ধূমপান ছাড়তে পারছেন না? জেনে নিন কী করবেন
ধূমপান ক্যান্সারের কারণ কিংবা এটি যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর তা কিন্ত সিগারেটের গায়েই লেখা থাকে। এতে যে শুধু নিজের ক্ষতি হয় তা কিন্তু নয়, ক্ষতি হয় আপনার আশেপাশের মানুষেরও। সব জেনেও ধূমপায়ীরা ধূমপান করে থাকেন। নিজের এবং কাছের মানুষদের ভালোর কথা চিন্তা করে হলেও এই অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তবে বলা যত সহজ, এটি করা ততই কঠিন। অনেকেই আছেন যারা ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেন না। আপনিও সেই তালিকায় থাকলে জেনে নিন কিছু করণীয়-
কারণ খুঁজে বের করুন: ধূমপান ছাড়তে গেলে প্রথমেই কেন ধূমপান ছাড়তে চান, সেই কারণটা খুঁজে বের করা দরকার। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়াটা সহজ হয়। হার্টের সমস্যা, ফুসফুসের ক্যানসার এড়াতে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন।
নিজেকে প্রস্তুত করুন: দীর্ঘদিন ধরে যাদের এই নেশা রয়েছে, হঠাৎ ছেড়ে দিলে কিছু সমস্যা হয়তো দেখা দিতে পারে। মানসিকভাবেও দুর্বল মনে হতে পারে। সুতরাং এটি ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আগে নিজেকে প্রস্তুত করুন। আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি: এতদিন আপনার শরীরে বা মস্তিষ্কে যে পরিমাণ নিকোটিন যাচ্ছিল, তা হঠাৎই বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর কিছু সাইড এফেক্ট রয়েছে। ধূমপান হঠাৎই ছেড়ে দিলে আপনার মাথাব্যথা হতে পারে, মুড সুইং হতে পারে আবার এনার্জি কম থাকাটাও স্বাভাবিক। এই সময়ে নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি কাজে দেবে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিকোটিন গামের মতো বস্তু ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে সহায়তা করে।
প্রেসক্রিপশন মেনে চলুন: ধূমপান ছাড়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তিনি কিছু ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। নিয়ম করে সেই ওষুধ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
কাছের মানুষদের কথা শুনুন: একেবারে কাছের মানুষ যারা, তাদেরকে আপনার ধূমপান ছাড়ার ইচ্ছার কথা বলতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে তারা খুশি হবেন। আপনাকে ক্রমাগত উৎসাহ দেবেন। যখন আপনার ডিপ্রেশন হবে, তখন তাদের কথা শুনুন। হতে পারে তাদের অনবরত উৎসাহ আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
নিজের জন্য বিরতি নিন: বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে রিল্যাক্স করার জন্য ধূমপান করেন। কিন্তু তা ছেড়ে দিলে রিল্যাক্স করার ওই নির্দিষ্ট উপায় আর থাকে না। ফলে তার বদলে বেছে নিতে হবে অন্য উপায়। আপনার পছন্দের গান শুনতে পারেন। বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে পারেন। আপনার শখ পূরণের জন্য অন্য অনেক কিছু করে নিজেকে রিল্যাক্স করতে পারেন।
অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন: ধূমপান ছেড়ে দেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই যদি মদ্যপান শুরু করেন, তাহলে কিন্তু ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেয়াটা মুশকিল। কারণে অনেকেরই মদ্যপানের সময় ধূমপানের ইচ্ছা প্রবল হয়। এমনকি যদি আপনার কফি খাওয়ার পর ধূমপানের অভ্যেস থাকে, তাহলে কয়েক সপ্তাহের জন্য কফি বন্ধ করে চা খান। তাহলে ধূমপানের ইচ্ছে কম হবে আবার যদি খাওয়ার পর ধূমপানের অভ্যাস থাকে, তাহলে আপাতত কয়েক সপ্তাহ অন্য কিছু অভ্যাস করতে হবে।
বাড়ি পরিষ্কার করুন: ধূমপানের সঙ্গে যুক্ত সব রকম জিনিস সরিয়ে ফেলে বাড়ি পরিষ্কার করে ফেলুন। লাইটার বা দেশলাই সরিয়ে দিন। অ্যাশ ট্রে সরিয়ে ফেলুন। আপনার ব্যবহৃত কোনো জামা বা বিছানার চাদরে যদি সিগারেট, বিড়ি বা চুরুটের গন্ধ থাকে তা পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। আপনার গাড়িতে গন্ধ থাকলে গাড়িও ধুয়ে ফেলুন। ঘরে রুম ফ্রেশনার ব্যবহার করপন। আসলে কোনো গন্ধে যাতে ফের ধূমপানের ইচ্ছে জেগে না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ফল এবং সবজি খান: ধূমপান ছাড়ার সময় কোনো ডায়েট করবেন না। যা ভালো লাগে তাই খাবেন। তবে মেনুতে বেশি করে ফল এবং সবজি রাখলে ভালো হয়। প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট সব কিছুর ব্যালেন্স বজায় রাখুন। কিন্তু একটু স্পাইসি বা জাঙ্ক ফুড হলেও ক্ষতি নেই অন্তত কয়েকটা সপ্তাহ।
নিজেকে পুরস্কার দিন: ধূমপান ছেড়ে দিলে কিন্তু আপনার সেভিংস বেড়ে যাবে। হিসেব করে দেখুন তো, প্রতিদিন এই নেশার পিছনে আপনার কত বাজে খরচ হয়। যে টাকা আপনি এই খাতে বাঁচাতে পারছেন, তা থেকে নিজেকে একটা পুরস্কার দিন। পছন্দের খাবার খান। জিনিস কিনুন। নিজের জন্য ধূমপানের নেশা ছাড়ার পুরস্কার ঠিক করে ফেলুন আগে থেকেই।
যেসব করাণে ধূমপানের মতো বাজে নেশা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেসব থেকে কোনো অবস্থাতেই সরে এলে চলবে না। এতে আপনি ভালো থাকবেন। আর এই কাজে কাছের মানুষদের সমর্থন পাবেন সব সময়। সুতরাং ধূমপান বন্ধের ভালো অভ্যাসটি ধরে রাখতে হবে।
এইচএন/পিআর