মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না বুঝে নিন ৫ লক্ষণে
কর্মব্যস্ত এই পৃথিবীতে লাখ লাখ মানুষ মানসিক অবসাদে ভুগছেন। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার জন্য সবাই চিকিৎসকের কাছে দৌড়ালেও, মানসিক সমস্যার বিষয়গুলোকে অনেকেই প্রাধান্য দেন না। এর ফলে দিন দিন মানসিক সমস্যা গুরুতর আকারে রূপ নেয়। যার ফলে অনেকে আত্মহত্যা করতেও পিছপা হন না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, হতাশা বা মানসিক অবসাদ একটি সাধারণ অসুস্থতা। বিশ্বের প্রায় ৩.৮ শতাংশ জনসংখ্যা এ সমস্যায় ভুগছেন। সে হিসাবে বিশ্বের প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মানুষ মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছেন। যার মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কের সংখ্যা ৫০ শতাংশ ও ৫.৭ শতাংশ হলো ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ মানুষ মানসিক অবসাদের কারণে আত্মহত্যা করেন। যার মধ্যে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের সংখ্যাই বেশি।
আমরা অনেকেই রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, বিরক্তি কিংবা দুঃখবোধকে হলকাভাবে নিয়ে থাকি। তবে এ বিষয়গুলোই কিন্তু মানসিক সমস্যার প্রাথমিক ও প্রধান লক্ষণসমূহ। সাধারণ এসব সমস্যা দিন দিন মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়।
তাই নিজের মধ্যে এসব লক্ষণ দেখলে দেরি করবেন না বরং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আরও কিছু লক্ষণ আছে যার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না-
>> আপনি কি অধৈর্য কিংবা অতিরিক্ত রাগান্বিত বোধ করেন সব সময়? এর কারণ হলো মানসিক অবসাদ। যা আপনার মেজাজ খারাপ করে তোলে। এর ফলে আপনার মেজাজ খিটখিটে হতে পারে।
এমন অবস্থায় আপনার সামনে থাকা ব্যক্তিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। মানসিক অবসাদ গুরুতর আকারে পৌঁছালে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
>> যারা মানসিক সমস্যা যেমন- হতাশা, দুশ্চিন্তা কিংবা অবসাদে ভুগছেন তারা কোনো কাজেই সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারেন না। এর ফলে নিজের প্রতিই আত্মবিশ্বাস কমতে শুরু করে।
ফলে যে কোনো কাজ কঠিন লাগতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, যে কাজটি কিছুদিন আগেও আপনার কাছে সহজ লাগত হঠাৎ করেই তা কঠিন মনে হচ্ছে। কিংবা কাজে বারবার ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
>> গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করেন তারা ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না। কারণ চোখ বন্ধ করলেই তারা মানসিক অবসাদে আরও ডুবে যান।
অনিদ্রার কারণে এমন ব্যক্তিরা পরের দিন স্বাভাবিকভাবেই ক্লান্তিতে ভোগেন। সব মিলিয়ে সমস্যা বাড়তেই থাকে। তাই এমন সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে।
>> মাদকাসক্তির অন্যতম কারণ হলো মানসিক অবসাদ। ধূমপান থেকে শুরু করে মদ্যপানসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার যারা করেন তাদের বেশিরভাগই অবসাদে ভোগেন।
আর তারা এসবের মাধ্যমে মানসিক স্বস্তি পেতে চান। তবে এমন ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ এর ফলে শারীরিক আরও সমস্যা ডেকে আনেন আপনি।
>> মানসিক ক্লান্তি আপনার সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে ট্রিগার করে। এটি আপনার ‘ফাইট বা ফ্লাইট’ মোড। উদ্বেগ হলো, একটি অ্যালার্ম যা আপনাকে দুশ্চিন্তাগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়।
আপনি যদি সব সময় মানসিকভাবে ক্লান্তবোধ করেন, তাহলে আতঙ্কিত বা চিন্তিত হবেন বারবার। এটি বিষণ্নতার লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এসব সমস্যা প্রতিকারের উপায়-
দীর্ঘদিন একটানা পরিশ্রম ও মানসিক চাপের কারণে এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ কারণে অল্প বিরতি নেওয়া জরুরি। ফলে আপনি হয়তো কম ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।
বিশ্রামের মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন। এজন্য প্রতি ১-২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর নিজেকে কিছুটা সময় দিন কিংবা ৫-১০ মিনিট বিশ্রাম নিন।
অনেকেই মানসিক চাপ এড়াতে ‘পোমোডোরো টেকনিক’ ব্যবহার করেন। এটি কীভাবে করতে হয় জেনে নিন-
>> ২৫ মিনিটের জন্য একটি টাইমার সেট করুন।
>> পুরো সময় একটি কাজে মনোযোগ দিন।
>> টাইমার বন্ধ হয়ে গেলে ৫ মিনিটের বিরতি নিন।
>> এরপর আবারও ২৫ মিনিট কাজে পর ১৫-৩০ মিনিটের জন্য বিরতি নিন।
সূত্র: ওয়েব এমডি
জেএমএস/জেআইএম