দোষ স্বীকার করেছেন নিজামীর আইনজীবী
একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আলবদরের শীর্ষ নেতা ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি ছাড়া অন্য কোন দণ্ড দেয়ার সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ জানান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রিভিউ আবেদনের প্রকাশিত রায়ের সর্বশেষ প্যারাতে বলা হয় নিজামীর দণ্ড থেকে অব্যাহতি চাওয়া হলেও তার দোষ অস্বীকার করেননি আইনজীবীরা।
নিজামীর আইনজীবীরা যেহেতু অপরাধ অস্বীকার করেনি সেহেতেু নিজামী তার দ্বায় এড়াতে পারেন না। নিজামীর দোষ স্বীকার করেছেন বলে ধরে নেয়া যায়।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যেহেতু তার আইনজীবীরা দোষ অস্বীকার করেননি সেহেতু তার স্বীকার করা হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।
নিজামীর রায়ে কপি কারাগারসহ সংশ্লিষ্ট স্থানে পৌঁছার পর যেকোনো দিন যেকোনো সময় কার্যকর করা হতে পারে ফাঁসির দণ্ড। কারা কর্তৃপক্ষ এবং সরকার সে রকম প্রস্তুতিই নিতে যাচ্ছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা কখন সেই দিনক্ষণ আসবে?
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন খারিজ করে দেয়া রায়ের ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পায় সোমবার। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিজামীর রায় প্রকাশের পর রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে বিকাল পাঁচটার দিকে আন্তরর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে পৌঁছে দেন আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী, তার সঙ্গে ছিলেন অপর রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান।
এখন নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন খারিজের পর পুরো জাতি এখন নিজামীর ফাঁসির রজনীর জন্য অপেক্ষায় আছে।
সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহেই নিজামীর দণ্ড কার্যকর হতে পরে।
রিভিউ আবেদন খারিজের পর এবার শুরু হবে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া। নিয়ম অনুযায়ী রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে। তবে রিভিউ আবেদনে রায় বহাল থাকয় কারাবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে পারবেন নিজামী। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পর রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করা না করার উপর সিদ্ধান্ত হবে।
তবে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা নাকচ করলে আসামির দণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। অর্থাৎ মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরে এখনো এই একটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকতা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, নিজামীর মামলায় সব নিয়ম অনুসরণ করা হবে। রিভিউ খারিজ হওয়ায় এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তবে তিনি যদি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এ ক্ষেত্রে তাকে সে সুযোগ দেয়া হবে।
গত ৫ মে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, ‘ডিসমিসড’।
বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
নিজামীর রিভিউ খারিজ হলো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খারিজ হওয়ার কারণ হলো রায়টি রিভিউ হওয়ার মতো কোনো গ্রাউন্ড তারা (আপিল বিভাগ) খুঁজে পাননি। বিশেষ করে তার মৃত্যুদণ্ডকে পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করার যে প্রার্থনা ছিলো, দণ্ড সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছিলো, আদালত বলেছেন তার অপরাধ এত জঘন্য ছিল এবং যারা নাকি ভিকটিম তারা প্রত্যেকে তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষুব্ধ এবং এ ধরনের অপরাধীদের দণ্ড মওকুফের কারণ নেই এ কথা বলে খারিজ করা হয়েছে।
যেহেতু তার আইনজীবীরা দণ্ড মওকুফের কথা বলেছেন কাজেই এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডের সাথে তার তিনি যুক্ত নন তা বলা যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী একাত্তরের বদরপ্রধান নিজামী এখন কেবল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টির নিষ্পত্তি হলেই সরকার দণ্ড কার্যকর করবে।
তার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বেই যে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল- এই মামলার বিচারে তা প্রমাণিত হয়।
গত ৬ জানুয়ারি বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী ও উস্কানিদাতাসহ মানবতাবিরোধী তিন অপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১৫ মার্চ আপিল মামলাটির ১৫৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। রাতেই বিচারিক আদালতে গেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর পরই মৃত্যু পরোয়ানাসহ পূর্ণাঙ্গ রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
পরদিন ১৬ মার্চ সকালে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এর কনডেম সেলে থাকা নিজামীকে মৃত্যু পরোয়ানা ও পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনানো হয়। এর আগে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
এফএইচ/এসএইচএস/আরআইপি