দীপিকা-বিদ্যা ওসিডি’তে ভুগছেন, জানুন এই রোগের লক্ষণ
চিন্তা-ভাবনা সবাই করে থাকেন। তবে অবসেশন হলো একই চিন্তা, কোনো ছবি বা ইচ্ছা নিয়ে বারবার চিন্তা করা। অনেকেই বুঝতে পারেন না, এমটি ঘটা আদতে একটি রোগ। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতে পারেন না যে, একই বিষয়ে তার ভাবনা অর্থহীন। তবুও তিনি ওই চিন্তাই বারবার করেন।
আসলে তিনি ওই ভাবনা বা ইচ্ছা থেকে নিজেকে আটকাতে পারেন না। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দেয় অস্বস্তি। ধরুন, আপনি ঘরের দরজায় তালা দিয়েই বেড়িয়েছেন, তবে অফিসে পৌঁছানোর পরই মনো হলো দরজায় তালা দেওয়া হয়নি। এই চিন্তা বারবার মনে আসতেই আপনার অস্বস্তি তৈরি হবে।
অন্যদিকে কমপালসন হলো ওই ‘অবসেসিভ’ চিন্তা বা ইচ্ছাগুলোকে কমানোর জন্য ব্যক্তি যে কাজগুলো করেন। যেমন, ওই ব্যক্তি তার অহেতুক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে বাড়ি গিয়ে পুনরায় চেক করলেন তিনি আসলেই তালা দিয়েছেন কি না। অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (ওসিডি) বা কমপালসন দু’টিই একসঙ্গে হতে পারে।
একই বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ফলে এমন রোগীর জীবন জটিল হয়ে ওঠে। ওসিসিডি’র রোগীরা বারবার জিনিস গণনা করা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, অতিরিক্ত পরিষ্কার করা বা দরজা -জানালা বন্ধ লক করা আছে কি না তা পরীক্ষা করা ইত্যাদি বিষয়ে সজাগ থাকেন সব সময়। এসব ক্রিয়াকলাপ কখনও কখনও এমন পরিমাণে বৃদ্ধি পায় যে তাদের জীবনকেও বিপন্ন করে তোলে।
বলিউডের জনপ্রিয় নায়িকা দীপিকা পাডুকোনও ওসিডি’তে ভুগছেন। তিনি একবার সাক্ষাৎকারে জানান, ‘আমার ওসিডি বেশি জ্বালায় না। যদিও অনেকের জন্যই এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। যখনই আমি ভ্যানিটি ভ্যানে যাই, চারপাশ পরিষ্কার করতে শুরু করি। চারপাশ নোংরা হলো আমার দমবন্ধভাব হয়।’
একই রোগে ভুগছেন বলিউডের আরেক জনপ্রিয় নায়িকা বিদ্যা বালানও। তিনিও দীপিকার মতো সব সময় পরিষ্কার করতে থাকেন চারপাশ। তিনিও একেবারেই নোংরা পছন্দ করেন না। তার বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। এমনকি যদি সে কোথাও সামান্য ধুলো দেখে সেখানেই পরিষ্কার করতে শুরু করেন। এমনকি জায়গার জিনিস সেখানে না থাকলেও ক্ষেপে যান বিদ্যা বালান।’
ওসিডি’র লক্ষণসমূহ
>> হঠাৎই বিভিন্ন রকম আতঙ্ক তৈরি হয় মনে
>> বিশেষ বস্তু বা অবস্থাকে কেন্দ্র করে ভয় ও আতঙ্ক বেড়ে যাওয়া
>> বদ্ধ জায়গার ভয়, ভীড়, ট্রেনে-বাসে উঠতে ভয় পাওয়া
>> ফাঁকা জায়গায় একা যেতে ভয় (অ্যাগোরাফোবিয়া)
>> অন্ধকারের ভয় (নিক্কোফোবিয়া)
>> কঠিন রোগ-ব্যাধির ভয় (প্যাথোফোবিয়া)
>> একাকীত্বের ভয় (মোনোফোবিয়া)
>> রক্ত দেখলে ভয় (হেমাটোফোবিয়া)
>> উঁচুস্থানের ভয় (অ্যাক্রোফোবিয়া) ইত্যাদি।
বহুবিধ আতঙ্ক ওসিডি রোগীর মধ্যে দেখা যায়। এ ধরনের আতঙ্কজনিত উৎকণ্ঠার শারীরিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় দমবন্ধ ভাব, বুক-ধড়ফড়ানি, গলা শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
কেন হয় ওসিডি?
মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষ দিয়ে তৈরি অনেকগুলো স্নায়ু থাকে। এমনই একটি স্নায়ু হলো কর্টিকো-স্ট্রায়াটো-থ্যালামো-কর্টিক্যাল (সি-এস-টি-সি)। কোনো কাজ বা চিন্তা করার সময় কোথায় থামতে হবে তা এই স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ করে।
ওসিডি’র সমস্যায় ‘সি-এস-টি-সি’ সার্কিট ঠিকমতো কাজ করে না। আর তাই রোগী বুঝে উঠতে পারেন না তিনি যে বিষয়ে ভাবছেন তা থামানো কখন থামানো উচিত। এ কারণেই একই চিন্তা মনে বারবার আসতে থাকে। আর ওই একই কাজ বারবার করার প্রবণতাও দেখা দেয়।
ওসিডি হলে যা করবেন
>> নিয়মিত যোগব্যায়ামের অভ্যাস করুন।
>> ব্রিদিং এক্সারসাইজ এই রোগীদের স্ট্রেস ও টেনশন কমানোর জন্যে কার্যকরী।
>> পর্যাপ্ত ঘুম ও শরীরচর্চা করতে হবে।
>> অ্যালকোহল আর নিকোটিন অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
>> মিষ্টি খাবার ওসিডি রোগীর জন্যে ক্ষতিকর।
>> কোমল পানীয়, ক্যান্ডি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার এমন রোগীর খাওয়া নিষেধ। এতে উৎকণ্ঠা আর প্যানিক অ্যাটাক বাড়তে পারে।
>> কফিও খাওয়া নিষেধ এমন রোগীদের। তবে দু’-এক কাপ চা চলতে পারে।
>> সব ধরনের ফল ওসিডি রোগীরা খেতে পারেন।
>> এমন রোগীদের খাদ্যতালিকায় প্রক্রিজাত করা খাবার রাখা যাবে না। এতে অ্যাংজাইটি অ্যাটাক বাড়তে পারে।
সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া/ওয়েবএমডি/প্রেসওয়্যার১৮
জেএমএস/জেআইএম