খালেদা জিয়াকে ধারণাপ্রসূত সাজা দেওয়া হয়েছে: জয়নুল আবেদীন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ধারণাপ্রসূত সাজা দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ মামলায় দেওয়া রায়ে আইনের ত্রুটি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মামলায় সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিলের শুনানি হয়েছে আজ বুধবার। শুনানিতে এ কথা বলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আদালতে আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও গাজী কামরুল ইসলাম সজল।

রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনির আর হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসিফ হাসান। আদালতে অ্যাডভোকেট সালমা, মো. মাকসুদ উল্লাহসহ অর্ধশতাধিক আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের জানান, ক্রিমিনাল মামলায় আইন অনুযায়ী কোনো আসামিকে ধারণাপ্রসূত সাজা দেওয়া যায় না। অপরাধ প্রমাণ হলেই আদালত কাউকে সাজা দিতে পারেন। আমরা আশা করবো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পাবেন।

• আরও পড়ুন
• জিয়া অরফানেজের সব অর্থ ব্যাংকে জমা আছে 
• শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে নাগরিক কমিটির অভিযোগ 

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) গত ১১ নভেম্বর মঞ্জুর করে ১০ বছরের কারাদণ্ড স্থগিতের আদেশ দেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ। লিভ টু আপিল শুনানিতে দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে। তবে সুদে-আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।’

সে সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এ মামলায় খালেদা জিয়ার দেওয়া ৩৪২ ধারায় বক্তব্য তুলে ধরে সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, ‘কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই রাজবন্দির জবানবন্দির প্রতিফলন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে উঠে এসেছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল সংক্রান্ত কোনো অনুদান গ্রহণ বা বিতরণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।’

খালেদা জিয়ার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন লিভ টু আপিল শুনানিতে সর্বোচ্চ আদালতকে বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সাজা বাড়িয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আইনের ত্রুটি রয়েছে এবং তা ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই বছরের ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। তবে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার পরও মামলা দুটি আইনগতভাবে লড়ার কথা জানিয়ে বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাষ্ট্রপতি তার সাজা মওকুফ করেছেন। তবে সেখানে ক্ষমার কথা আছে। খালেদা জিয়া ক্ষমার প্রতি বিশ্বাসী নন। তিনি অপরাধ করেননি। তিনি ক্ষমাও চাননি। তাই এটা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবেন। সে অনুযায়ী আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া।

এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস