শরীরে ক্যানসার আছে কি না বুঝে নিন লক্ষণ দেখেই
ক্যানসার হলো এক মারণব্যাধি। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ রোগীই সুস্থ হয়ে ওঠেন সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে। তবে ক্যানসার যদি শরীরে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে রোগীর সারভাইভ করার সম্ভাবনা খুব কমই থাকে।
তাই ক্যানসার নিয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। জীবনযাত্রায় অনিয়ম, একাধিক শারীরিক সমস্যা কিংবা বংশগত কারণেই বেশিরভাগ মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এই রোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো ক্যানসার প্রতিরোধে সজাগ থাকা সবারই।
সাধারণ কিছু শারীরিক সমস্যাও হতে পারে ক্যানসারের মারাত্মক লক্ষণ। অনেকেই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, পেটে ব্যথা, ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়াসহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করেন।
এসব সাধারণ সমস্যাই হতে পারে ক্যানসারের মারাত্মক লক্ষণ। জেনে নিন ক্যানসারের সাধারণ কয়েকটি লক্ষণ সম্পর্কে। যেগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ত্বকে সমস্যা
ত্বকের ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, নতুন দাগ কিংবা ফুসকুড়ির সমস্যা। এক্ষেত্রে ত্বকে এমন দাগ হতে পারে যা কিছুটা অস্বাভাবিক। এমন কিছু ত্বকে দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত কাশি
এই ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ ও গুরুতর লক্ষণ হলো কাশি। যারা ধূমপায়ী নন তাদেরও এ লক্ষণটি দেখা দেয়। একই সঙ্গে হাঁপানি, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও ফুসফুস সংক্রমণের লক্ষণ। পাশাপাশি রক্ত কাশিও হতে পারে। যা ক্যনসারের মারাত্মক লক্ষণ।
স্তনে পিণ্ড, ব্যথা বা তরল নিঃসরণ
প্রতিবছর বিশ্বের হাজারো নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্তনের যে কোনো সমস্যা যেমন- ব্যথা, স্তনবৃন্ত পরিবর্তনসহ কোনো তরল পদার্থ বের হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। তিনি পরীক্ষা করবেন ও একটি ম্যামোগ্রাম, এমআরআই বা বায়োপসি করার সুপারিশ দেবেন।
পেট ফুলে থাকা
পেলভিক বা নারীর জননাঙ্গের ক্যানসারের উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- পেট ফুলে থাকা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস, পিঠে ব্যথা ইত্যাদি।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের মধ্যে মূত্রনালির সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে প্রসাবে জ্বালা-পোড়া, ঘন ঘন প্রসাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ সাধারণভাবে নেবেন না, কারণ এটি হতে পারে প্রোস্টেট ক্যানসারের লক্ষণ।
ঠান্ডা বা গলা ব্যথা
গলায়, বগলসহ শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে শিমের বীজের মতো গ্রন্থি থাকে। যখন এসব গ্রন্থি কোনো কারণে ফুলে ওঠে তখন আপনি ঠান্ডা বা গলা ব্যথায় ভুগতে পারেন। কিছু ক্যানসার যেমন লিম্ফোমা ও লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রেও এ ধরনের ফোলাভাব হতে পারে।
রক্তাক্ত মল
স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যার ইঙ্গিত দেয় মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়ার লক্ষণ। হেমোরয়েড বা কোলন ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে রক্তাক্ত মল। একই সঙ্গে প্রস্রাবে রক্ত দেখা দেওয়া মূত্রনালির সংক্রমণ, কিডনি ও মূত্রাশয়ের ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
অণ্ডকোষে মাংসপিণ্ড
পুরুষরা যদি অণ্ডকোষের মধ্যে ফোলাভাব দেখতে পান তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অণ্ডকোষে ব্যথাহীন ফোলাভাব বা মাংসপিণ্ডও কিন্তু টেস্টিকুলার ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
গিলতে কষ্ট হওয়া
সাধারণত ঠান্ডা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা ওষুধ খাওয়ার সময় গিলতে কষ্ট হতে পারে। তবে সব সময়ই যদি গিলতে অসুবিধা বা কষ্ট হয় তাহলে কণ্ঠনালির ক্যানসারে ভুগতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসক বেরিয়াম এক্স-রে করার পরামর্শ দেবেন।
মাসিক ছাড়া রক্তপাতা হওয়া
সব নারীর ক্ষেত্রেই প্রতি মাসে পিরিয়ড হওয়া স্বাভাবিক। তবে শারীরিক সম্পর্ক করার সময় কিংবা অন্য যে কোনো কারণে পিরিয়ড ছাড়াই অধিক রক্তপাতের লক্ষণ দেখা দেওয়া চিন্তার কারণ হতে পারে। জরায়ু বা যোনি ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে এটি।
মুখে ঘা
অনেকেরই মুখে সাদা, লাল দাগ বা ঘা হয়ে থাকে। যা সহজে সারতে চায় না। বিশেষ করে যদি আপনি ধূমপান করেন তাহলে এমন ঘা অবহেলা করবেন না। হতে পারে এটি মুখের ক্যানসারের লক্ষণ।
একই সঙ্গে যদি চোয়াল নাড়তে সমস্যা হয় বা মুখে ব্যথা ও দুর্গন্ধ হয়ে থাকে তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওজন কমে যাওয়া
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটি অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, খাদ্যনালি, ফুসফুসসহ বিভিন্ন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
জ্বর
শারীরিক বিভিন্ন অসুখের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় জ্বর। কিছু ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াতেও এটি হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে জ্বরে ভোগা রক্তের ক্যানসারের কারণ হতে পারে যেমন- লিউকেমিয়া বা লিম্ফোমা।
বদহজম
প্রায়ই কি আপনি বদহজমে ভুগছেন? এটি সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। হতে পারে এটি পেটের ক্যানসারের লক্ষণ।
ক্লান্তি
অত্যাধিক ক্লান্তিও ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। লিউকেমিয়ার মতো ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো ক্লান্তি।
আবার কোলন বা পেটের ক্যানসারের রোগীরাও খুব ক্লান্ত বোধ করেন। তাই দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তিভাব পিছু না ছাড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: ওয়েব এমডি
জেএমএস/জেআইএম