ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

প্রধান বিচারপতি

দুর্নীতিবাজকে একঘরে করা না গেলে ক্ষত সেরে উঠবে না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৩৮ এএম, ০৯ জুলাই ২০২৪

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, দুর্নীতিবাজ পিতাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে, বয়কট করা না হলে কখনোই গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না, এ রোগের উপশম হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের সুফলগুলো দুর্নীতির চোরাবালিতে তলিয়ে যাচ্ছে, আমাদের উজ্জ্বল অর্জনগুলো দুর্নীতির অন্ধকারে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। এ দুর্নীতি আমাদের জন্য একদিকে যেমন কলঙ্কের, অপমানের তেমনি বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ‘দুর্নীতি ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধুর চেয়ার আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি একথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, দুর্নীতি যে আমাদের সব সুফল থেকে বঞ্চিত করছে তা নয়, দুর্নীতি আমাদের সুন্দর মূল্যবোধগুলোকেও ধ্বংস করে দিচ্ছে। অবৈধ অর্থে ভোগ-বিলাস এখন সাম্প্রতিক ফ্যাশন। কেউ জানতেই চাচ্ছে না এই অর্থের উৎস কী। উল্টো অনেকে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে যে এই অর্থ এই চাকচিক্য যদি তার হতো।

তিনি বলেন, শুধু আইন দিয়ে সব সমস্যার সমাধান হয় না, দুর্নীতিরও হয় না। এর জন্য দরকার সচেতনতা, সামাজিক আন্দোলন। তরুণদের প্রশ্ন করতে হবে, তাদের পিতা-মাতার অর্জিত অর্থ ন্যায়সঙ্গত পথে এসেছে তো? স্ত্রীদের কৌতূহল থাকতে হবে, স্বামীর বিত্ত-বৈভবে অবৈধ অর্থের অংশ নেই তো? বন্ধু-পরিজনদের সচেতন হতে হবে, নিকটজনের উপার্জনটা সঠিক নিয়মে হচ্ছে তো? এটাই সামাজিক সচেতনতার প্রথম ধাপ। দুর্নীতিবাজ পিতাকে, দুর্নীতিবাজ স্বামী বা স্ত্রীকে, দুর্নীতিবাজ সহকর্মীকে একঘরে করা না গেলে, বয়কট করা না হলে কখনোই দুর্নীতির গভীর ক্ষত সেরে উঠবে না, এ রোগের উপশম হবে না।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, দুর্নীতি এগিয়ে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। শিক্ষা, জীবনমান উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন থেকে শুরু করে সামাজিক সুরক্ষা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব, এ রকম নানা মাত্রায় আমরা অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছি, নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়ে চলেছি। কিন্তু একই সঙ্গে স্বীকার করতে হবে, দুর্নীতির মতো অতলবিস্তৃত ব্যাধি থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি।

দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাস্তবতায় আইনের কঠোর প্রয়োগ সময়ের দাবি উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুবিবেচনার সুযোগ এতে নেই বললেই চলে। গণতন্ত্রের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে জবাবদিহি। সুতরাং রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করে পরিচালনা কাঠামো গড়ে তোলা হলে দুর্নীতি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ক্রমবর্ধমান শিক্ষার হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতিও। এ ত্রুটি শিক্ষার নয়, এ ত্রুটি আমাদের শিখনপ্রক্রিয়ায়, শিক্ষার প্রতি আমাদের মনোভাবের। শিক্ষা যদি হয় কেবল চাকরি পাওয়ার অনুঘটক, তাহলে সেটা শিক্ষা নয়, শিক্ষার নামে প্রহসন। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয়, আমাদের তরুণ সমাজের একটা বিরাট অংশের মধ্যে আমরা এখনো শিক্ষার সঠিক বোধ সঞ্চারিত করতে পারিনি, সততার মুকুট নিয়ে বেঁচে থাকা শেখাতে পারিনি, অল্পে তুষ্ট থেকে সাধারণ জীবনযাপনের মাহাত্ম্য শেখাতে পারিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য নিয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার। এ ছাড়াও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন।

এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম