ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

কোটা আন্দোলনের ব্যানারে তাণ্ডব চালায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা

জাহাঙ্গীর আলম | প্রকাশিত: ০৫:৪৫ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২৪

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলাকালে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ১৪ তলার ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিলে আসামিরা সেখানে গিয়েও আক্রমণ করতে থাকে। আসামিরা পিছু না হটলে সর্বশেষ র‌্যাবের হেলিকপ্টার এসে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। পুলিশ হেলিকপ্টারে ওঠার পর আসামিরা তাদের মালামালে অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস করে।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) মেরুল বাড্ডায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাড্ডা থানার এসআই ওয়ালিয়ার রহমান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বাদী এসব কথা উল্লেখ করেন।

মামলায় আসামি করা হয় জামায়াত, বিএনপিসহ তাদের অনুসারী অজ্ঞাতনামা ৮/১০ হাজার জনকে। মামলাটিতে পেনাল কোডের ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩৪১/৩৫৩/৩৩২/৩৩৩/৪৩৫/৪৩৬/৪২৭/৩৭৯/৩০২ ধারাসহ ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক উপাদানাবলি আইন ১৯০৮ এর ৩ ধারার অভিযোগ আনা হয়। এসব ধারার মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে কোটা আন্দোলনের ব্যানারে জমায়েত হয়ে তাণ্ডব

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপি-জামায়াতের কতিপয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা প্রগতি সরণির ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান নেয়। অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড্ডা ও আশপাশের থানাসমূহ থেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও তাদের অনুসারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ অন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের কোটা আন্দোলনের ব্যানারে জমায়েত হয়ে তাণ্ডব চালাতে থাকে। আন্দোলনকারীদের হাতে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও ককটেল দিয়ে তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে তারা বিভিন্ন গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। সরকারি সম্পদ রক্ষাসহ নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে পুলিশ সর্তক বার্তা, পরবর্তীসময় সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

মেরুল বাড্ডায় পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি ১০ হাজার

পুলিশকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ

মামলার এজাহারে বলা হয়, এসময় ওত পেতে থাকা আসামিদের সহযোগী কতিপয় ভাড়াটিয়া দৃষ্কৃতকারী বিভিন্ন ভবন থেকে পুলিশকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ নিজেদের জানমাল এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল এবং শটগান দিয়ে গুলি করতে করতে বাড্ডা থানাধীন মেরুল বাড্ডা কানাডিয়ান ইউনির্ভাসিটিতে আশ্রয় নেয়। এসময় আসামিরা বিভিন্ন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেয় এবং তাদের অনুসারী ৮-১০ হাজার লোক এসে বাড্ডা থানাধীন প্রগতি সরণিস্থ কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া পুলিশ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

আরও পড়ুন:

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চার ঘণ্টা ধরে লড়াই পুলিশের

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিদের সঙ্গে পুলিশ সর্বোচ্চ সহনশীল থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা লড়াই করে সরকারি সম্পত্তি ও নিজেদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে। এরপর আসামিরা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক বেশ কয়েক ড্রাম পেট্রোল এনে স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে পুলিশের আশ্রয় নেওয়া ভবনের চারপাশে পেট্রোল স্প্রে করে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের লেলিহান শিখা ও ধোঁয়ায় ডিউটিতে থাকা প্রায় সব পুলিশ সদস্য আহত হয়ে পড়ে। আহত সদস্যসহ অন্যরা মিলে কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ তলার ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিলে আসামিরা সেখানে গিয়েও আক্রমণ ও এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা হামলা চালিয়ে পুলিশকে মারপিট করার সময় বাড্ডা থানার অফিসার্স ইনচার্জের সাত রাউন্ড গুলিসহ ম্যাগাজিন পড়ে গেলে আসামিরা নিয়ে নেয়।

পুলিশ সদস্যরা নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যুর শঙ্কার বিষয়ে জানায়

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, পুলিশ সদস্যরা নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যুর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধারের জন্য এপিসি গাড়ি নিয়ে আসে। এসময় আন্দোলনকারীরা অবরোধ করে গাড়ির সব গ্লাস ভেঙে ফেলে পুলিশদের আক্রমণ ও মারধর করে আহত করে।

এসময় কনেস্টেবল মো. ফজলে রাব্বি আসামিদের গুলিতে ডান পায়ে গুরুতর জখম হন এবং তাকে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। আসামিরা পিছু না হটলে সর্বশেষ র‌্যাবের হেলিকপ্টার এসে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। আসামিরা কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনিসপত্র তছনছ করে এবং মালামাল লুণ্ঠন করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যাপক মারামারি ও সংঘর্ষ হয়। অতঃপর আসামিদের একাংশ উত্তর বাড্ডার দিকে রওয়ানা হয় এবং জনসাধারণের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাট করাসহ ডিউটি অফিসারের ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এমন সময় সরকারি সম্পত্তি রক্ষার্থে কনস্টেবল মো. মতিউর রহমান ২০ রাউন্ড শটগান দিয়ে ফায়ার করেন। পরে আসামিদের আরেক গ্রুপ উত্তর বাড্ডা থেকে ঢাকা আসার সময় এএমজেড হাসপাতালের সম্মুখে তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক মারামারি ও দাঙ্গা সংঘটিত হলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। তাদের নিজেদের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলিতে মো. লিটন (৩২) আহত হওয়ার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মেরুল বাড্ডায় পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি ১০ হাজার

৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিদের তাণ্ডবে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি বিনষ্ট, ফুটপাত, সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট, চুরি ও পুলিশের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিনষ্ট ও চুরি করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। চোরাইমালের মূল্য আনুমাণিক ৩,৫০,০০০/-(তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা। আসামিরা বেআইনি জনতাবন্ধে মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা, সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্য সম্পাদনে বাধা প্রদান করে আক্রমণ, অবৈধ অবরোধ, সরকারি কর্মচারীকে আঘাত করে ও গুরুতর জখম হয়। অগ্নিসংযোগ, সম্পত্তি বিপন্ন করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো অস্ত্র-গুলি চুরি, ক্ষতিসাধন এবং হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই সাহাবউদ্দিন মুন্সী জাগো নিউজকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি চলাকালে মেরুল বাড্ডায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ সদস্যরা কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ১৪ তলার ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিলে আসামিরা সেখানে গিয়েও আক্রমণ করতে থাকে। আসামিরা পিছু না হটলে সর্বশেষ র‌্যাবের হেলিকপ্টার এসে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞানতামা ৮০০০/১০০০০ জনের নামে মামলা হয়। মামলার পর ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামিরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

জেএ/এসএনআর/এএসএম