ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

‘দলবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে দিনভর উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৫০ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

আওয়ামী লীগের ‘দলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্টের দোসর’ বিচারপতিদের বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে দিনভর উত্তাল ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ। বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের পাশাপাশি দলবাজ-দুর্নীতিবাজ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ ও জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং।

এদিন সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পৃথকভাবে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। এরই মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের আওয়ামী লীগের দলবাজ বিচারকদের দুপুর ২টার মধ্যে পদত্যাগের দাবিতে আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

কর্মসূচি চলাকালে দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে ইউটিউবারদের সঙ্গে ব্রিফিং করা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী শাহ আহমেদ বাবরের মধ্যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির অবতারণা হয়।

আরও পড়ুন

এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরই এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা বিক্ষোভস্থলে গিয়ে জানান, হাইকোর্ট বিভাগে ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ এই ১২ জন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যদের অপসারণের ব্যবস্থা করা হবে।

তখন শিক্ষার্থীরা আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানান। এর মধ্যে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মিছিলসহ শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

এরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আজিজ আহমদ ভূঞা বলেন, আসলে বিচারপতিদের নিয়োগকর্তা হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি এবং পদত্যাগ বা অপসারণের উদ্যোগও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে হয়ে থাকে। এখানে প্রধান বিচারপতির যেটা করণীয় উনি সেটা করেছেন। আপাতত ১২ জন বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না। বেঞ্চ না দেওয়ার অর্থ হলো, আগামী ২০ অক্টোবর যে কোর্ট খুলবে, তারা সেখানে বিচারকাজে অংশ নিতে পারবেন না। বাকি বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে শুনানির মাধ্যমে আপনাদের সামনে আসবে।

এর আগে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সঙ্গে আলোচনার পর বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে ১২ জন বিচারপতির বেঞ্চ না পাওয়ার ঘোষণা দেন আজিজ আহমদ ভূঞা।

এদিকে, ‘দলবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বলেন, রাষ্ট্রের ভঙ্গুর অবস্থার জন্য দলবাদ ও দুর্নীতিবাজ বিচারপতিরাও দায়ী। এই বিচারপতিরা আওয়ামী লীগের নির্দেশ ও ইচ্ছাকে আইনে পরিণত করেছেন। তাদের জন্যই এত রক্তপাত হয়েছে। তাদের জন্যই শেখ হাসিনা হাজারো ছাত্র-জনতাকে হত্যার সাহস পেয়েছেন। এত মানুষকে গুম, খুন ও হত্যার দায় এই বিচারপতিদেরও। তারা এই বিচারপতিদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা করেননি। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের দোসর বিচারপতিরা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।

‘দলবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে দিনভর উত্তাল সুপ্রিম কোর্ট

কর্মসূচি চলাকালে আইনজীবীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা ‘আইনজীবী-জনতা, গড়ে তোলো একতা’, ‘দফা এক দাবি এক, দলবাজদের পদত্যাগ’, ‘ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মারা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আবু সাঈদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দফা এক দাবি এক, দুর্নীতিবাজদের পদত্যাগ’ এসব স্লোগান দেন।

পূর্বঘোষিত হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালনে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালত চত্বরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শত শত শিক্ষার্থীর একটি মিছিল আসে। তারা অ্যানেক্স ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আরও পড়ুন

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ করতে হবে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের যদি কেউ পুনর্বাসন করতে চায় তাদেরও প্রতিহত করা হবে। পুনর্বাসনের চেষ্টা যে-ই করবে, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি চলবে না। ছাত্র-জনতা হত্যার প্রতিটি ঘটনার বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনাসহ যারা বিদেশে পালিয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ ওঠায় এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে চায়ের আমন্ত্রণ জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তাদের মধ্যে অন্তত ছয়জন প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে সাড়া দেন বলে জানা যায়।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস