হাসান আরিফকে নিয়ে আবেগাপ্লুত বিশিষ্ট আইনজীবীরা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ দেশের আইন অঙ্গনের একজন সৎ, যোগ্যা, মেধাবী ও অনুকরণীয় উচ্চতার মানুষ ছিলেন। তার মৃত্যুতে আইন অঙ্গনে তথা সুপ্রিম কোর্টে বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে এ এফ হাসান আরিফের জানাজা শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ এফ হাসান আরিফ একজন সজ্জন ও সৎ মানুষ ছিলেন। তার মর্যাদা ও সম্মান অনন্য উচ্চতার।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদিন বলেন, আইনজীবী হিসেবে এ এফ হাসান আরিফ ছিলেন দিকপাল। আইন পেশায় ও আদালতের প্রতি তার নমনীয়তা, শিষ্টাচার অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, তিনি প্রচুর পড়াশোনা করতেন, যা আইনজীবীদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। অনেক জটিল আইনের প্রশ্নে আদালকে ব্যাখ্যা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, এ এফ হাসান আরিফ আইনজীবী হিসেবে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে ছিলেন জুনিয়রবান্ধব, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন।
ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিজের তুলনা নিজেই ছিলেন এ এফ হাসান আরিফ। তার সঙ্গে অন্য কারও তুলনা হয় না।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, এ এফ হাসান আরিফ দুইটি দল নিরপেক্ষ সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য মানুষ ছিলেন।
উপদেষ্টা হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফ বলেন, বিকেল ৩টার দিকে বাবা বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মেঝেতে পড়ে গেলে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, শুক্রবার বাদ এশা রাজধানীর ধানমন্ডির সাত নম্বর বায়তুল আমান মসজিদে এ এফ হাসান আরিফের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আজ বেলা ১১টায় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয়ে।
গত ৮ আগস্ট গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে প্রথমে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছিলেন হাসান আরিফ। পরে তাকে ভূমি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তিনি ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। এ এফ হাসান আরিফ তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা হাইকোর্ট থেকে। এরপর ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
এ এফ হাসান আরিফ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, গ্রামীণফোন বাংলাদেশ প্রভৃতি।
তিনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামশর্ক, নির্মাণ সালিস, বাণিজ্যিক সালিস, অর্থ, ব্যাংকিং এবং সিকিউরিটিজ বিষয়, করপোরেট, বাণিজ্যিক ও ট্যাক্সেশন বিষয়, সাংবিধানিক আইন বিষয়, আরবিট্রেশন এবং বিকল্প বিরোধ সমাধানের অন্যান্য পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির কমপ্লেক্সের উপদেষ্টা ছিলেন।
এ এফ হাসান আরিফ ১৯৪১ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর স্নাতক এবং এলএলবি ডিগ্রি সম্পন্ন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এফএইচ/কেএসআর/জেআইএম