ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

এজাহারে পুলিশ

জাবির ও ইফতির মৃত্যু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের গুলিতে

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০১:৩১ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির (২২) এবং স্থানীয় ওয়ার্কশপ কর্মী কিশোর ইফতি (১৬)। তাদের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এ ঘটনায় গত রোববার (২৮ জুলাই) রামপুরা থানার এসআই (নিরস্ত্র) নাদিম মাহমুদ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে জাবির ও ইফতির মৃত্যু হয়েছে।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেছেন, রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ও আশপাশের এলাকায় পুলিশ-বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছোড়া গুলিতে ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির মারা যান। আর কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইফতির মৃত্যু হয়।

দুজনের মৃত্যুর প্রতিবেদন ২ সেপ্টেম্বর

সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী জাবির ও কিশোর ইফতি নিহতের ঘটনায় করা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। রোববার (২৮ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ব্যবহার করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে জাবির ও ইফতির মৃত্যু হয়েছে।- মামলার এজাহারে বাদী

রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গত ১৯ জুলাইয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুই থেকে তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। মামলায় ১৮৬০ সালের পেনাল কোড আইনের ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/১৫২/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩৫৩/৪২৭/৪৩৫/৪৩৬/৩০৭/৩০২/১০৯ ধারাসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইনের ৩/৪/৬ এবং তৎসহ ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩)/২৫ডি ধারায় আসামিরা অপরাধ করেছেন বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন।

অগ্নিসংযোগে করে বিএনপি-জামায়াতের দুষ্কৃতকারীরা

মামলার এহাজারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তথাকথিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদতে এবং নির্দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দেশজুড়ে নাশকতা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে নানাভাবে পায়তারা করে যাচ্ছিল। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করছিল।

আরও পড়ুন

এরই ধারাবাহিকতায় সহিংসতা সৃষ্টিকারী দুই থেকে তিন হাজার বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের দুষ্কৃতকারী কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ভবনের চারপাশ ঘিরে ফেলে। তারা ইটপাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ এবং ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ শুরু করে। পুলিশ নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে এবং সেখান থেকে সরে যেতে বারবার অনুরোধ করেন।

একপর্যায়ে বেআইনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারি অস্ত্র-গুলি ব্যবহার করে।- এজাহারে বাদী

কিন্তু হামলাকারীরা পুলিশের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে দীর্ঘসময় ধরে সরকারি কাজে বাধা দিতে থাকে। পুলিশ সদস্যদের হত্যার উদ্দেশে ইট, পাথর, ঢিল, ককটেল, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ শুরু করে। লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পুলিশের ওপর আঘাত করে। তারা খুবই উগ্র ও আক্রমণাত্মক ছিল- এসব কথাও উঠে আসে এজাহারে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ-বিজিবির সময় লাগে ৯ ঘণ্টা
মামলার এজাহারে বাদী আরও বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ দুষ্কৃতকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরুতে সতর্ক করে। পরে টিয়ারশেল, সাউন্ডগ্রেনেড ও শটগান ব্যবহার করা হয়। তাতেও তারা ছত্রভঙ্গ না হয়ে উল্টো ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এতে রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হামলাকারীরা ছত্রভঙ্গ না হয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে থাকা মামলার আলামতসহ ১৩টি মোটরসাইকেল ও বনশ্রী সোসাইটির নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপভ্যান ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে একপর্যায়ে বেআইনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে রামপুরা থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) নির্দেশে পুলিশ ও বিজিবি জনগণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারি অস্ত্র-গুলি ব্যবহার করে। ১৯ জুলাই দুপুর ১টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

যেভাবে মেলে জাবির-ইফতির খোঁজ
এজাহার অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই দুপুর ১২টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে থানার ডিউটি অফিসার সংবাদ পান যে, হাসপাতাল মর্গে একজনের মরদেহ আছে। খবর পেয়ে রামপুরা থানার এসআই ফরিদ উদ্দিন মর্গে গিয়ে কিশোর ইফতির মরদেহ দেখতে পান। এরপর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মৃতের আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারা যায়, রামপুর থানাধীন ই-ব্লকে রাস্তার ওপর কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ইফতি মারা যায়। পরে আশপাশে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে মামলার বাদীর ভাষ্য, গত ২৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে থানার ডিউটি অফিসার সংবাদ পান, হাসপাতাল মর্গে একজনের মরদেহ আছে। এ খবরে রামপুরা থানার এসআই (নিরস্ত্র) শাহাদত হোসেন হাসপাতাল মর্গে যান এবং ইমতিয়াজ আহমেদ জাবিরের মরদেহ শনাক্ত করা হয়। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

হামলাকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্যাদি ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশেই দুষ্কৃতকারীরা নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।- মামলার এজাহার

বাদী উল্লেখ করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মৃতের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে জাবিরের মৃত্যু হয়েছে। আশপাশে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুলাই ভোর ৪টায় তার মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন

পরবর্তীকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহপূর্বক জানা যায়, রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ি ও আশপাশ এলাকায় পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয। এসময় সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছোড়া গুলিতে ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির মারা যান মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়।

পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতেই নৃশংসতা
মামলার এজাহারে বাদী বলেন, ঘটনাস্থল এবং আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ইলেট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের থেকে প্রাপ্ত ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায় যে, বিএনপি ও জামায়াত এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও অন্য দুষ্কৃতকারীদের নির্দেশ, আর্থিক সহায়তা ও প্ররোচনায় এই নৃশংস হামলা চালানো হয়।

বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের দুই-তিন হাজার নেতাকর্মীসহ আরও অনেকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ নৃশংসতা চালায়। আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্যাদি ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশেই দুষ্কৃতকারীরা নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে- বলা হয় মামলার এজাহারে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রামপুরা থানার ওসি (অপারেশেন) নাজমুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে সেখানে গুলিবিদ্ধ হন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির (২২) এবং ইফতি (১৬) নামের এক কিশোর। পরে দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

তিনি জানান, এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ চলমান। জড়িতদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে।

জেএ/এমকেআর/এমএস