ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

জিয়াউল আহসানকে ‘বসনিয়ার কসাই’ কারাদজিচের সঙ্গে তুলনা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:৩৭ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২৪

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ার ‘কসাই’ রাদোভান কারাদজিচের সঙ্গে তুলনা করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে এ তুলনা করেন তিনি। এর আগে গত ১৮ নভেম্বর শুনানিতেও বিগত সরকারের হত্যাকাণ্ডকে নাৎসি বাহিনী ও বসনিয়া-হার্জেগোভিনার ‘কসাই’ রাদোভান কারাদজিচের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন চিফ প্রসিকিউটর।

এ বিষয়ে তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জিয়াউল আহসান বিভিন্ন সময় র‍্যাবের বিভিন্ন পদে ছিলেন, সর্বশেষ তিনি এনটিএমসির মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশে গুম, গুমের জন্য ধরে নিয়ে গিয়ে পৈশাচিক নির্যাতন, হত্যার পর মরদেহ ডিসপোজাল করা, এসব কালচারের জনক ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যারা বিরোধীদলে থেকে বিভিন্ন সময় কথা বলার চেষ্টা করেছেন তাদের তিনি একের পর এক পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করেছেন, গুম করেছেন, বছরের পর বছর আটকে রেখেছেন। তাদের মধ্যে বহু মানুষ আজও ফিরে আসেননি।

জিয়াউলের নেতৃত্বে ইলিয়াস আলী গুম

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জিয়াউল আহসানের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে গুম করে হত্যা করা হয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। এছাড়া নাম না জানা অনেক মানুষকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়েছে। তার পৈশাচিকতা ৯০-এর দশকে বসনিয়া-হার্জেগভনিয়ায় সার্ব বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, যে ধরনের অত্যাচার করেছিল, তার সঙ্গে আমরা তুলনা করেছি। বলকানের কসাইয়ের মতো বাংলাদেশের কসাই হিসেবে জিয়াউল আহসান হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে, গুম-নির্যাতনের সব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

কে এই রাদোভান কারাদজিচ

রাদোভান কারাদজিচ সাবেক বসনীয় সার্ব নেতা। বলকান অঞ্চলের হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলিমকে গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে ‘বসনিয়ার কসাই’ নামে পরিচিত তিনি। বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসা শহরে আট হাজার মুসলিম পুরুষ ও বালককে হত্যার ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানিতে দ্য হেগের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেন, কারাদজিচের তত্ত্বাবধানেই কার্যত এই শহরের মুসলিমদের ধ্বংস করার একক নীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছিল।

জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে গণহত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক পুলিশপ্রধান ও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালকসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের ট্রাইব্যুনালের মামলায় কারাগারে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বর দিন ঠিক করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। আদালতে আজ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

এর আগে গণহত্যার অভিযোগের এ মামলায় ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার আগে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

অভিযুক্ত আট কর্মকর্তা হলেন—সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা জেলার সাবেক পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডিএমপির মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি মো. জসিম উদ্দিন মোল্লা, ঢাকার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুর ইসলাম, যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান, গুলশান থানার সাবেক ওসি মাজহারুল হক এবং ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন।

গত ২৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল প্রসিকিউশনের আবেদন মঞ্জুর করে এই আট কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সাবেক মোট ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে যারা গ্রেফতার রয়েছেন তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

এফএইচ/এমকেআর/জিকেএস