সুস্থ শারীরিক সম্পর্কে দূর হয় মাইগ্রেন, বলছে গবেষণা
মাইগ্রেন নিজেই একটি ব্যথা। এটি হানা দিতে পারে যখন তখন। আর এই ব্যথার কষ্ট কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। নানা ওষুধ, টোটকায়ও মুক্তি মেলে না। এটি বাড়তে থাকলে একটাসময় মাথা তুলে কাজ করতেও কষ্ট হয় যেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কপাল, চোখেও ছড়াতে শুরু করা ভয়াল মাইগ্রেনকে দূর করতে সুস্থ শারীরিক সম্পর্ক গঠনকেই পথ বলে দাবি করলেন একদল বিজ্ঞানী।
সম্প্রতি জার্মানির মুন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিভাগের গবেষকদের একটি রিপোর্ট প্রকাশ পায় ‘সেফালাজিয়া, দ্য জার্নাল অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল হেডেক সোসাইটি’-তে। দীর্ঘ গবেষণার পর সেখানে বিজ্ঞানীদের পরীক্ষালব্ধ ফল ও কিছু পরিসংখ্যান প্রকাশ করেন গবেষকরা। তাদের দাবি, ‘নিয়মিত সুস্থ যৌন সম্পর্ক সরাসরি প্রভাব ফেলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসে। এর হাত ধরেই মাইগ্রেনের মতো ভয়ঙ্কর ব্যথা কমে যেতে পারে প্রায় ৭০ শতাংশ।’
নিউ ইয়র্কের ৩৫০ জন মাইগ্রেন আক্রান্ত রোগীদের উপর প্রায় দু’বছর ধরে গবেষণা চালান গবেষকরা। এক দলকে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে। অপর দলকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, নিয়মিত যৌন সংসর্গ রয়েছে, এমন দলের প্রায় ৬৫ শতাংশই মাইগ্রেনের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হওয়ার দিনগুলোয় প্রতি পাঁচ জনে তিন জন মুক্তি পেয়েছেন যন্ত্রণা থেকে।
গবেষকদের মতে, সুস্থ ও স্বাভাবিক যৌন মিলনের সময় শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের দ্বারা এন্ডরফিন হরমোনের ক্ষরণ হয়। ফিল গুড হরমোনের অন্যতম এই হরমোন বেদনানাশ করতেও ওস্তাদ। ‘ফিল গুড’ ফ্যাক্টরকে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রাখার পাশাপাশি এই হরমোন বেদনানাশক ওষুধ মরফিনের চেয়েও শক্তিশালী। ফলে মন ও শরীর উভয়েই প্রভাব বিস্তার করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এর আগেও মাইগ্রেনের ব্যথা সারানোর নেপথ্যে যৌন সম্পর্ক কতটা কার্যকর, এ নিয়ে নানাবিধ গবেষণা চলেছে বিশ্বজুড়ে। আমেরিকান হেল্থ সেন্টারও ২০১৮-য় যে কোনও বেদনানাশক হিসেবে যৌন সংসর্গের কার্যকরী দিক প্রকাশ্যে আনে।
এবার মাইগ্রেন নিয়ে জার্মানির মুন্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণা তাকেই মান্যতা দিল। এন্ডরফিনের এহেন প্রকৃতিতে সায় দিচ্ছেন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সৌরভ দে। তার মতে, ‘‘ফিল গুড হরমোনদের মধ্যে এন্ডরফিন বেদনানাশক হিসেবে প্রসিদ্ধ। শারীরিক সম্পর্কের সময়ও এই হরমোন ক্ষরিত হয়। ফলে ব্যথা কমাতেই পারে সে। তবে মাইগ্রেনের বাড়াবাড়িতে কেবল একটি পদ্ধতির উপর ভরসা না করে চিকিৎসকদের পরামর্শও নিন।
আনন্দবাজার/এইচএন/জেআইএম