মলদ্বারে চুলকানি-ব্যথা হতে পারে যৌনবাহিত গুরুতর যে রোগের লক্ষণ
যৌনবাহিত গুরুতর এক রোগ হলো এসটিডি বা সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ। একে সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ইনফেকশনও বা এসটিআই’ও বলা হয়। যৌনবাহিত এই রোগ সম্পর্কে অনেকেরই হয়তো জানা নেই।
যৌনাঙ্গ ও মলদ্বারের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনেকেই লজ্জা পান বা সাধারণ ভেবে এড়িয়ে যান।
তবে যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারে ঘা, আঁচিল, চুলকানি, ব্যথা কিংবা লালচেভাব দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ এসব লক্ষণ কিন্তু যৌনবাহিত গুরুতর রোগ এসটিডি বা এসটিআইয়ের ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন: এইডস কেন হয় ও কীভাবে ছড়ায়? সতর্ক থাকার উপায়
২০ টিরও বেশি ধরনের এসটিডি আছে, তার মধ্যে বেশি দেখা যায়-
১. ক্ল্যামিডিয়া
২. যৌনাঙ্গে হারপিস
৩. গনোরিয়া
৪. এইচআইভি/এইডস
৫. এইচপিভি
৬. পিউবিক উকুন
৭. সিফিলিস
৮. ট্রাইকোমোনিয়াসিস।
কেন হয় এসটিডি?
এসটিডির কারণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবী। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই ছড়াতে পারে এই রোগ। তবে নারীদের শরীরে এসটিডি গুরুতর প্রভাব ফেলে।
কিছু এসটিডি যেমন- হারপিস ও এইচপিভি ত্বক থেকে ত্বকের সংস্পর্শেও ছড়িয়ে পড়ে। আবার একজন গর্ভবতী নারীর এসটিডি থাকলে তা নবজাতকের গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই যৌনবাহিত এই রোগ ও এর লক্ষণ সম্পর্কে সবারই ধারণা থাকা জরুরি-
শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াও যে কারণে হতে পারে এইডস
যৌনাঙ্গে ঘা বা আঁচিল
যৌনাঙ্গে বেদনাদায়ক ঘা বা আঁচিল লক্ষ্য করলে তা এড়িয়ে যাবেন না। যদি তা যৌন ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ না করে, তবুও সেটি উপেক্ষা করবেন না। না হলে কিন্তু গুরুতর সমস্যায় পড়তে পারেন।
এসটিডির কারণে শরীরের অন্যান্য অংশে ঘা বা আঁচিল ছড়িয়ে পড়তে পারে। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে ঘা বাড়তে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাসের (এইচপিভি) লক্ষণ এটি।
মলদ্বারে চুলকানি, ব্যথা বা রক্তপাত
মলদ্বারে চুলকানি ও স্রাব বের হওয়ার লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মলদ্বারে চুলকানি ও ব্যথার লক্ষণ হতে পারে যৌনাঙ্গে হার্পিস বা গনোরিয়ার ইঙ্গিত। তাই সতর্ক থাকুন।
লিঙ্গ বা যোনি থেকে অস্বাভাবিক স্রাব
এসটিডি না হলেও এই লক্ষণ কিন্তু গুরুতর কোনো রোগের ইঙ্গিত হতে পারে। যদি প্রায়ই মলদ্বার থেকে অস্বাভাবিক স্রাব বের হয় তাহলে তা হতে পারে যৌনবাহিত রোগের লক্ষণ।
এছাড়া যৌনাঙ্গ থেকে অতিরিক্ত স্রাব বের হওয়ার লক্ষণও উপেক্ষা করা উচিত নয়। এই উপসর্গ এসটিআইয়ের ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগের। এই লক্ষণ দেখলেও দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।
আরও পড়ুন: এইডস নিয়ে যত ভুল ধারণা
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাব
প্রস্রাব করার সময় প্রচণ্ড ব্যথা এসটিডির ইঙ্গিত দেয়। বিশেষজ্ঞরা এই লক্ষণকে এসটিডির প্রাথমিক উপসর্গ বলে বিবেচনা করেছেন। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এই লক্ষণ উপেক্ষা করেন।
শুধু এসটিডির কারণেই নয়, ইউরিন ইনফেকশন কিংবা ডিহাইড্রেশনের কারণেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও বারবার প্রস্রাবের তাগিদ অনুভব করার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তবে যাই হোক না কেন এসব লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যৌনাঙ্গে চুলকানি ও লালচেভাব
যৌনাঙ্গে ক্রমাগত চুলকানি, ফুসকুড়ি কিংবা স্রাব বের হলে দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে। অপরিচ্ছন্নতার কারণেই মূলত যৌনাঙ্গে চুলকানির সমস্যা বেশি হয়। যৌনবাহিত সংক্রমণের কারণে যৌনাঙ্গে ও তার আশপাশে বেদনাদায়ক ফুসকুড়ি হয়।
মুখে ফোসকা বা ঘা
শুধু ভিটামিনের ঘাটতিই নয় বরং মুখের ঘা কিন্তু হতে পারে এসটিডির অন্যতম এক লক্ষণ। এক্ষেত্রে কখনো কখনো মুখ ও গলার চারপাশে আঁচিলের মতো হতে পারে।
তবে এটি অত্যন্ত বিরল। সাধারণত হারপিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া ও সিফিলিসের মতো এসটিআইয়ের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
যোনিতে অস্বাভাবিক গন্ধ
যোনি থেকে অদ্ভুত গন্ধ টের পেলে বুঝবেন আপনি গুরুতর এসটিআইয়ে সংক্রমিত। এই উপসর্গ এসটিআইয়ের ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগের অন্যতম লক্ষণ। পুরুষাঙ্গ বা যোনি থেকে ঘন, মেঘলা বা রক্তাক্ত স্রাব মারাত্মক যৌনবাহিত রোগ গনোরিয়ার ইঙ্গিত দেয়।
যৌন সংক্রামিত রোগ (এসটিডি) প্রতিরোধের উপায় কী?
ল্যাটেক্স কনডমের সঠিক ব্যবহার এসটিডি ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে সম্পূর্ণভাবে দূর করে না। যদি আপনার বা আপনার সঙ্গীর ল্যাটেক্সে অ্যালার্জি থাকে তাহলে পলিউরেথেন কনডম ব্যবহার করতে পারেন। সংক্রমণ এড়ানোর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় হলো পায়ুপথ, যোনিপথ বা ওরাল সেক্স না করা।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া/মেডিলাইনপ্লাস
জেএমএস/এমএস