শারীরিক যে ১১ লক্ষণ নারীরা কখনো অবহেলা করবেন না
শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাকে সাধারণ ভেবে প্রায়ই অবহেলা করেন বেশিরভাগ নারীই। আর এ কারণে অনেক কঠিন রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।
তবে এই ভুল কখনো করবেন না, তাহলে পড়তে পারেন বিপদে। সামান্য ক্লান্তির উপসর্গও কিন্তু মারণব্যাধি ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই নারীরা কখনো শারীরিক এই ১১ লক্ষণ অবহেলা করবেন না-
হঠাৎ দুর্বলতা
মুখ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে হঠাৎ দুর্বলতা স্ট্রোকের ইঙ্গিত দিতে পারে। একই সঙ্গে হঠাৎ বিভ্রান্তি, কথা বলতে সমস্যা, ঝাপসা দৃষ্টি ও হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে এক্ষেত্রে। পরিবার ও বন্ধুদের পাশাপাশি আপনারও এই লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট
কিছু নারীদের হৃৎপিণ্ডে যখন পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ পায় না তখন শরীরচর্চা করার সময় তাদের শ্বাসকষ্ট হয়। তবে বেশিরভাগ নীরব হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে নারীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও চরম ক্লান্তিসহ বুকে ব্যথার লক্ষণ দেখা দেয়।
আবার অ্যানিমিয়া ও ফুসফুসের রোগও হতে পারে নারীদের শ্বাসকষ্টের সাধারণ কারণ। তাই কখনো শ্বাসকষ্টকে অবহেলা করবেন না।
বুকে ব্যথা
আপনি যদি বুকে ব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন, আপনার বাহু, কাঁধ বা চোয়ালে ব্যথা অথবা শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তবে এই লক্ষণগুলো হার্টের অবস্থা নির্দেশ করতে পারে।
ঝাপসা দৃষ্টি
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে, কিন্তু যদি হঠাৎ করেই দেখতে অসুবিধা হয় বা এক বা উভয় চোখে ঝাপসা দৃষ্টি লক্ষ্য করেন তাহলে এটি স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
একইভাবে যারা মাইগ্রেনে ভুগছেন তারা ফ্ল্যাশিং লাইট বা রঙিন আলো চোখের সামনে ভাসতে দেখতে পারেন। একই উপসর্গ আবার রেটিনা ছিঁড়ে বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। দ্রুত এর চিকিৎসা করা না হলো আপনি অন্ধও হয়ে যেতে পারেন।
হঠাৎ ওজনে পরিবর্তন
কোনো নির্দিষ্ট প্রচেষ্টা ছাড়াই হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি, লিভারের রোগ বা ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ কারণ হতে পারে ওজন পরিবর্তনের।
আবার যদি দেখেন ডায়েট বা কার্যকলাপের মাত্রা পরিবর্তন না করেও ওজন বাড়ছে তাহলে এটি নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড, বিষণ্নতাসহ অন্যান্য বিপাকীয় রোগ নির্দেশ করতে পারে।
অস্বাভাবিক স্তন পিণ্ড
স্তনের ত্বকে কোনো আলগা পিণ্ড বা রঙে পরিবর্তন এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না। এই ধরনের পরিবর্তন স্তন ক্যান্সারের উপস্থিতি নির্দেশ করতে পারে।
নাক ডাকা ও অতিরিক্ত ঘুম
আপনি যদি হঠাৎ করেই যেখানে সেখানে গভীর ঘুমিয়ে পড়েন ও নাক ডাকেন তাহলে তা হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।
যদি এর চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা ও ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এমনকি এই রোগের কারণে ঘুমের মধ্যে নিঃশ্বাস আটকে অনেকে মারাও যান।
অতিরিক্ত ক্লান্তি
বিভিন্ন কারণে আপনি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন। তবে আপনি যদি ক্রমাগত ক্লান্তি অনুভব করেন তবে তা হতে পারে অন্তর্নিহিত বিপাকীয় ব্যাধি বা ক্যানসার। ডিমেনশিয়া বা পারকিনসন রোগের মতো গুরুতর প্রদাহজনক অবস্থার কারণ।
অতিরিক্ত চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ জীবনের একটি অংশ। এর মানে এই নয় যে এটি উপেক্ষা করা উচিত। আপনি যদি দেখেন, দিন দিন স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে বা আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মে তা হস্তক্ষেপ করছে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ত্বকের পরিবর্তন
ত্বকের যে কোনো পরিবর্তনের জন্য আপনার সতর্ক হওয়া উচিত। আপনার বগলে বা আপনার ঘাড়ের পেছনের ত্বকে কালো হয়ে যাওয়া ও ত্বকের একাধিক ট্যাগ ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে।
খসখসে, আঁশযুক্ত বৃদ্ধি অ্যাক্টিনিক বা সৌর কেরাটোসিসের মতো একটি প্রাক-ক্যানসারস অবস্থা নির্দেশ করতে পারে।
মাসিকের পরিবর্তন
অনিয়মিত পিরিয়ড বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ মোটেও ভালো কোনো লক্ষণ নয়। হঠাৎ করেই মাসিকের পরিমাণ, সময়কাল, প্রবাহ ও ব্যথার কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কারণ এসব মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা মেনোপজ, পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় বা জরায়ু ফাইব্রয়েডের সঙ্গে জড়িত হতে পারে।
এমনকি পেলভিক সংক্রমণ ও গাইনোকোলজিক্যাল ক্যানসারের মতো গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে মাসিকের সমস্যা। আবার মেনোপজের পরও যদি রক্তপাত দেখা দেয় তাহলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: বোল্ড স্কাই
জেএমএস/জেআইএম