দুধ খেলে হতে পারে যেসব রোগ
দুধে হাজারো পুষ্টিগুণ আছে। আয়রন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, নিয়াসিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ফোলেট, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, প্রোটিনসহ বিভিন্ন উপাদান আছে।
তবে জানেন কি, দুধ সবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। বিভিন্ন কঠিন রোগের কারণ হতে পারে এই আদর্শ খাবার। দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। যা হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং আলঝাইমার রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন, ডিম্বাশয় এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ হতে পারে দুধ। বিভিন্ন দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর কোলেস্টেরল থাকে। দুধে থাকা চর্বি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
দুধে থাকা ল্যাকটোজ অতিরিক্ত গ্রহণের মাধ্যমে পেট খারাপ, ডায়রিয়া এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দুগ্ধজাত খাবার হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি উপকার করে না। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুসারে, দুধ খেলেই যে হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হবে, তার কোনো প্রমাণ নেই।
এ ছাড়াও দুধে থাকা বিভিন্ন হরমোন শরীরের এস্ট্রোজেন এবং গ্রোথ হরমোনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ২০১৬ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেন, যেসব ইঁদুরকে তারা দুধ পান করান; তাদের শরীরে এস্ট্রোজেন হরমোনের পরিবর্তন দেখা গেছে।
সাধারণত গরুর দুধে যে পরিমাণ এস্ট্রোজেন থাকে, তার তুলনায় ইঁদুরের শরীরে আরও বেশি এস্ট্রোজেন পাওয়া গেছে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা হরমোন শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মত থাকলেও, বিজ্ঞানীরা এখনো তা প্রমাণ করতে পারেনি।
তবে গবেষকদের মতে, বেশ কিছু ক্যান্সার দুধের কারণে হয়ে থাকে। অতিরিক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের কারণে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, দুধ, পনির এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারে উচ্চ ফ্যাটযুক্ত উপাদান স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী।
প্রায় ১০ হাজার নারীকে নিয়ে করা এক সমীক্ষা অনুসারে, দুধ কম খাওয়ার কারণে তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। তাদের এই ক্যান্সার থেকে মারা যাওয়ার ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কম থাকে।
ক্যান্সার এপিডেমিওলজি গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে যেসব নারী চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের (যেমন- পনির, আইসক্রিম, ফুল ক্রিম দুধ) প্রতিদিন খেয়েছেন; তাদের স্তন ক্যান্সারের মৃত্যুর হার ছিল ৪৯ শতাংশ। যারা প্রতিদিন অর্ধেকের কম দুগ্ধজাত একবার খেয়েছেন তাদের সংখ্যা ছিল অনেক কম।
দুধে থাকা ল্যাকটোজের কারণে অ্যালার্জি হতে পারে। অ্যালার্জি থাকা ব্যক্তিরা দুধ পান করলে, তাদের অস্বাভাবিক ইমিউনোলজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। যার ফলে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ইমিউনোগ্লোবুলিন ই এর মতো অ্যালার্জিক অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
দুধ পানের ফলে অ্যালার্জির সৃষ্টি হলে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, আমবাত, মল রক্ত ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। সেই সঙ্গে দুধের সংস্পর্শে আসলে বা খাওয়ার পরে যদি কারও ফোলাভাব বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়; তাদের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। যাদের দুধের অ্যালার্জি আছে; তাদের দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার যেমন- মাখন, মজাদার দই এবং পনির এড়ানো উচিত।
তাই নিয়মিত দুধ সেবনের আগে অবশ্যই পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। কারণ দুধে ক্ষতির প্রভাবে শরীর সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হতেও পারে।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে/হেলথলাইন
জেএমএস/এমএস