মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগ
জাপানি মায়ের আদালত অবমাননার শুনানি আগামী সপ্তাহে
আদালতের আদেশ অমান্য করে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা শরীফকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন জাপানি মা ডা. এরিকো নাকানো। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ। ওই আবেদনের ওপর নির্ধারিত দিন আজ (২১ এপ্রিল) শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বিষয়ে শুনানির জন্যে আগামী সপ্তাহের রোববার (২৮ এপ্রিল) পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
রোববার (২১ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম,ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম ও নাসিমা আক্তার লাভলী। মা এরিকোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
শুনানি আগামী সপ্তাহে ঠিক করার বিষয়ে এদিন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, মর্কিন নাগরিক ও বাঙালি বাবার ইমরান শরীফের বড় মেয়েকে নাকানো এরিকোর সঙ্গে নিয়ে দেশ ত্যাগ করার ঘটনায় দায়ের করা আদালত অবমাননার বিষয়ে আজ শুনানি না করে আগামী সপ্তাহে দিন ঠিক করেছেন। ওইদিন আপিল বিভাগের সব বিচারকের উপস্থিতিতে এটির শুনানি হবে। তাই আজ শুনানি হয়নি। আর যেহেতু কোনো দিন ঠিক করেনি মনে হয় কজলিস্টে আসলে বা আগামী রোববার দিনই কজলিস্টে (কার্যতালিকায়) আসতে পারে।
তিনি জানান, জাপানি শিশু কন্যাদের মায়ের আদালত অবমাননার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে। আজ ৩ বিচাপরতি থাকায় শুনানি হয়নি বলেন তিনি।
এর আগে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন জাপানি মা ডা. এরিকো নাকানো। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ। তার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন রাখেন।
তবে এরিকোর আইনজীবী জানিয়েছেন ২১ এপ্রিলের আগেই দেশে ফিরে আসবেন বড় মেয়ে। আদালতে ওইদিন বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আখতার ইমাম। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ব্যারিস্টার রেশাদ ইমাম। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানির জন্যে ওঠে।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইনানুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিনজন সন্তান জন্ম নেয়। এরপর বনিবনা না হওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে এসে রিট করেন এরিকো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে বলেন।
২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরীফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। ১২ জুলাই জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ করে দেন। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সে রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদেশে আদালত বলেন জেসমিন মালিকা শরীফের হেফাজত মায়ের পক্ষে নির্ধারণ করা হবে। তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে কন্যা লায়লা লিনা শরীফের হেফাজত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে।
রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ করার পর দুই পক্ষই (বাবা ও মা) পৃথক পৃথক দুটি আপিল আবেদন করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে তার কাছে ফেরাতে চেয়ে এবং নাকানো এরিকো মেজো মেয়েকে তার কাছে নিতে চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।
এর মধ্যে ইমরানের আবেদনে একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ছিল। যেখানে বলা হয়, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়। ওই আবেদনের ওপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য গত ১৫ এপ্রিল ঠিক করে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় মেয়েকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে চলে গেছেন।
ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জাগো নিউজকে বলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বড় সন্তানকে নিয়ে এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়।
আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, ৯ এপ্রিল দুপুর ১টায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশ হওয়ার পূর্বেই বেলা ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন।
এফএইচ/এমআইএইচএস/জেআইএম