ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আইন-আদালত

অভিযোগ আইনজীবীর

ড. ইউনূসকে টার্গেট করে হয়রানি করছে সরকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

সরকারের নির্দেশে টার্গেট করে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ড. ইউনূসের স্থায়ী জামিন আবেদনের ওপর শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশের পর বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, আজ লেবার অ্যাপিলের ট্রাইব্যুনালে ড. মুহাম্মদ ইউনুসসহ বাকিদের উপস্থিত হওয়ার দিন নির্ধারণ ছিল। আমরা উপস্থিত হয়েছি, তার কারণ আমরা যে শ্রম আদালতের রায়ের দণ্ড থেকে আপিল করেছিলাম সেই অর্ডারের বিরুদ্ধে গত ১ ফেব্রুয়ারি আপিল গ্রহণ করা হয়। গত তারিখে আমাদের বেইল দিয়েছিলেন ৩ মার্চ পর্যন্ত। ওইদিন শুনানির জন্য ছিল। গত ৩ মার্চ জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে শুনানির জন্য আজ (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত বেইল দিয়েছিলেন। শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে আপিল অ্যাডমিশন হলে বেইল পার্মানেন্ট হয়, স্টিল ডিজপোজাল হয়।

তিনি বলেন, আপনাদের একটা উদাহরণ দিচ্ছি, এসএ পরিবহনের মালিক সালাহ উদ্দিনকে এই তৃতীয় শ্রম আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ৩০৩ এর ঙ এবং ৩০৭ অনুযায়ী। তাকে আপিল আদালত ছয় মাসের (বেইল) জামিন দিয়েছিলেন। ড. ইউনূসকে জামিন দিয়েছিলেন এক মাসের জন্য; এটা বড় অন্যায়, বৈষম্য।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের প্রতিটি নাগরিক আইনের চোখে সমান এবং কখনো বৈষম্য করা যাবে না। এই কেস হলো আপিল নম্বর হচ্ছে ২৯০/২০২৩, এই মামলায় তাকে দিয়েছে ছয় মাসের বেইল। আর ড. ইউনূসকে দেওয়া হয়েছে এক মাসের জামিন। ড. ইউনূস একজন দাগি আসামি, তিনি জামিন পেলে পালিয়ে যাবেন, তাই প্রতি মাসে তাকে এখানে হাজির করা হচ্ছে!

তখন পাশেই হুইল চেয়ারে বসা অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. শাহজাহানকে দেখিয়ে আইনজীবী মামুন বলেন, উনি গ্রামীণ ব্যাংকে ড. ইউনূস এর পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। কোভিডের সময় তিনি স্ট্রোক করে প্যারালাইজড। তাকেও অ্যাম্বুলেন্সে এসে হাজিরা দিতে হয়েছে।

আরও পড়ুন

 

তিনি বলেন, আজ নূর জাহান বেগমকে দেখতে পাচ্ছেন, উনিও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রামীণ টেলিকমের ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল হাসান। প্রত্যেকেই শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, তাদের আপিল হলে নির্দিষ্ট আপিল শুনানি পর্যন্ত বেইল মঞ্জুর করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আজও আমরা আবেদন করেছি, সরকার এর বিরোধিতা করেছে, কেন বিরোধিতা করেছে, তা জানি না। আপনারা জানেন একজন ইসলামী ব্যাংকের ১১০০ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। অনেকে বলে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন দুদক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। আজ চার মাস হলো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আপনারা জানেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পেরেছি, পুলিশের সাবেক আইজিপি ও র্যাবের সাবেক ডিজি, যার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। হাজার হাজার কোটি নগদ টাকা, যার বেতন সারা জীবনে পৌনে দুই কোটি টাকা। সরকারের মিডিয়া সবসময় ড. ইউনূসকে নিয়ে রিসার্চ করে।

এ সময় মামলা পরিচালনা ও আদালতের মর্যাদার বিষয়ে প্রশ্ন তুলে ড. ইউনূসের আইনজীবীর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা যে আদালতে এসেছি, উনি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বরত চেয়ারম্যন। আপনারা জানেন ড. ইউনূস কখনো সুযোগ নিতে চান না। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি কোনো বেনিফিট নিতে চাই না। উনি বলেছেন আমি নির্দোষ।

আইনজীবী আরও বলেন, ড. ইউনূসকে জাতিসংঘের একজন উপদেষ্টা হিসেবে ডাকা হচ্ছে কিন্তু তিনি যেতে পারছেন না।

তিনি বলেন, স্থায়ী জামিন হয়নি বলে আমরা ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি, আইনের বরখেলাপ করা হয়েছে। এই বরখেলাপ সম্পূর্ণ ড. ইউনূসকে টার্গেট করে এবং তার সাথে যারা তাদের টার্গেট করে। সরকারের নির্দেশে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি।

স্থায়ী জামিন চেয়ে ড. ইউনূসের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) তাকে স্থায়ী জামিন দেননি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। তবে ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছেন আদালত। ওইদিন পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন।

আরও পড়ুন

 

 

আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ ও এস এম মিজানুর রহমান। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বরত চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী।

এসময় ড. ইউনূসসহ অন্য তিন বিবাদী গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নূর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকালে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে স্থায়ী জামিন আবেদন করেন ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন। এরপর বেলা ১১টায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন ড. ইউনূস।

গত ৩ মার্চ ড. ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছিলেন শ্রম আপিলের ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আজ (১৬ এপ্রিল) দিন ধার্য করেন আদালত। শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সেটি শুনানির জন্য আসে।

এই মামলায় গত ১ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকে এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত।

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, শ্রম আইন ২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয়নি।

এফএইচ/এমকেআর/এসএইচএস/জেআইএম/এমএস