উচ্চ রক্তচাপ কী? হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে করণীয়
বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশেও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ১৭ মে ‘বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস’। এ সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালিত হয়।
উচ্চ রক্তচাপের ফলে সৃষ্ট সমস্যা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. সামিউল আউয়াল সাক্ষর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম-
উচ্চ রক্তচাপ কী?
মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ। সাধারণত রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, তাহলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলা হয়।
অর্থাৎ রক্তচাপ যখন ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারদ চাপের বেশি হয়; তখন ওই অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে অনেক সময় অনেকেই ‘প্রেসার‘ হিসেবে অভিহিত করেন।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ আগে থেকে সবারই জেনে রাখা উচিত। তাহলে এ সমস্যা দেখা দেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কী কী?
-দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
-বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ অনুভব করা
-শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
-নাক দিয়ে রক্ত পড়া
-মাথাব্যথা
-মাথা ঘোরা
-অনিদ্রা ও ক্লান্তি
-প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া
-শরীরের অঙ্গ বিশেষের দুর্বলতা বা অবশ হয়ে যাওয়া
-অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
-অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ কী কী?
-পারিবারিক বা বংশগত
-জিনগত কারণ
-বয়স
-শারীরিক কসরত না করা
-তামাকজাত দ্রব্য গ্রহণ বা ধূমপান
-লবণ বেশি খাওয়া
-মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা
-অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
-মদপান
-স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া
-গর্ভাবস্থা বা প্রেগনেন্সি
-কিডনির সমস্যা
-থাইরয়েডের সমস্যা
-হাইপার প্যারাথাইরয়েডিজম
-ফিওক্রমসাইটোমা
-এড্রেনাল গ্রন্থির সমস্যা
-কুশিং সিনড্রোম
-এক্রোমেগালি
-বিভিন্ন ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে কী করবেন?
যদি কারো রক্ত চাপ হঠাৎ খুব বেশি বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রোগী যদি দাঁড়িয়ে থাকেন; তাহলে অবশ্যই বসে অথবা শুয়ে পড়তে হবে ও তার বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। জরুরি অবস্থা হিসেবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হবে।
উচ্চরক্তচাপ শরীরে কী কী ক্ষতি করে?
>> দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত ও চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপের কারণে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এ ছাড়া আরও কিছু মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
>> উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়। ফলে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
>> উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনিও নষ্ট হতে পারে।
>> এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্তচাপ বেড়ে যায়। যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
>> এমনকি চোখের রেটিনাতে রক্তক্ষরণ হয়ে অন্ধত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে উচ্চ রক্তচাপের কারণে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
>> উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ডাক্তারের পরামর্শের পাশাপাশি একটি সুপরিকল্পিত খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি ।
>> ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
>> অতিরিক্ত লবণ ও চিনি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
>> সোডিয়াম বহুল খাবারও কম খেতে হবে।
>> তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব কম খেতে হবে।
>> প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা হাঁটতে হবে।
>> পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
>> যতটা সম্ভব মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
>> ধূমপান ও মদপান থেকে বিরত থাকুন।
>> নিয়মিত রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
জেএমএস/এসইউ/এএসএম