২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা
হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের পরবর্তী শুনানি ৭ নভেম্বর
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিলের আংশিক শুনানি হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যে আগামী বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দিন ঠিক করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ নতুন দিন ঠিক করে এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার।
এর আগে ওই ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিল হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত হত্যা মামলায় হাইকোর্টে আংশিক শুনানি হয়েছিল। পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ শুনানি শুরুর পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। এরপর গত ২৩ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চে পাঠানো হয়। যেটিতে আজ শুনানি হলো।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে দলটির নেতাকর্মীসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ কয়েকশ নেতাকর্মী।
ওই হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০১৮ সালে বিচারিক আদালত মামলা দুটির রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।
মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালে এটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিরা কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দুই মামলায় পৃথক জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন। হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর একটি দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি শুরু করে।
এ বিষয়ে গত ২০ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, দ্বৈত বেঞ্চের একজন বিচারপতি পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে আসামিপক্ষের এক আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট অবকাশকালীন ছুটি শেষে খোলার পর শুনানির জন্য রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানি হয়।
এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ বেশ কয়েকজন দণ্ডিত ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। তিনি গত ২০ আগস্ট বলেন, হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করে, যা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। পরবর্তী সময়ে কারফিউ ও সাধারণ ছুটির মধ্যে আদালতের কার্যক্রম চলেনি। বিষয়টি আংশিক শ্রুত হিসেবে ছিল। ১৮ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়। তখন দেখা যায়, দ্বৈত বেঞ্চের দ্বিতীয় বিচারপতি পরিবর্তন হয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) রায় দেন। রায়ের পর একই বছর বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছে, যা সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।
এফএইচ/কেএসআর/জিকেএস