যে কারণে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিটি হচ্ছে না
রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ড ঘিরে হত্যা মামলায় (ডেথ রেফারেন্স) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি চলমান। অন্য মামলাটি ঢাকার বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে বিচারাধীন। তাই রিট আবেদনকারীর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাবিত কমিটি গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ড ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড ঘিরে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের প্রেক্ষাপটে এমন তথ্য জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। ওই হত্যাযজ্ঞে ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড ঘিরে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন চেয়ে আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়।
ফলে ২০০৯ সালে রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদরদপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা চলমান থাকায় আপাতত জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠন হচ্ছে না বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ এমন তথ্য জানানোর পর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রিটের ওপর শুনানি মুলতবি করেন আদালত।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ ও বিপ্লব কুমার পোদ্দার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন/কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে গত মাসে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের ওই দুই আইনজীবী।
আরও পড়ুন
- পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন
- পিলখানা হত্যা মামলার ফের তদন্ত চায় ভুক্তভোগীদের পরিবার
- বিচার চাইতে ট্রাইব্যুনালে যাবেন পিলখানায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা
পরবর্তী সময়ে প্রকৃত সত্য বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিটি বা কমিশন গঠন করতে এবং শহীদ সেনা দিবস ঘোষণায় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়ে ৩ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর আবেদন করেন রিট আবেদনকারীরা।
এরপর রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্রসচিব বরাবর করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বরাষ্ট্রসচিবের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে ২ ডিসেম্বর জাতীয় স্বাধীন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে বলে সেদিন হাইকোর্টকে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশের জন্য ১৫ ডিসেম্বর দিন রাখেন। আজ রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, দুটি মামলা চলমান থাকায় আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সহকারী সচিব মো. মফিজুল ইসলামের সই করা স্মারকে বলা হয়, সাবেক বিডিআর ও বর্তমান বিজিবি হেডকোয়ার্টার ঢাকায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি মামলা করা হয়। হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ, ১৬১ জন যাবজ্জীবন, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ এবং ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টে শুনানি শেষে রায় প্রকাশ করা হয়।
বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানি চলমান রয়েছে। অন্য মামলাটি বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতে বিচারাধীন থাকায় আবেদনকারীর চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তাবিত কমিটি গঠন আদালতের আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে বিধায় আপাতত কমিটি গঠন সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন থাকায় এ পর্যায়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যরা। সেই ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন প্রাণ হারান।
এ ঘটনায় করা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার কাজ হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৬০ জনের। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন।
আপিলের পর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেওয়া হয়। রায়ে ফাঁসি বহাল হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন।
উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামিপক্ষেও লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়েছে।
এফএইচ/এমআইএইচএস