ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ

ডিএনএ পরীক্ষায় বাদীর অস্বীকৃতি, বড় মনিরকে অব্যাহতির আবেদন

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৬:১৪ পিএম, ১৯ আগস্ট ২০২৪

ঢাকায় কলেজছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বড় মনিরের বিরুদ্ধে করা মামলার সত্যতা পায়নি পুলিশ। মামলার পর ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা ও ডিএনএ প্রোফাইলিং করার জন্য পাঠানো হলেও তিনি অস্বীকৃতি জানান।

এছাড়া ভিকটিম মামলার এজহার প্রত্যাহারের আবেদন করায় ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় আসামি বড় মনিরের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০) এর ৯(১) ধারার প্রাথমিকভাবে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই মামলার দায় থেকে বড় মনিরকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ।

এর আগে গত ২৯ মার্চ জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯- এ কল পেয়ে পুলিশ রাজধানীর তুরাগ থানার প্রিয়াংকা সিটি আবাসিক এলাকায় বড় মনিরের ফ্ল্যাট থেকে ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করেন। তাকে জোর করে ওই বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী বাদী হয়ে তুরাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার পর গত ৯ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার এসআই হাবিবুল হাবিব আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এ বিষয়ে তুরাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা (এসআই) তাহমিনা হক জাগো নিউজকে বলেন, ধর্ষণের অভিযোগে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে চুড়ান্ত প্রদিবেদন দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত প্রতিবেদনটি পাওয়ার পর সই করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাবিবুল হাবিব চুড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ধর্ষণের অভিযোগ এজাহারে উল্লেখ থাকলেও তদন্তকালে ঘটনা প্রমাণের মত কোনো প্রত্যক্ষ ও নিরপেক্ষ সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং করার জন্য উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগে পাঠানো হয়। ভিকটিম ডাক্তারি পরীক্ষা করতে অসম্মতি জানান। তাই ডাক্তারি পরীক্ষা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করা সম্ভব হয়নি

ভিকটিমের পরিধেয় কাপড় জব্দের বিষয়ে অসম্মতি জ্ঞাপন

চুড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার সময়ে ভিকটিমের পরিধেয় কাপড় জব্দ করতে চাইলে ভিকটিম এতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। উক্ত আলামাত জব্দ না করার কারণে মামলার তদন্তে কোন ব্যাঘাত ঘটলে দায় সম্পূর্ণ ভিকটিমের উপর বর্তাবে এমন অঙ্গীকারনামা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

মামলার এজহার প্রত্যাহারের আবেদন

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিকটিম মামলার এজাহার প্রত্যাহার করার জন্য তুরাগ থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে আবেদনপত্র দাখিল করেছেন। জব্দ তালিকার মূল কপি মামলার মূল নথিতে সংযুক্ত করার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ করার মতো কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই

তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, এ মামলায় কোনো প্রত্যক্ষ ও নিরপেক্ষ সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই মামলার দায় থেকে বড় মনিরকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

এর আগে ওই শিক্ষার্থী মামলায় অভিযোগ করেন, ফেসবুকে গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। প্রথম পর্যায়ে হাই-হ্যালো হতো। এক পর্যায়ে বড় মনির ভুক্তভোগীকে ছোটবোন বলে সম্বোধন করেন। এরপর তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে অডিও-ভিডিওতে কথা হতো। ঘটনার দিন বড় মনির ওই ছাত্রীকে মেসেজ দিয়ে জমজম টাওয়ারের পাশে অ্যাপেক্স শোরুমের সামনে থাকতে বলেন। সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটের সময় অ্যাপেক্স শো-রুমের সামনে অপেক্ষা করেন তিনি। এর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বড় মনির রিকশা নিয়ে আসেন এবং রিকশায় উঠতে বলেন। বড় মনিরের কথামতো ওই ছাত্রী তার সঙ্গে রিকশায় ওঠেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুরাগ থানার প্রিয়াংকা সিটির ৬ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাসার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। এরপর রুমের দরজা বন্ধ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হয় তাকে।

ঘটনার পরপরই ওই ছাত্রী তার বাবাকে ফোন দেন। তার বাবা ঘটনা শুনে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে তুরাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

বড় মনির জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। আগের একটি ধর্ষণের মামলায় বর্তমানে জামিনে আছেন টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বড় মনির।

জেএ/এসআইটি/এমএস