ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

কনডেম সেলের রায়ে হাইকোর্ট

‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার বড় উদাহরণ’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ১৩ মে ২০২৪

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতার বড় উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কনডেম সেলে রাখা অবৈধ ও বে-আইনি ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।

একই সঙ্গে জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন আদালত। আইনজীবীরা বলছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়।

এ সংক্রান্ত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সোমবার (১৩ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রায় দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এ এম) আমিন উদ্দিন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এম. এম. জি সায়োয়ার পায়েল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারে সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি তাদের ভাড়া বাসায় নির্মমভাবে খুন হন। সেসময় ফ্ল্যাটটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে ছিল তাদের একমাত্র সন্তান মাহির সারোয়ার মেঘ।

ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে হাইকোর্ট বলেছেন, গত ১২ বছর ধরে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত হচ্ছে, এখনো তদন্ত শেষ হচ্ছে না। বিচার তো আরও পরের স্টেজ। আমাদের দেশে ট্রায়াল স্টেজ শেষ হতেই ৫ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। এ ধরনের বিলম্ব যেখানে হয় সেখানে মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে নির্জন সেলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত যদি বন্দি রাখা হয় তাহলে তাকে ডাবল শাস্তি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

রায়ের নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে রিটকারী আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, রায়ে আদালত বলেছেন- প্রথমত, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি বলা যাবে না এবং তাকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বিচারিক প্রক্রিয়া (হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ ও রিভিউ) ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া (রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন) শেষে কেবল একজন আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখা যাবে।

দ্বিতীয়ত, কোনো ব্যক্তির অসুস্থতা বা বিশেষ কারণে আলাদা সেলে রাখার আগে তাকে নিয়ে শুনানি করতে হবে। এটি ব্যতিক্রম।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে নতুন জেলকোড তৈরি করছে। নতুন আইন হচ্ছে প্রিজন অ্যাক্ট। হাইকোর্ট বলেছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ যেন নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়, সেটা বিবেচনা করতে।

এ আইনজীবী আরও বলেন, মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির বিষয়ে তথ্য চাইলে (সাংবাদিক, গবেষক) আইন অনুসারে তা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারকেও আইন অনুসারে তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক রিপোর্টেও এসব আসামির তথ্য সন্নিবেশিত করতে বলা হয়েছে।

আগামী দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখার ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আদালত বলেছেন, নির্জন কক্ষে বসবাস তার সাজা নয়, সাজা মৃত্যুদণ্ড। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টও এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ভারতের ওই রায় আমাদের রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালন করেছে বলে উল্লেখ করেন আদালত।

তবে এ রায়ের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে কথা বলে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

এফএইচ/ইএ/এমএস