নির্ভর করে গর্বস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও পুষ্টি। এ সময়ে একজন নারীর খাবারের চাহিদা থাকে গর্ভাবস্থার আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গর্ভাবস্থায় নারীকে প্রচুর খেতে হয়। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে না, রোযা রাখলেই সন্তান দুর্বল হয়ে পড়বে, এ ধারণা সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। গর্ভাবস্থায় সবার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এক রকম হয় না। অনেকেই বমি, জ্বর জ্বর লাগা, মাথা ঘুরানো, হরমোনজনিত সমস্যা, মাতৃত্বজনিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।
আবার অনেক নারীর গর্ভাবস্থায় তেমন কোনো কষ্ট হয় না। সব নারীর শারীরিক সক্ষমতা, পরিবেশ, পরিস্থিতি, মানসিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এক হয় না। এ সবকিছু একজন গর্ভবতী নারীর ওপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। রোজা রাখলে প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়। গর্ভাবস্থায় রোযা রাখতে কোনো নিষেধ নেই। কিন্তু এমন যদি হয়, রোজা রাখলে গর্ভবতী খুব বেশি অ্যাসিডিটি, দুর্বলতা, টক ঢেকুর, বুকের মধ্যে জালা পোড়া, মাথা ঘোরানো, সারাদেহে অবশ লাগা, বারো ঘণ্টার মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া দশ থেকে বারো বার বুঝতে না পারলে, চোখে ঝাপসা দেখা, রক্ত চাপ হঠাৎ কমে যাওয়া, এ ধরনের সমস্যা হলে রোযা না রাখা উত্তম।
আরও পড়ুন: গরমে কত লিটার পানি পান করলে সুস্থ থাকবেন?
অনেকে গর্ভাবস্থায় মাতৃত্বজনিত ডায়াবেটিসে ভোগেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে চিনির মাত্রা খুব দ্রুত ওঠানামা করে। মাতৃত্বজনিত ডায়াবেটিস বা গর্ভাবস্থায় আগে থেকেই নির্ণয় হওয়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রোজা রাখলে যদি খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির মাত্রা কমে যায়, অস্থির লাগে, হাত-পায়ে কাঁপুনি হয়, চোখে ঝাপসা লাগে, তাহলে রোজা রাখা অনুচিত। আর যদি রোজা থাকার পরেও একজন গর্ভস্থ নারী কোনো ধরনের শারীরিক জটিলতা অনুভব না করেন, পারিবারিক কাজ, কর্মসংস্থানের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পরেন, তাহলে তিনি রোজা রাখতে পারবেন।
অনেকের গর্ভাবস্থায় খুব বেশি ওজন বেড়ে যায়। রক্তের চিনির মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। রোজা রাখেন এ ধরনের নারীদের রক্তের চিনির মাত্রা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে যারা ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত, তাদের রক্তের সঙ্গে চিনির মাত্রার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়মিত মাপতে হবে। রোজা রাখার জন্য রক্তচাপ একেবারে কমে গেলে, খুব বেশি অ্যাসিডিটি হলে, ভয়াবহ মাথা ব্যথা, হৃদস্পন্দন খুব বেশি ওঠা-নামা করলে চিনির শরবত খেয়ে রোজা ভাঙতে হবে। কোনো ধরনের শারীরিক কষ্ট না হলে গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা যাবে। তবে শুধু গর্ভাবস্থায় নারী নয়, সবাইকেই ইফতার ও সেহরিতে অতিমাত্রায় চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে সহজে হজম হয় এ ধরনের খাবার খেতে হবে। ইনসুলিন নিতে হয় বা অতিমাত্রায় বমি হয়, এ ধরনের গর্ভবতীর রোজা না রাখা উত্তম।
আরও পড়ুন: গরমে হিট স্ট্রোক ও পানিশূন্যতা রোধে ইফতারে যা খাবেন
ইনসুলিন বা ডায়াবেটিসের জন্য ওষুধ খেতে হয়, এ ধরনের নারীরা রোজা রাখলে নিয়মিত রক্তের চিনির মাত্রা পরিমাপ করতে হবে। রোজা রাখার আগে যে মাত্রায় ইনসুলিন নিতে হতো বা ডায়াবেটিসের ওষুধ খেতে হতো, রোজা রাখার পর সেই একই পরিমাণ ডোজ না-ও লাগতে পারে। রোজা রাখার জন্য রক্তে চিনির মাত্রা কমে যেতে পারে। সারাদিন না খেয়ে থাকা এবং ইফতারির অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খেয়ে হঠাৎ ডায়াবেটিস বা অ্যাসিডিটি বেড়ে যেতে পারে। আবার সেহরিতে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে গর্ভস্থ শিশু দুর্বল হতে পারে। তাই অবশ্যই ইফতার ও সেহরিতে ফল, শাক-সবজি, ফলের রস দিয়ে তৈরি শরবতসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় রোজা রেখে বাসার বাইরে দীর্ঘসময় যাদের ডিউটি করতে হয়, তারা ইফতারের সময় ওরস্যালাইন বা ডাবের পানি খেতে পারেন। এতে পানিশূন্যতা ও দুর্বলতা কমবে। বাসার তৈরি খাবার যতটা খাওয়া যায় ততটাই ভালো। যেসব ওষুধ সকালে খেতে হয়, সেসব ওষুধ সেহরি খাওয়ার পরে খেতে হবে। আর দুপুরের খাবারের পরের ওষুধ ইফতারের পরে খাবেন। যদি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সময় হিসেব করে খেতে হয়।
এসইউ/জেআইএম