ঈদ ফ্যাশনে ‘কাফতান’, কোথায় পাবেন ও কত দাম?
জান্নাতুল মাওয়া সুইটি
কাফতান একটি প্রাচীন পোশাক। প্রাচীন পারস্যে উদ্ভূত হয়েছিল এই পোশাক। পরে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কাফতান। অতীতে এই পোশাক নারী-পুরুষ উভয়ই পরতেন।
তবে বর্তমানে নারীদের কাছেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে প্রাচীন পোশাক কাফতান। ফ্যাশনে এখন কাফতান বেশ জনপ্রিয়। অনলাইন থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটে এখন সহজেই সাধ্যের মধ্যে কিনতে পারবেন কাফতান।
এবারের ঈদ ফ্যাশনেও জায়গা করে নিয়েছে বিশেষ এই পোশাক। গরমে স্বস্তি দিতে কাফতানের জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ঘরে পরার জন্যও এখন নারীরা বেছে নিচ্ছেন এই পোশাক।
ফ্যাশনে যেভাবে এলো কাফতান
কাফতান শব্দটি ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইংরেজি ভাষায় এসেছে, যখন এটি তুর্কি শব্দ হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছিল। পারস্যে উদ্ভূত কাফতান এক সময় ছড়িয়ে পড়ে আরব বিশ্বে। সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ই পরতেন এই পোশাক।
বিশেষ করে মরক্কোর পণ্ডিত ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাই কাফতান পরতেন। আবার দাম্পত্যের পোশাকের অংশ হিসেবেও পরা হত এটি।
ইসলামি যুগে বেশিরভাগ শহুরে নারীরা বাড়িতে কাফতান পরতেন। চওড়া হাতা ও ঢিলেঢালা হওয়ায় বেশিরভাগ নারীরাই এই পোশাক সব সময় পরতে পছন্দ করতেন।
হাজার হাজার বছর ধরে ফ্যাশনে জায়গা ধরে রেখেছে কাফতান। কিছু সংস্কৃতিতে আজও কাফতান রাজকীয়তার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
কাফতানেও আছে পার্থক্য
কাফতানের মধ্যেও বেশ পার্থক্য আছে। কেউ পছন্দ করেন শর্ট বা টপস স্টাইলের কাফতান। আবার অনেকেই থ্রি-কোয়ার্টার কাফতান পরতে পছন্দ করেন।
ফ্যাশনের খাতিরে অনেকে আবার লং কাফতানও পরেন। গর্ভবতী নারীদের কাছে কাফতান ড্রেসটি সবার পছন্দের শীর্ষে আছে।
ভারতের সেলিব্রিটি ডিজাইনার রাজদীপ রানাওয়াত বলেন, ‘বিভিন্ন দৈর্ঘ্যে যেমন- ২৮ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৩২ ইঞ্চি পর্যন্ত এমনকি পা পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৬০ ইঞ্চি পর্যন্তও নেমে যাচ্ছে কাফতানের দৈর্ঘ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে মৌলিক কাফতান ছাড়াও, নতুন ডিজাইন ও কাফতানের আকার-আকৃতি নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। কাফতান স্টাইলের শার্ট, ড্রেপেড ড্রেস, জ্যাকেট এবং টিউনিকস নিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।’
ভারতীয় স্টাইলিস্ট বকুল দত্ত কাফতান প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ পোশাকটি ভারতীয়দের কাছে পূর্বপরিচিত। কারণ অনেকেই কাফতান স্টাইলের পোশাক রাতে ঘুমানোর জন্য নাইট ড্রেস হিসেবে পরে থাকেন।’
‘তবে আজ আর এটি নাইট ড্রেসেই সীমাবদ্ধ নয়। কাফতান এখন ট্রানজিশনাল পোশাক হিসেবে সবখানেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’
কোথায় কেমন কাফতান পরবেন?
অনেকেই বাড়িতে পরার জন্য সুতি বা লিলেনের কাফতান ব্যবহার করেন। আবার রেগুলার অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য জর্জেট কিংবা সাটিন বা সিল্কের কাফতান পরতে পারেন।
আর বিভিন্ন পার্টি কিংবা বিশেষ অনুষ্ঠানে বাহারি কারুকাজসম্পন্ন কাফতান পরুন নিশ্চিন্তে। খুবই আরামদায়ক এ পোশাক সব ঋতুতেই মানানসই।
কাফতান কোথায় পাবেন ও কত দাম?
সুতি, লিলেন, জর্জেটসহ বিভিন্ন কাপড়ে কাফতান আপনি এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে পেয়ে যাবেন। দাম ৫০০-৫০০০ হাজারের মধ্যে পেয়ে যাবেন।
কাপড়, দৈর্ঘ্য ও কাফতানের ডিজানের উপর নির্ভর করে এর দাম। অনেক কাফতানে থাকে সুতার কাজ বা অ্যাম্ব্রোয়েডারি।
কোনোটিতে আবার সিকুয়েন্স, পার্ল, স্টোন ওয়ার্ক করা থাকে। অনেকে আবার চাইলে বেশি দাম দিয়ে ডিজাইনার কাফতানও কিনতে পারেন।
বর্তমানে অনলাইনের বিভিন্ন পেইজ, কমার্শিয়াল সাইট থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেট কিংবা শপিংমলে সহজেই পেয়ে যাবেন চাহিদাসম্পন্ন এই পোশাক।
কাফতানে স্টাইল করার উপায়
>> কোমরে একটি বেল্ট ব্যবহার করুন। যেহেতু কাফতান অনেক ঢিলেঢালা হয় তাই বেল্ট পরলে কোমরের দিক থেকে বেশ সুন্দর ও মানাসই দেখাবে। এটি স্টাইলে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে।
>> কোনো উৎসবে বা অনুষ্ঠানে কাফতান পরলে এর সঙ্গে অনেকগুরো জুয়েলারি পরতে পারেন। বিশেষ করে কাফতানের সঙ্গে সিলভার জুয়েলারি বেশ মানায়।
>> অফিসে বা আউটিংয়ে কাফতান পরলে এর সঙ্গে স্কার্ফ ব্যবহার করলে দারুন একটি লুক পাবেন।
জেএমএস/এমএস