মহাসড়ক ও ফ্লাইওভারে অটোরিকশা বন্ধে লিগ্যাল নোটিশ
সারাদেশের প্রধান সড়ক-ফ্লাইওভারগুলোতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জনস্বার্থে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরান এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংবাদ তুলে ধরে বলা হয়েছে, সারাদেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল গুণিতক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে অলিগলিতে চলাচল করলেও বর্তমান সময়ে এসব রিকশাচালকেরা সড়ক-মহাসড়ক এমনকি ফ্লাইওভারের ওপরেও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে। অপ্রশিক্ষিত এসব অটোচালকদের ভুলে বিঘ্ন হচ্ছে সড়কে মানুষের বা অন্যান্য বাহনের স্বাভাবিক চলাচল। কোনরকম নিয়ম-শৃঙ্খলা না মেনে খেয়াল-খুশিমত মুহূর্তে তারা সড়কের এপাশ-ওপাশ করে যাত্রী পারাপার করছে। এসব চালকদের লাইসেন্স বা বৈধ ডকুমেন্টস না থাকায় তাদের আটকাতে হিমশিম খাচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।
‘বিগত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর নানান অজুহাতে দেশজুড়ে এসব অটো ও ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল বেড়েই চলেছে। পূর্বে অলিগলিতে চলাচল করলেও বর্তমান সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রধান সড়ক এবং ফ্লাইওভারেও এসব রিকশা চলাচল শুরু করেছে। এতে সারাদেশে হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। অনেকাংশে এর চালকরা অপ্রাপ্তবয়স্ক বা বৃদ্ধ হয়ে থাকেন। যাদের পক্ষে একটি গতিসম্পন্ন বাহনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়।’
‘বিগত ১০ নভেম্বর সারাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে সারাদেশে ৪০৫টি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৭৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪১৫ জন। ৪০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে মোটরকার বা জিপ দুর্ঘটনায় ৯ জন, বাস বা মিনিবাস দুর্ঘটনায় ৪২ জন, ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৮২ জন, পিকআপ দুর্ঘটনায় ১২ জন, মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় দুইজন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১১০ জন, ভ্যান দুর্ঘটনায় ১২ জন, ট্রাক্টর দুর্ঘটনায় ১ জন, ইজিবাইক দুর্ঘটনায় ১৪ জন, ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় ১৮ জন, অটোরিকশা দুর্ঘটনায় ৩৪ জন ও অন্যান্য যান দুর্ঘটনায় ৭৯ জন। অর্থাৎ, শুধু অক্টোবরেই ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৬৬ জন প্রাণ হারান।
এছাড়াও এসব রিকশার আঘাতে শত শত মানুষ আহত হলেও তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি বলে জানায় বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গত ১৯ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত রিকশার আঘাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী আফসানা করিম রচির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে অন্যান্য পরিবহনের ফেলে দেওয়া বা ব্যবহারের অনুপযুক্ত যন্ত্রপাতি ও পুরাতন ব্যাটারি দিয়ে কোনমতে তৈরি করা এসব রিকশা জনমানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, অটোরিকশা বা ইজিবাইকের ব্যবহৃত ব্যাটারিগুলো চার্জনির্ভর। প্রতিদিন একাধিকবার এর ব্যাটারি চার্জ করতে হয়। ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য অবৈধভাবে কয়েক হাজার গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব অবৈধ লাইনে ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ। যার ফলে বর্তমান সময়ে সারাদেশে নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তাই উক্ত নোটিশপ্রাপ্তির ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সারাদেশের প্রধান সড়ক-ফ্লাইওভারগুলোতে ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নোটিশগ্রহীতাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে দেশের উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এফএইচ/জেএইচ