চোখের শুষ্কতা কমবে নারকেল তেল ব্যবহারে!
হাঠৎ চোলে জ্বালা-পোড়া ভাব, খচখচানি, চুলকানিসহ নানা অস্বস্তি হয়ে থাকে প্রায়শই! প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের ক্ষেত্রেই এটি একটি সাধারণ সমস্যা! চোখের শুষ্কভাবের কারণে এমনটি হয়ে থাকে।
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারে কাজ করা কিংবা স্মার্টফোনের মনিটরে চোখ রাখা এর অন্যতম কারণ। আরেকটি কারণ হলো চোখের অশ্রুগ্রন্থি থেকে অ্যাকুয়াস হিউমার নিঃসরণ কমে গেলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়।
যদিও চিকিৎসকরা চোখের শুষ্কভাব কমানোর জন্য নিয়মিত আই ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে প্রাকৃতিকভাবেও চোখের শুষ্কভাব কমানো যেতে পারে।
কেন চোখ শুষ্ক হয়?
বয়স বাড়লে চোখ শুষ্ক হতে থাকে। তবে যেকোনো বয়সেই এটি দেখা যেতে পারে! চোখের শুষ্কতা দীর্ঘস্থায়ী বা মারাত্মক হওয়ার পেছনে নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। যেমন- বিভিন্ন ধরণের ওষুধ সেবনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে।
চোখ শুষ্ক হয়ে গেলে অনেক সময় চোখ ও চোখের অশ্রুনালীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও দাদরোগ, মুখের পক্ষাঘাত, এইচআইভি, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস রোগ থেকে চোখের এই শুষ্কতা ছড়াতে পারে। অনেক সময় চোখের ত্বক ও পাপড়ি জ্বালাপোড়ার কারণে চোখের অশ্রুগ্রন্থি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আরও একটি কারণ হলো ল্যাসিক সার্জারি। দেখা যায়, এই সার্জারির পর অন্তত ২০-৪০ শতাংশ মানুষের চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পুষ্টি বিশেষ করে ভিটামিন এ এর অভাবে চোখ শুষ্ক হয়।
নারীদের ম্যানোপোজ স্টেজে থাকার সময়টাতে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ ওই সময়টা হরমোনাল ইমব্যালেন্সের কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর সর্বোপরি টিভি, কম্পিউটার কিংবা সূর্যের আলোতে অতিরিক্ত থাকলেও চোখ শুষ্ক হয়ে যায় ।
নারকেল তেল কীভাবে চোখের শুষ্কভাব কমায়?
কম্পিউটারে নিয়মিত কাজ করার কারণে ছোট-বড় সবারই এখন চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নারকেল তেল বেশ কার্যকরী একটি লুব্রিকেন্ট বা মসৃণকারক পদার্থ। সাধারণত আমাদের চোখ নিয়মিত অশ্রুগ্রন্থি থেকে অ্যাকুয়াস হিউমার বা লবণাক্ত পানি তৈরি করে, যা চোখের আর্দ্রভাব বজায় রাখে। এর ফলে আমাদের চোখ সুস্থ থাকে।
এই অ্যাকুয়াস হিউমারে মূলত তিনটি উপাদান থাকে- লবণ, তেল ও মিউকাস। যা চোখকে পরিষ্কার রাখে ও আরামদায়ক অনুভূতি দেয়। তবে চোখের শুষ্কতা দেখা দিলে, চোখ লাল হয়ে যায়, জ্বালাপোড়া শুরু হয় ও চোখ অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। অনেক সময় আর্দ্রতার অভাবে চোখে দেখতেও সমস্যা হয়।
চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধে অনেক ধরণের আর্টিফিশিয়েল ড্রাগস যেমন- রেগুলার আইড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। মার্কিনরা প্রতি বছর ৩০০ ডলার খরচ করে শুধুমাত্র এই চোখের শুষ্কতা কমানোর ওষুধপত্র কিনেই। তবুও দেখা যায় পুরোপুরিভাবে চোখের শুষ্কতা কোনোটাতেই দূর হয় না।
এনসিবিআই অনলাইনে প্রকাশিত এক পাইলট গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সট্রা ভার্জিন নারকেল তেলে এমন সব উপাদান আছে, যা চোখের অশ্রুগ্রন্থির উপাদানগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা চোখের শুষ্কভাব দূর করে। এ গবেষণার জন্য গবেষকরা ৯টি খরগোশের উপর পরীক্ষা চালায়। এরপর দেখা যায়, নারকেল তেল খরগোশের চোখে ক্ষতি করেনি বরং যেসব খরগোশের চোখে নারকেল তেল ব্যবহার করা হয়েছে; তাদের চোখের শুষ্কভাব অন্যদের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে।
নারকেল তেলে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টি-কার্কিনোজেনিক, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-রেট্রোভিরাল, অ্যান্টি-প্যারাসিটিক, অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল, অ্যান্টি-ভাইরালসহ বিভিন্ন উপাদানসমূহ। শুধূ চোখ নয় শাররিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আছে নারকেল তেলে।
কীভাবে ব্যবহার করবেন নারকেল তেল?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি শুকনো চোখের জন্য নারকেল তেল ব্যবহার করেন; তাহলে অবশ্যেই ক্যামিকেলবিহীন এক্সট্রা ভার্জিন/খাঁটি নারকেল তেল বেছে নিতে হবে। শুকনো চোখের জন্য নারকেল তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আক্রান্ত চোখে ২-৩ ফোঁটা ব্যবহার করুন।
অথবা একটি কটন বল নারকেল তেলে ভিজিয়ে রেখে আপনার বন্ধ চোখের পাতায় প্রায় ১০-১৫ মিনিট রাখুন। সকালে ও রাতে একবার করে নিয়মিত এক সপ্তাহ ব্যবহারে চোখের শুষ্কতা কমে আসবে। চোখের জ্বালাপোড়া, লালচেভাব কমে আসবে।
পাশাপাশি চোখের শুষ্কভাব কমাতে যা কাজগুলো পরিহার করবেন-
> মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহার
> মদ্যপান করবেন না
> এয়ারকন্ডিশনারে বেশিক্ষণ থাকবেন না
> ধূমপান ত্যাগ করুন
> ধূলাবালিতে থাকবেন না
> চোখ চুলকাবেন না
চোখের শুষ্কতা প্রতিরোধে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য যেমন ভিটামিন এ, লাল/হলুদ/সবুজ শাকসবছি, ছোটো মাছ, ক্যালসিয়াম ও জিংক সমৃদ্ধ মাছ, কলিজা, মাশরুম, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি খেতে হবে। এ ছাড়াও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ যেমন- স্যামন, হ্যারিং, ম্যাকেরেল খাওয়া যেতে পারে।
চোখের নিচে ভাঁজ পড়লেও নারকেল তেল ম্যাসাজ বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। মূলত অতিরিক্ত সূর্যের আলো, বয়সের প্রভাব কিংবা এস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলে চোখে ভাঁজ পড়তে পারে। এক্ষেত্রে ভাঁজ কমানোর ক্রিম ব্যবহার করার থেকে অনেক বেশি উপকার করে নারকেল তেল। নতুন চামড়া তৈরিতে এই তেল যেমন সাহায্য করে; তেমনই ত্বককে অনেক বেশি মসৃণ করে।
সূত্র: হেলথলাইন
জেএমএস/এমএস