ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

গুম ও অপহরণের অভিযোগ

শেখ হাসিনা-আসাদুজ্জামানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৪ সেপ্টেম্বর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৪৮ পিএম, ২০ আগস্ট ২০২৪

২০১৫ সালে রাজধানীর উত্তরা থেকে এক আইনজীবীকে অপহরণ করে গুম করার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার চৌধুরী মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এদিন ধার্য করেন।

এর আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে এই আবেদন করেন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোহেল রানা। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে এজাহার হিসাবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানা মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করে আজ (২০ আগস্ট) নথি আদালতে পাঠান।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক, সাবেক র‌্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ। এছাড়া র‌্যাবের অজ্ঞাত ২৫ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২০১২ সাল হতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকায় নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত থাকাবস্থায় ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ব্যক্তিগত কাজে বাদীর বন্ধু মো. আশরাফুল ইসলাম রিংকুর সঙ্গে মোটরসাইকেলযোগে উত্তরার ৫নং সেক্টরের ১নং রোডে স্মাইল গ্যাল্যারির সামনে অবস্থানকালে একজন হাতে স্মার্ট ডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে সালাম দিয়ে বাদীর নাম ‘অ্যাডভোকেট মো. সোহেল রানা’ কিনা জিজ্ঞাসা করে। বাদী হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার সময়ে একটি ছাই কালারের হাইএস গাড়ী বাদীর সম্মুখে এসে দাঁড়ায় এবং স্মার্ট ডিভাইস বহনকারী ব্যক্তি বাদীকে বলে জরুরি কথা আছে গাড়িতে উঠুন।

এরপর বাদী এবং বাদীর বন্ধুকে গাড়িতে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকধারী ব্যক্তিরা বাদী ও বাদীর বন্ধুর চোখ শক্ত করে বেঁধে পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে বাদীর সঙ্গে থাকা মোবাইলসহ সিম ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয় এবং বাদীর পরিধেয় কোমরের বেল্ট এবং প্যান্ট খুলে বাদীর পুরুষাঙ্গে ক্লিপ জাতীয় কিছু লাগিয়ে কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বাদীর আত্মচিৎকার যেন বাইরে থেকে শোনা না যায় সেজন্য গাড়িতে উচ্চ শব্দে ডিজে টাইপের গান চালিয়ে রাখে।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, মামলার বাদীকে তাদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করে ‘বড় নেতা হয়ে গেছিস’ ‘আমি রাজনীতি করি কেন?’ এবং উত্তরে বাদী যাই বলে না কেন, প্রত্যেকবারই কারেন্টের শক দিতে থাকে। একপর্যায়ে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে গাড়ির গতি কমিয়ে বাদীর বন্ধুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয় এবং বলে পেছনে তাকাইলে বাদীর বন্ধুকে গুলি করিয়া মেরে ফেলবে। ঘণ্টা খানেক গাড়িতে নির্যাতন চালানো অবস্থায় বাদী বুঝতে পারে হাইএস গাড়িটি বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘোরির পর কোনো একটা বিল্ডিংয়ের আন্ডার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করেছে এবং বাদীকে চোখ বাঁধা অবস্থায়ই গাড়ি থেকে টেনে হিচড়ে নামানো হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ‘চরিত্রহীন নারীর দল করস আর তোরা সরকার উৎখাত করবি’ এই বলে সেই আগের মতোই বাদীকে উত্তর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আরও উচ্চ মাত্রার বৈদ্যুতিক শক বাদীর পুরুষাঙ্গে এবং কানের লতিতে লাগানো ক্লিপের মাধ্যমে দেওয়া শুরু করে। তার ঘণ্টা-দুই পর একজন ব্যক্তির নির্দেশে অন্য আরও তিন থেকে চারজন ব্যক্তি বাদীর দুই হাত রশির সাহায্যে বেঁধে ওপরের দিকে ঝুলিয়ে কোমর থেকে পা পর্যন্ত লাঠি অথবা শক্ত কোনো বস্তু দিয়ে বারবার আঘাত করতে থাকলে বাদী সাময়িক সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যখন জ্ঞান ফেরে তখন বাদী বুঝতে পারে তখনও বাদীর চোখ বাঁধা এবং হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় বাদী মেঝের ওপর পড়ে আছে।

বাদী ওই অবস্থায় ফুটন্ত গরম পানির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিল এবং একজন ব্যক্তি অন্য একজন ব্যক্তিকে বলছে যে, যদি বাদী কোনো উত্তর সঠিকভাবে না দিতে পারে তাহলে বাদীর পায়ুপথে যেন গরম পাথর প্রবেশ করানো হয়। এমতাবস্থায় ব্যক্তি বাদীকে বারবার জিজ্ঞাসা করে ‘আমার নির্দেশে নির্বাচন কমিশনে আগুন দেওয়া হয়েছে কি না?’

এরপর ওই ব্যক্তি বাদীর ফেসবুকের পাসওয়ার্ড নিয়ে নেয় এবং পুনরায় বাদীকে আগের মতো কারেন্টের শক দিতে থাকে এবং বলতে থাকে তোকে মেরে ফেলার নির্দেশ আছে। বাদী আর সহ্য করতে না পেরে পুনরায় অজ্ঞান হইয়া পড়ে এবং যখন জ্ঞান ফেরে তখন তৃতীয় বারের মতো বাদীকে একজন ব্যক্তি বাদীর পরিবারের কেউ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত কিনা, সামরিক বাহিনীতে কোনো আত্মীয়-স্বজন কর্মরত আছেন কি না জিজ্ঞাসা করে চলে যায়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিনা বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে এবং বাদী নিজেই নিপীড়ণের শিকার। এ বিষয়ে সরকার প্রধানসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা থাকায় বিগত সরকারের আমলে মামলা দায়েরে বাদীর প্রাণ নাশের হুমকি থাকায় মামলা দায়ের করতে পারেনি বিধায় এই মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হলো।

গত ১২ আগস্ট উত্তরা পশ্চিম থানায় এজাহার দায়ের করতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার-ইনচার্জ আদালতে মামলা দায়ের করতে বলায় আসামিদের দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩৪৪/৩৬৪/৩৬৮/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধ আমলে গ্রহণ করে আসামির প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুসহ সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে ন্যায় বিচার করতে আদালতে আবেদন জানানো হয়।

জেএ/এমআরএম/এএসএম