১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
আসামি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই: আইনজীবী
বহুল আলোচিত চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় আসামি হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। তিনি বলেন, তার (আসামি) কাছ থেকে যে স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে সেটা তাকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে রাখার পর লিখিত একটি স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়েছে। এটা আসামির কোনো স্বীকারোক্তি নয়।
১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানিতে আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্কে আইনজীবী সাইফুদ্দিন চৌধুরী এসব কথা বলেন। এরপর মামলার কার্যক্রম মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মূলতবি করেন আদালত।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দিন ঠিক করেন আদালত।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসিফ ইমরান জিসান। এ মামলার অন্যতম আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে এর আগে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আর পাঁচজন আসামির পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান।
এর আগে আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপর ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে শুনানি অব্যাহতভাবে চলছে। এরও আগে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। গত বুধবার বিচারিক আদালতের রায় উপস্থাপন করা হয়েছে। এদিন (রোববার) এক আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আবারও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হবে।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়।
২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ১০ ট্রাক অস্ত্র আটক সংক্রান্ত দুটি মামলার মধ্যে চোরাচালান মামলায় (বিশেষ ক্ষমতা আইনে) সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী (ফাঁসির দণ্ড কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমানের আদালত।
এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের।
এছাড়া অস্ত্র আটক মামলার অপর ধারায় সাত বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানাও প্রদান করা হয়।
মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অন্য ১১ জন হচ্ছেন- এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক (নিরাপত্তা) অবসরপ্রাপ্ত উইং কমাণ্ডার সাহাবুদ্দিন আহমেদ, এনএসআইয়ের সাবেক উপ-পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের সাবেক মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসিন উদ্দিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত শিল্পসচিব নুরুল আমিন, চোরাচালানি হিসেবে অভিযুক্ত হাফিজুর রহমান, অস্ত্র খালাসের জন্য শ্রমিক সরবরাহকারী দীন মোহাম্মদ ও ট্রলার মালিক হাজী আবদুস সোবহান।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।
এফএইচ/ইএ/জিকেএস