কিশোরের মৃত্যুতে মামলা
মেট্রোরেল-ডিএনসিসির অফিসে হামলা বিএনপি-জামায়াতের, ক্ষতি ৩৫০ কোটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ (কেপিআই) স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তাণ্ডবের ছোবল থেকে রেহাই পায়নি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪-এর অফিস ভবন ও ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকও। মিরপুর-১০ নম্বরে তাণ্ডব চলাকালে কামরুল ইসলাম (১৭) নামের একজন নিহত হয়। অন্যদিকে, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মেট্রোরেল ও সিটি করপোরেশনের সাড়ে তিনশো কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গত ১৯ জুলাইয়ের এ নাশকতার পর কামরুল ইসলাম নামের ওই কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেছে। মামলার এজাহারে অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা আন্দোলনের আড়ালে বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা এ তাণ্ডব চালিয়েছেন।
মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, গত ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় কামরুল ইসলামকে মারপিট করে গুরুতর জখম করেন বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কৃতকারীরা। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
গত ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মিরপুর মডেল থানাধীন মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় কামরুল ইসলামকে মারপিট করে গুরুতর জখম করেন বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কৃতকারীরা। স্থানীয়রা তাকে গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। পরদিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।- এজাহারে পুলিশ
গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ নম্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় ২৯ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হোসেন মোবারক। মামলার অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা ১৮৬০ সালের পেনাল কোড আইনের ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৫২/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬/৩০৭/৩০২/১০৯ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫ডি ধারায় অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
মামলার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ আদালতের
মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেল ও সিটি করপোরেশনের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং কামরুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন দেয় বিএনপি-জামায়াত
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, গত ১৯ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ছয়-সাত হাজার বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মী কোটা আন্দোলনের আড়ালে মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-৪-এর অফিস ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তারা সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেন। তাদের মধ্যে কতিপয় দুষ্কৃতকারী হেলমেট, মাস্ক ও বিভিন্ন মুখোশ পরা অবস্থায় ধ্বংসাত্মক কাজে অংশ নেন। তারা অনেক বেশি উগ্র ও আক্রমণাত্মক ছিল।
আরও পড়ুন
- জাবির ও ইফতির মৃত্যু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের গুলিতে
- গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়াতে নিরপরাধ কাউকে জড়ানো যাবে না
- সহিংসতায় ১৪৭ জন মারা গেছেন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীদের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ থেকে বিরত হয়ে সেসব স্থান ত্যাগ করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেননি। উল্টো পুলিশের সরকারি কাজে বাধা এবং পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশে ইট, পাথর নিক্ষেপ শুরু করেন। তারা লোহার রড, লাঠিসোঁটা দিয়ে আঘাত করতে থাকেন।
এরপর পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রেনেড ও শটগান ব্যবহার করে। এতে দুষ্কৃতকারীরা ছত্রভঙ্গ না হয়ে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে হত্যা এবং তাদের অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পুলিশের দিকে অগ্রসর হয়ে পুলিশকে আক্রমণ করতে থাকে।
এরই একপর্যায়ে কর্তব্যরত পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ, নিজের জীবন, সরকারি অস্ত্র-গুলি, জনগণের জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ও মিরপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে ১৯ জুলাই বিকেল ৪টা ৪০ মিনিট থেকে দিনগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটের সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থানা পুলিশ গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে, ওই ঘটনায় কামরুল ইসলাম (১৭) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ ঢামেক মর্গে রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে হামলা
মামলার এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনাস্থল এবং ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আড়ালে বিএনপি ও জামায়াত এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নির্দেশে এই হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
হামলাকারীরা সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত করেন। তাদের মধ্যে কতিপয় দুষ্কৃতকারী হেলমেট, মাস্ক ও বিভিন্ন মুখোশ পরা অবস্থায় ধ্বংসাত্মক কাজে অংশ নেন। তারা অনেক বেশি উগ্র ও আক্রমণাত্মক ছিল।- এজাহারে পুলিশ
বিএনপি ও জামায়াতের আর্থিক সহায়তা ও প্ররোচণায় অজ্ঞাতপরিচয় ছয়-সাত হাজার সন্ত্রাসী ও নেতাকর্মী পূর্বপরিকল্পিতভাবে একই উদ্দেশে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্যাদি ও অস্ত্রশস্ত্র সহকারে পুলিশকে আক্রমণ করে। অস্ত্র-গুলি ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দুষ্কৃতকারীরা এ নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।
আরও পড়ুন
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার
- ৭১ এর বীভৎস রূপ বাংলার মানুষ ফের দেখেছে
- জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করবে
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, দুষ্কৃতকারীরা বিভিন্ন স্থাপনায়, যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ এবং নাশকতামূলক কর্যক্রম করে ক্ষতিসাধন করে। অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতকারীরা বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে সরকারি দালান, অফিস ও সরকারি মালামাল ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। তারা সরকারি কাজে বাধা দেয়।
পুলিশের করা এ মামলায় ১৮৬০ সালের পেনাল কোড আইনের ২১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৫২/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬/৩০৭/৩০২/১০৯ ধারাসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫ডি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নিয়ে, অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহের চেষ্টা করে, আইন-শৃঙ্খলা ডিউটিতে নিয়োজিত থাকায় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করায় এজাহার দায়েরে বিলম্ব হলো।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার এসআই মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তকাজ চলমান। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে।
জেএ/এমকেআর/এমএমএআর/এএসএম